বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে উঠেছেন দাদু-ঠাকুমা, ভিডিও ভাইরাল নেট দুনিয়ায়
বয়স হয়ে গেলে দাদু, ঠাকুমাদের আশ্রয়স্থল হয় বৃদ্ধাশ্রম। এই কথাকে একেবারে ভুল প্রমাণ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর অঞ্চলের ভট্টাচার্য পরিবার। ৯২ বছর বয়সী শ্রী অনিল কুমার ভট্টাচার্য এবং ৮৭ বছর বয়সি শ্রীমতি ভবানী ভট্টাচার্যের ৭৩ তম বিবাহ বার্ষিকী ধুমধাম করে পালন করলেন ভট্টাচার্য্য পরিবারের সকল সদস্যরা। জীবিকার টানে মেদিনীপুর থেকে চলে আসতে হয়েছে এই পরিবারের অনেক সদস্যদের। কিন্তু গ্রামের বাড়িতে কালীপুজোর অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভট্টাচার্য পরিবারের সদস্যরা এক জায়গায় জড়ো হন এই মেদিনীপুরের বাড়িতে।
সন্তান সন্ততি, নাতিপুতি সবাইকে নিয়ে জমজমাট সংসার অনিল বাবুর। এইসব হালফ্যাশনের বিবাহ বার্ষিকী পালনের উদ্যোক্তা অবশ্যই নাতিরা। তবে নাতিদের দেখাদেখি অনিল বাবুর সন্তানরাও উৎসাহ দিয়েছেন এই অনুষ্ঠান করার জন্য। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হয় অনিল বাবুর সেজ কন্যার ছেলে দিব্য জ্যোতি ভট্টাচার্য এবং অনিল বাবু, কনিষ্ঠ সন্তান মনোজ ভট্টাচার্য মেজো ছেলে সনৎ ভট্টাচার্যের পুত্র দীপায়ন ভট্টাচার্য এবং কন্যা স্নিগ্ধা চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের পৈতৃক বাড়িতে অনিল বাবু মেজো ছেলে সনৎ ভট্টাচার্য এবং মেজ পুত্রবধূ শুক্লা ভট্টাচার্যের সঙ্গেই বাস করেন তিনি। তবে এই অনুষ্ঠান বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন অনিল বাবুর বড় ছেলে দীপক ভট্টাচার্য, বড় পুত্রবধূ সীমা ভট্টাচার্য, বড় মেয়ে শিপ্রা চক্রবর্তী, মেজো মেয়ে সীমা পারিয়াল, সেজ মেয়ে শিলা ভট্টাচার্য, ছোট ছেলে মনোজ ভট্টাচার্য, ছোট পুত্রবধূ তনুশ্রী ভট্টাচার্য এবং ছোট মেয়ে স্নিগ্ধা চট্টোপাধ্যায়, তাদের সন্তান-সন্ততিরা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের কেরুড় গ্রামের এই ভট্টাচার্য্য পরিবারের রয়েছে একটি অসাধারণ ইতিহাস। অনিল বাবুর পূর্বপুরুষ অর্ধনরেশ্বর মুখোপাধ্যায়কে রাজপুরোহিতের কাজে নিযুক্ত করা হয় এবং তাকে ১০ শক্তির আরাধনার নির্দেশ দেন তৎকালীন মহারাজ। তিনিও শাস্ত্রীয় রীতি মেনেই ১০ দিন ধরে শক্তির আরাধনা করতে থাকেন। তার বংশধর সর্বেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পুত্র কালীশংকর মুখোপাধ্যায় এর সময় থেকেই ১০ শক্তি সমস্ত সন্তানদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। অনেকটা পৈত্রিক সম্পত্তি ভাগাভাগির মতনই এখানে বিগ্রহ ভাগাভাগি হয়ে যায়।
কালীশংকর বাবুর তিন ছেলে ভগবতী, অম্বিকা এবং সত্যেশ্বর। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এই অম্বিকা কিংবা ভগবতীর চাপে সত্যেশ্বর বসতবাটি ছাড়তে বাধ্য হন। সত্যেশ্বর যে পাড়ায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন সেখানে সেই পাড়া ছিল ভট্টাচার্য পাড়া। তাই সত্যেশ্বর বাবুকে অনেকেই মুখোপাধ্যায় থেকে ভট্টাচার্য্য বাবু বলেই বেশি ডাকতেন। যদিও তিনি এই ভট্টাচার্য পদবীতে খুব একটা খুশি ছিলেন না। তবে সত্যেশ্বর বাবুর উত্তরাধিকারী কেদারনাথ মুখোপাধ্যায় এই ভট্টাচার্য্য পদবীটি মেনে নেন। সত্যেশ্বর বাবুর দুই পুত্র কেদার নাথ মুখোপাধ্যায় এবং অনাদি নাথ মুখোপাধ্যায় যিনি ইন্ডিয়ান আর্মিতে ডাক্তার ছিলেন। তিনি যেহেতু চিকিৎসক ছিলেন তাই কেদার নাথ মুখোপাধ্যায় এই পুজোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। অসীম জ্ঞানের ক্ষমতার জন্য তাকে সে সময় ‘কাব্যতীর্থ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
এই কেদারনাথ মুখোপাধ্যায়ের সন্তান হলেন অনিল মুখোপাধ্যায়। অর্থাৎ ভিডিওতে যাকে দেখা যাচ্ছে খুব আনন্দের সহিত সহধর্মিণীর সঙ্গে মালাবদল করে কেক কেটে বিবাহবার্ষিকী পালন করছেন। ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার সাথে সাথেই রীতিমতন ভাইরাল হয়েছে। আর হবে নাই বা কেন এত বছর বয়সেও একসঙ্গে থাকা সত্যিই এখন এই দৃশ্য বিরল। এমন অসাধারণ একটি অনুষ্ঠান করার জন্য ভট্টাচার্য্য বাড়ির প্রত্যেক সদস্যকে ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমরা প্রত্যেকেই অনিল বাবুর দীর্ঘায়ু কামনা করি।