নিজেই তৈরি করলেন নিজের ভাগ্য, ফুটবল খেলেই ফুটপাতের মেয়ে আজ বিদেশের মাটিতে
জীবনে চলার পথে নানান রকম বাধা আসতে পারে। সে কখনো পারিবারিক বাধা, কখনো অর্থনৈতিক বাধা, কখনো বা সামাজিক বাধা। কিন্তু সমস্ত বাধা পেরিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণ করে চলার নামই জীবন। আর যারা জীবনের এই বিষয়গুলি মেনে সামনের দিকে চলতে পারেন তারাই জীবনে সফল ব্যক্তি হন। এ সফল ব্যক্তিদের তালিকায় আরেকজনের নাম উঠে এল যিনি নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরি করেছেন। সেই অগ্নিকন্যার বসবাস ভারতের মাটিতে চেন্নাইতে। চেন্নাই এর মতো সুসজ্জিত শহরে তার একটি বাড়ি জোটেনি। ফুটপাতেই ছোটবেলা থেকে মানুষ হয়েছেন তিনি। ফুটপাথ থেকে তার গন্তব্য স্থল হয়েছে বিদেশেরমাটি। নিজের কপালের লিখনকে নিজেই বদলে ফেলেছেন এই অগ্নিকন্যা।
শুকনো মুখ এবং ছেঁড়া ময়লা জামা কাপড়ের পরিবর্তে গায়ে উঠেছে ভারতের নীল রংয়ের জার্সি। হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ যেটিই ২০১৬ সালে স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেইখানেই জয়ের হাসি হেসেছিলেন ফুটবলার সঙ্গীথা শেকর। নিজের শরীরের দেখভাল করার মতন অবস্থায় তিনি ছিলেননা। রোজ দুধ বা একটা করে ডিম খাওয়ার ক্ষমতা ও তার ছিল না। ফুটপাতে জন্মানোর অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে। অমানবিক অত্যাচার, রোগ এবং অপুষ্টির শিকার হতে হয়েছে তাকে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তার ওয়ার্ল্ড কাপে খেলার সুযোগ আসে। তবে পুরো খেলার সময় জুড়ে কোথাও তার মুখে চোখে প্রকাশ পায়নি তার দারিদ্রতা। ভারতীয় দলের হয়ে তার অসাধারণ খেলার ক্ষমতা প্রত্যেককেই মুগ্ধ করেছে। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একটার পর একটা গোল প্রমাণ করে দিয়েছে যে ইচ্ছাশক্তির জয় হয়।
এখানেই তার পথ চলা থেমে থাকেনি। ২০১৮ সালে আবারও একটি স্ট্রিট ওয়ার্ল্ড কাপ অনুষ্ঠিত হয় রাশিয়াতে, যেখানে তিনি অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তাঁর অসাধারণ খেলার ক্ষমতা দেখে তার বসতির সামনে সাংবাদিকদের লাইন পড়ে গিয়েছিল। রাস্তার ধারে ফুটপাতে অবহেলায় বড় হওয়া সেই মেয়েটি আজ বিদেশের মাটিতে ফুটবল খেলে প্রমাণ করে দিল যে, ইচ্ছা শক্তির জয় সর্বদাই হয়। গাড়ির হর্ন, নোংরা আবর্জনা পাশেই তার শৈশব কেটেছে। কন্যা হিসেবে জন্মানোর জন্য নিজের লজ্জা ঢাকতে ফুটপাতের মধ্যে প্লাস্টিক চাপা দিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করতে হয়েছে। স্নান করা, বাথরুম ব্যবহার করা তাদের কাছে বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে এই বর্তমানে তার পরিস্থিতি পাল্টালেও তিনি নিজের মাটিকে ভুলে যেতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে তিনি ফুটপাতেই তার মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন। মা দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সম্প্রতি কুইনমেরি কলেজ থেকে তিনি ফিজিক্যাল এডুকেশন এর উপর বি.এস.সি পাশ করেছেন। তবে তার স্বপ্ন একজন আই.এ.এস অফিসার হওয়া। এই স্বপ্ন পূরণ হলে তিনি এই স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক গৃহহীন শিশুর স্বপ্ন পূরণ করতে চান। শুধু এটুকুই নয়, তিনি একটি ফুটবলের একাডেমি তৈরি করতে চান। যেখানে ফুটপাথের এবং বস্তির ছেলে মেয়েদের ফুটবল শেখানো হবে একেবারে বিনা পয়সায়। তার মতন এমন অগ্নিকন্যা যেন ঘরে ঘরে জন্মায়। তবে এই সমাজের সাথে সাথে গোটা দেশের এবং গোটা বিশ্বের উন্নতি সম্ভব। এখনো মহিলাদের নানান জায়গায় অত্যাচারের শিকার হতে হয়, কিন্তু তারা যদি নিজের পায়ে দাঁড়ায় তাহলে অত্যাচারীর প্রতিবাদ করা অনেক সহজ হবে।