Hoop PlusHoop SpecialTollywood

Mahua Roychowdhury: মৃত্যুর কারণ আজও রহস্যে মোড়া, অভিনেত্রী হয়েই বাঁচতে চেয়েছিলেন মহুয়া

‘মহুয়া রায়চৌধুরী’ (Mahua Roychowdhury) নামটি আজও টলিউডের অলিন্দে বিরাজমান। কিন্তু, কে এই মহুয়া? প্রশ্ন নয়, আসলে এটাই উত্তর যাতে থাকতে হয় একটা ছোট্ট জিজ্ঞাসা চিহ্নকে। কারণ মহুয়া মানেই তো অগ্নিদগ্ধ এক অভিনেত্রীর জীবনের রসালো গসিপ। মৃত্যুর পর এতগুলি বছর কেটে গিয়েছে। এককালের নামী অভিনেত্রীর স্মৃতি শুধুই আগুনে পুড়ে মৃত্যু। কিন্তু মহুয়া কি মরে গিয়ে প্রমাণ করেছিলেন, তিনি জীবিত ছিলেন? নাহলে এতগুলি বছর ধরে তাঁর অভিনীত ফিল্ম নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। মহুয়ার স্বামী তিলক (Tilak Chakraborty) বহুদিন হল প্রয়াত। মহুয়ার পুত্র গোলা ওরফে তমাল (Tamal Chakraborty)-র বোধ হয় মনে পড়ে না মাকে। নাহলে এত নির্লিপ্ত কেন তিনি? একসময় সঙ্গীতজগতের সাথে যুক্ত ছিলেন তমাল। কিন্তু খ্যাত হওয়ার তুলনায় অন্তরাল বেছে নিয়েছেন তিনি। অথচ মহুয়া তো এমন ছিলেন না। শিপ্রা থেকে সোনালি ও তারপর মহুয়া, একই জীবনে অনেকগুলি সত্ত্বা বেঁচেছেন তিনি। কিন্তু তাকে কি বাঁচা বলে?

ছোট্ট শিপ্রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে মঞ্চে তুলে দিয়েছিলেন তার বাবা নীলাঞ্জন রায়চৌধুরী (Nilanjan Roychowdhury)। মেয়েকে স্টার বানাতে চাননি তিনি। চেয়েছিলেন শিপ্রার রোজগারে সংসার চালাতে। একসময় কলকাতার বিভিন্ন মঞ্চে নৃত্যানুষ্ঠান করতে করতেই শিপ্রা হয়ে উঠল সোনালি। নীলাঞ্জন নিজে ছিলেন অসফল নৃত্যশিল্পী। সোনালিকে তিনি বাঁধতে চেয়েছিলেন মঞ্চেই। কিন্তু তার ভাগ্যবিধাতা লিখেছিলেন অন্য এক কাহিনী। তরুণ মজুমদার (Tarun Majumder) আবিষ্কার করলেন মিষ্টি মেয়েটিকে। ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’-এর ফুটফুটে বৌ সে ছাড়া আর কাউকেই মানাবে না। তবে ‘সোনালি’ নামটি পছন্দ হল না পরিচালকের। মেয়েটির নাম দিলেন ‘মহুয়া’। কেন হঠাৎই এই নাম, তার কারণ অজানা। ছোট্ট মহুয়াকে মাটির তাল থেকে স্বর্ণপ্রতিমা তৈরি করলেন সন্ধ্যা রায় (Sandhya Ray)। 1972 সালে মুক্তি পেল ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’। নজর কেড়ে নিলেন মহুয়া। পরিচালকরা বুঝতে পেরেছিলেন, এই প্রাণচঞ্চল মেয়েটির মধ্যে রয়েছে নায়িকা হওয়ার গুণ।

