Hoop StoryHoop Viral

Tulsi Gowda: খালি পায়ে আদিবাসী পোশাকে ‘পদ্মশ্রী’ নিলেন তুলসী গৌড়া, জানেন এই বৃক্ষমাতার অবদান!

বন জঙ্গলকে কেটে ফেলে আমরা কংক্রিটের জঙ্গল বানাচ্ছি, আমাদের সিভিলাইজেশন চাই, উন্নতি চাই। তাই উন্নতি করতে গিয়ে আমরা প্রকৃতিকে একেবারে নিজের হাতের মুঠোয় করে তাকে ধ্বংস করে চলেছি। বন জঙ্গল কেটে সাফ করে কংক্রিটের বড় বড় বাড়ি, অফিস তৈরি করছি। যার ফলে বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমে বাড়ছে এবং মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ছে। করোনা ভাইরাস এর জন্য যখন লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে ঠিক তখনই এমন এক সমীক্ষায় জানা গেছে, প্রতি বছর নাকি এর থেকেও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বায়ুদূষণের জন্য। বায়ুদূষণ তো হবেই যেখানে গাছপালার সংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে, সেখানে অক্সিজেনের জোগান আসবে কোথা থেকে? মানুষকে এখন এইসব নিয়ে বোঝাবে কে? মানুষ তো এখন উন্নতির আনন্দে মত্ত হয়ে আছে কিন্তু যদি বেঁচেই না থাকেন তাহলে এত বড় বড় কংক্রিটের জঙ্গল করে লাভ কি?

এত কিছুর মাঝেও এমন কিছু কিছু মানুষ পৃথিবীতে এখনো বেঁচে আছেন যাদের জন্য পৃথিবীটা এখনো কঙ্কালসার হয়ে পড়ে নি ঠিক তেমনি একজন কর্নাটকের বাসিন্দা হলেন তুলসী গৌড়াও। তিনি বনের এনসাইক্লোপিডিয়া অথবা বৃক্ষমাতা নামে পরিচিত। কর্নাটকের হুনালি গ্রামের ৭২ বছরের বৃদ্ধা পদ্মশ্রী পেলেন। পদ্মশ্রী নিতে গিয়েছিলেন একেবারে খালি পায়ে আর সাধারণ পোশাকে। পোশাকের আড়ম্ভর তার নেই, আর থাকবেই বা কি করে সারা দিন যে কাটে বন জঙ্গলের মধ্যে গাছপালা লালন-পালন করতে করতে। তিনি একা নিজেই প্রায় এক লক্ষ গাছ রোপন করেছেন। ভেবে দেখুন আমরা যখন গাছ কেটে বাড়িঘর বানাচ্ছি, যখন উন্নতির শিখরে উঠতে চাইছি, ঠিক সেই সময় যদি এমন একজন মানুষ থাকেন যিনি উন্নতির পাশাপাশি অনেক গাছপালা লাগানোর কথা চিন্তা করেন, পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য তাহলে খারাপ কি।

সরকারি এজেন্সি গুলো যখন কোনোভাবেই গাছপালা রোপণ করতে পারছিলেন না ঠিক তখনই এই বৃদ্ধা ঠিক করেন তিনি নানাভাবে বীজ সংগ্রহ করে গাছেদেরকে লালন-পালন করবেন। গাছ শুধু বসানোই নয়, গাছ সম্পর্কে এনার রয়েছে অনেক জ্ঞান তাইতো একে ‘বৃক্ষ মাতা’ বলা হয়। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ তাকে পুরস্কার তুলে দেওয়ার সময় অভিনন্দন জানান। তবে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রত্যেকেই তাকে জোড়হাত করে প্রণাম করেন। কর্ণাটকের হলকি জনজাতির কন্যা তুলসী। ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছেন। পরে মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিবাহ হয়ে যায়, কিন্তু যত যাই হোক গাছের প্রতি প্রেম তিনি একেবারেই ভুলতে পারেননি। গাছের ভাষা তিনি বুঝতে পারেন, গাছের অঙ্কুরোদগমের সময় তার একেবারে নখদর্পণে।

হয়তো তিনি ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারেন না কিন্তু তার হাতের ছোঁয়ায় একেবারে খরা ভূমিতেও হয়ে ওঠে সবুজ শ্যামল। এ পৃথিবীতে তুলসীর মতন এমন বহু মানুষের দরকার, যারা নিঃস্বার্থভাবে সকলের উপকারের জন্য প্রচুর প্রচুর গাছ লাগাবেন এবং এদেরকে দেখে অন্তত আমাদের একটু শিক্ষা হওয়া উচিত। যে উন্নতির পাশাপাশি আমরা যদি আমাদের আশেপাশে আমাদের চারিদিকের ফাঁকা জায়গায় খুব সামান্য পরিমাণে কয়েকটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে অক্সিজেন প্রদান করে এমন গাছ লাগাতে পারি, তাহলে হয়তো পৃথিবীর আয়ু বেশ কিছু দিন বাড়বে।

Related Articles