রূপালী জগতে প্রবেশ যে কতটা কষ্টসাধ্য হতে পারে তা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর ইতিহাস না জানলে হয়তো বোঝাই যাবে না। বর্ণময় জীবনের রাজ কিন্তু সেই সাদা-কালো বিভেদ দিয়েই তৈরি। হ্যাঁ, গায়ের রং চাপা ছিল বলে বলিউডে জায়গা করতে গিয়ে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হয় মিঠুনকে। গায়ের রঙের কারণে অনেক পরিচালক সেইসময় তাঁকে ফিরিয়ে দেন। বোম্বের স্ট্রাগল তাঁকে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেয় যে বলিউডে ভাব জমানো সহজ নয়।
পকেট গরম না থাকলে আর খানদানি তাকাত না থাকলে বলিউডে ভাব জমানো খুবই কঠিন। বাংলার দাদা মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গেও সেই সময় না ছিল পরিমান মত অর্থ না পরিচিতি। বোম্বে শহরে টিকে থাকার জন্য তিনি হোটেলেও কাজ করেছিলেন। এক একটা দিন একটা একটা মঞ্চ। কোথায় খাবেন, কোথায় ঘুমবেন সেই নিয়ে কোন নিশ্চয়তা ছিল না, বরং গায়ের রং কালো হওয়ার জন্য নিজস্ব প্রতিভা দেখানোর সুযোগ পাননি।
তবে, সেইসময় মিঠুনের হাত ধরেছিলেন কিংবদন্তী পরিচালক মৃণাল সেন। না তখনও তিনি মিঠুন হয়ে ওঠেননি। ছিলেন গৌরাঙ্গ। মৃণালের হাত ধরেই সাফল্যের সিড়ি বয়ে উপরে উঠেছিলেন সেদিনের গৌরাঙ্গ। হয়ে উঠলেন মিঠুন চক্রবর্তী। প্রথম ছবিতেই মিঠুনের বাজিমাত চমকে দিয়েছিল গোটা বি-টাউনকে। এই বাঙালী পরিচালক বিশ্বাস করতেন যে সিনেমা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, ছবির মাধ্যমেও মানুষকেও শিক্ষিত করা যায়। তাই যখন মিঠুন এতো বড় মাপের পরিচালকের নজরে আসবেন তা তিনি কল্পনাও করতে পারেননি। সত্যি স্বজাতি এবং সৎ ব্যক্তিত্ব যে প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠতে পারে তা মৃণাল-মিঠুনের কাহিনী জানলেই বোঝা যাবে। এই ‘মৃগয়া’ ছবির মাধ্যমেই তিনি ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে ভারতের ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ লাভ করেন মিঠুন চক্রবর্তী।
মিঠুনের যাত্রা শুরু। এখনও পর্যন্ত ৩০০ টিরও অধিক হিন্দী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাংলা, হিন্দি, তেলেগু বিভিন্ন ভাষার মুভিতে মিঠুনের উপস্থিতি দর্শকদের চমকে দিয়েছিল। তিনি মনে মনে মানতেন যে তাঁর দুর্বল জায়গা হল গায়ের রং। তাই নিজের পজিটিভ দিকগুলিকে হাইলাইট করা শুরু করে দেন। নাচ হোক বা স্ট্যান্ট সবেতেই নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন তিনি। আর দর্শকরা চাই একটি দুর্দান্ত ব্যক্তিত্বকে পর্দায় দেখতে। মিঠুনও শেষে নিজের দক্ষতার মধ্যে দিয়ে বলিউডে পাকা জায়গা করে নেন।
কেরিয়ারের গ্রাফে অনেক ওঠা পড়া যেমন ছিল, ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ওঠা পড়ার মধ্যে দিয়ে মিঠুন গেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন তাঁর জীবনে স্ত্রী যোগিতা বালির অবদান। কেরিয়ারের মাঝপথেই বিয়ে করেছিলেন যোগিতা বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমারকে। পরবর্তীতে মিঠুনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি। চার সন্তান নিয়ে আজকের মিঠুন-যোগিতা এক সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি।
আবারও ফিরি মিঠুনের কেরিয়ার গ্রাফে। বর্তমান বয়স তাঁর ৭০। সিনেমা জগতে তাঁকে খুব একটা দেখা যায় না। প্রায় অবসরের পথই বেঁছে নিয়েছেন তিনি। তবে কিছু বছর আগেও অর্থাৎ ২০০৯ সাল থেকে রিয়েলিটি টিভি সিরিজ ডান্স ইন্ডিয়া ডান্সে প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন৷
দারিদ্রতা থেকে সফলতার লড়াইয়ে গৌরাঙ্গ জিতে গিয়েছিলেন। মিঠুন হয়ে ওঠার সংগ্রামে আজও এই বাঙালী অভিনেতা বিশেষ ভাবে স্মরণীয়। সংগ্রামের মতন করে সংগ্রাম করলে বোধহয় ঈশ্বরও মুখ তুলে তাকান।