জোর করে শিপ্রাকে মঞ্চে ওঠানো হয়েছিল এক সন্ধ্যায়। কিন্তু মহুয়া ভালোবেসেছিলেন অভিনয়কে। মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর সাথে স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন অবলীলায়। একের পর এক ফিল্মে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছিলেন মহুয়া। ধীরে ধীরে চিনতে পেরেছিলেন নিজেকে। বৃত্ত সম্পূর্ণ করল ‘দাদার কীর্তি’। এই ফিল্মে অভিনয় করে 1980 সালে মহুয়া পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে ‘ফিল্মফেয়ার ইস্ট’ পুরস্কার। কেরিয়ার যতই শিখরের দিকে উর্ধ্বগামী হচ্ছিল, ততই বিপন্ন হয়ে উঠছিল পারিবারিক জীবন। পরিবার ও সন্তান অন্ত প্রাণ মহুয়ার দিকে উঠতে শুরু করল পরকীয়ার আঙুল। মহুয়া বুঝতে পারলেন, পরিবার নয়, তাঁর সংসার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। অথচ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে মহুয়া যাঁদের সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করতেন, তাঁরাই রটিয়েছিলেন পরকীয়ার গুঞ্জন। বোধ হয় তাঁরা জানতেন, মহুয়া অপ্রতিরোধ্য। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে আঘাত করলে মহুয়ার কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে বলে আশাবাদী ছিলেন তাঁরা। কিন্তু ব্যক্তি মহুয়া যত আঘাত পেয়েছেন, অভিনেত্রী মহুয়া আঁকড়ে ধরেছেন শুটিং ফ্লোরকে। মহুয়ার বাঁচার অক্সিজেন ছিল অভিনয়। সেই সময় বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আসছে সুযোগ। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে মহুয়ার ফ্যানবেস।

1984 সালে ‘আদমি অউর অউরত’-এ মহুয়া প্রমাণ করে দিলেন, তিনি সব বলয়েই বিজয়িনী। পাশাপাশি নিলেন এক কঠোর সিদ্ধান্ত। অভিনেত্রী রূপেই বাঁচবেন তিনি। কাজ করবেন ভারত ও বাংলাদেশ জুড়ে। পুত্র তমালকে নিয়ে বম্বে গিয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মহুয়া, শোনা যায় এমনটাও। তবে বাংলাদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিক মহুয়ার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অনুমতি। এসে পৌঁছে গিয়েছিল সেই চিঠিও। কিন্তু তখন অগ্নিদগ্ধ হয়ে ক্যালকাটা হাসপাতালে ভর্তি মহুয়া। মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে করতেও ভোলেননি, তিনি সুন্দরী অভিনেত্রী। ফলে নিষেধ করেছিলেন, তাঁকে যেন দেখতে না দেওয়া হয়। মহুয়া জানতেন, এই লড়াইতে তিনি জিতবেন না। এই কারণে তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, অগ্নিদগ্ধ মৃতদেহ কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি। রূপসী ও গুণী অভিনেত্রী হিসাবে অগণিত দর্শকের মনের মণিকোঠায় আজও মহুয়ার মিষ্টি মুখটাই অমলিন। 1987 সালে ‘দামাস্কাস ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এ মহুয়া মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘আদমি অউর অউরত’-এর জন্য।

মহুয়া, অগ্নিপথ পেরিয়ে এখনও তিনি অনুরাগীদের কাছে জীবন্ত। তাঁরও জন্মদিন আসে, আসে মৃত্যুদিন। কিন্তু স্টুডিওতে সম্ভাবনাময়ী অভিনেত্রীর প্রতিকৃতিতে মালা দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের কথা কারও মনে পড়ে না। আসলে টলিউড কি তাঁকে সত্যিই অভিনেত্রী হিসাবে মনে রাখতে চায়? তারা তো চায়, এক অগ্নিদগ্ধ নায়িকা হিসাবে মনে রাখতে যাঁকে নিয়ে গসিপ করা যায়, অনর্থক পরকীয়ায় আসক্তির দোষে দুষ্ট করা যায়, সহজেই বলা যায়, “ মেয়েটা তো নিজের দোষেই মরল!” কিন্তু তবু টেলিভিশনে যখন ভেসে ওঠে মহুয়ার অবয়ব, মনে করিয়ে দেয়, শিল্পীর মৃত্যু নেই। তিনি বেঁচে থাকেন তাঁর শিল্পের মধ্যে।

whatsapp logo