বলিউডকে ডিস্কো ডান্সের সঙ্গে পরিচয় করেছিলেন ‘মহাগুরু’ মিঠুন চক্রবর্তী(Mithunchakraborty)। কিন্তু মিঠুনের স্টারডমের পথ মসৃণ ছিল না। এমনকি জিতেন্দ্র (Jeetendra) একসময় বলেছিলেন, মিঠুন বলিউডে সফল হলে তিনি অভিনয় ছেড়ে দেবেন।
মৃণাল সেন (Mrinal sen) পরিচালিত বাংলা ফিল্ম ‘মৃগয়া’-র মাধ্যমে অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল মিঠুনের। এই ফিল্মে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য মিঠুন পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতার কাছে স্টারডম অনায়াসেই আসে বলে সকলের ধারণা ছিল। কিন্তু বলিউডের একটি বড় অংশ ‘মৃগয়া’-য় মিঠুনের অভিনয় দেখে ভেবেছিলেন, বলিউডের মাটি মিঠুনের জন্য নয়। সেই সময় মুম্বইতে মিঠুনের মাথার উপর ছাদ ছিল না। একজন প্রযোজক দয়া করে তাঁর অফিসের সামনের বেঞ্চে মিঠুনকে শুতে দিয়েছিলেন। মিঠুন বুঝতে পারছিলেন জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা হয়েও বলিউডে তাঁকে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে।
সেই সময় জিতেন্দ্র ছিলেন সুপারস্টার। তাঁর দারুণ অভিনয় ও দক্ষ নাচ সকলের মন জয় করে নিয়েছিল। সেই সময় এক নামী প্রযোজকের অফিসে কাজের খোঁজে পোর্টফোলিও জমা দিতে গিয়েছিলেন মিঠুন। সেই অফিসেই চলছিল জিতেন্দ্রর একটি ফিল্মের শুটিং। মিঠুন অত্যন্ত সাদা-মাটা পোশাকেই অফিসে হাজির হয়েছিলেন। জিতেন্দ্র তাঁকে দেখে বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, মিঠুন যদি বলিউডে সফল হন, তাহলে তিনি অভিনয় ছেড়ে দেবেন। কিন্তু 1982 সালে বদলে গিয়েছিল জিতেন্দ্রর হিসেব। রিলিজ করেছিল মিঠুন চক্রবর্তী অভিনীত ‘ডিস্কো ডান্সার’। ‘ডিস্কো ডান্সার’-এর মাধ্যমে মিঠুন বলিউডে নতুন ট্রেন্ড সেট করেছিলেন। মিঠুনের স্টারডমের কাছে লহমায় ফ্লপ হয়ে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। ‘ডিস্কো ডান্সার’ সমগ্র ভারতবর্ষে সুপারহিট হয়েছিল।
এরপর জিতেন্দ্র ‘তোফা’, ‘হিম্মতওয়ালা’-র মতো কয়েকটি হিট ফিল্ম নিয়ে ফিরে এলেও জিতেন্দ্রর ইমেজ তরুণ প্রজন্মের পছন্দ হচ্ছিল না। মিঠুনের স্টাইল অনুকরণ করতে শুরু করেছিল টিনএজ ছেলেরা। তাদের কাছে তখন ‘মিঠুন ছাঁট’ বিখ্যাত হয়েছিল। মিঠুন এক বছরে পনেরটি ফিল্মে অভিনয় করতে শুরু করেছিলেন। অপরদিকে জিতেন্দ্রর হাতে কমে আসছিল ফিল্মের সংখ্যা। পরবর্তীকালে দেখা যায়, জিতেন্দ্র যেখানে তাঁর পাঁচ দশকের ফিল্মি কেরিয়ারে 224টি ফিল্মে অভিনয় করেছেন, সেখানে নিজের চার দশকেরও কম সময়ে মিঠুন 315টি ফিল্মে অভিনয় করেছেন। জিতেন্দ্র একাধিক পুরস্কার পেলেও মিঠুন বাজিমাত করেছেন তিন বার জাতীয় পুরস্কার পেয়ে। ‘মৃগয়া’, ‘তাহাদের কথা, ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ ফিল্মের জন্য তিন বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন মিঠুন। তবে মিঠুন জিতেন্দ্রর এই বিদ্রুপের পরেও নিজের পেশাদারিত্ব দেখিয়েছিলেন। 1986 সালে মিঠুন তিনটি ফিল্মে জিতেন্দ্রর সঙ্গে স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করেছিলেন। এই তিনটি ফিল্ম হল ‘জাল’, ‘অ্যায়সা পেয়ার কাঁহা’, ‘স্বর্গ সে সুন্দর’। কিন্তু এই ফিল্মগুলিতে জিতেন্দ্রর তুলনায় মিঠুন বেশি নজর কেড়েছিলেন।