‘চেঙ্গিজ’ বললেই ভেসে ওঠে ইতিহাসের পাতার নিষ্ঠুর মঙ্গোলিয়ান শাসকের ঝলক। দীর্ঘদিন পর ‘চেঙ্গিজ’-এর মাধ্যমে বড় পর্দায় ফিরেছেন জিৎ (Jeet)। তাঁর প্রযোজনায় তৈরি ‘চেঙ্গিজ’ কোনো পিরিয়ড পিস নয়। কোনো ঐতিহাসিক কাহিনী নয়। সত্তরের দশকের প্রেক্ষাপটে সাজিয়ে তোলা এক গ্যাংস্টারের কাহিনী, চেঙ্গিজ খানের মতোই যার কোনো সীমানা নেই। তবে ‘চেঙ্গিজ’ শুধুমাত্র বাংলা ফিল্ম নয়। এটি একটি প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রথম ফিল্ম ‘চেঙ্গিজ’ যা প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম হিসাবে সর্বভারতীয় স্তরে মুক্তি পেয়েছে। তবে মুক্তির সাথে সাথেই সৃষ্টি করেছে বিতর্ক।
View this post on Instagram
জিৎ-এর প্রযোজনায় তৈরি ‘চেঙ্গিজ’-এর চিত্রনাট্য লিখেছেন নীরজ পান্ডে (Neeraj Pandey)। ফিল্মটি পরিচালনা করেছেন রাজেশ গাঙ্গুলী (Rajesh Ganguly)। ‘চেঙ্গিজ’ নিয়ে বিতর্ক প্রথমতঃ চিত্রনাট্য ঘিরে। জিৎ-এর পাওয়ার প্যাকড পারফরম্যান্স সত্ত্বেও চিত্রনাট্যে ডিটেলিং-এর মারাত্মক অভাব রয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, চেঙ্গিজ-এর লক্ষ্য পূরণ হওয়ার পরও সে কেন আন্ডারওয়ার্ল্ডে রয়ে গেল। চিত্রনাট্যে নেই এই প্রশ্নের উত্তর। তবে কিছুটা হলেও এই কথা সত্য, অন্ধকার জগতে একবার প্রবেশ করলে বেরোনো সম্ভব নয়। তবে প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্মের ক্ষেত্রে চিত্রনাট্যে এই কথা স্পষ্ট করা উচিত ছিল।
View this post on Instagram
অ্যাকশন দৃশ্যগুলি সত্যিই অতুলনীয়। প্রশংসিত হয়েছে জিৎ-এর হিন্দি ডাবিং-ও। কিন্তু ভিএফএক্স-এর মান উন্নত নয় বলে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন। প্রকৃতপক্ষে ‘চেঙ্গিজ’-এর মতো প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্মের ভিএফএক্স-এর সাথে অনেকেই দক্ষিণ ভারতের ফিল্মগুলির ভিএফএক্স-এর তুলনা করেছেন। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের ফিল্মগুলির বাজেটের মাত্র এক শতাংশ ‘চেঙ্গিজ’-এর বাজেট। এই বাজেটের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের মতো ভিএফএক্স তৈরি করা অতিপ্রাকৃত কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
View this post on Instagram
সমস্যা তৈরি হয়েছে বাংলা বলয়ের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও। প্রথম দিন থেকে এক সপ্তাহ পার করে এখনও অবধি ‘চেঙ্গিজ’-এর বক্স অফিস কালেকশন মন্দ নয়। ভিন রাজ্যের বাঙালিদের কাছে ‘চেঙ্গিজ’ গ্রহণযোগ্য। বিতর্ক সৃষ্টি করছেন টলিউডের কিছু নামী প্রযোজক-পরিচালকদের একাংশ। তাঁদের মতে, ‘চেঙ্গিজ’-এর মতো বস্তাপচা কমার্শিয়াল ফিল্ম কেউ দেখতে চান না। যদি তাঁদের কথা সত্য হয়, তাহলে সাম্প্রতিক কালের কিছু বাংলা ফিল্মের মতো প্রেক্ষাগৃহ থেকে প্রথম সপ্তাহেই বিদায় নিত ‘চেঙ্গিজ’। কার্যতঃ তা হয়নি। কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয় ফিল্মে যখন কাল্পনিক অ্যাকশন দৃশ্য দেখানো হয়, সাততলা বাড়ির ছাদ থেকে রাস্তায় পড়েও সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নায়ক। সেই সময় কিন্তু বাংলার বুকেই প্রেক্ষাগৃহগুলিতে ওঠে হাততালির ঝড়। এই প্রযোজক-পরিচালকরাই প্রশংসা করেন ফিল্মগুলির। আফশোস করেন, দক্ষিণ ভারতের মতো বাংলায় কেন এই ধরনের ফিল্ম তৈরি হয় না! অথচ জিৎ যখন নিজের প্রযোজনায় এই ধরনের ফিল্ম তৈরির চেষ্টা করেন, সেই সময় সুর বদলে ফেলেন তাঁরা।
বাংলা ফিল্মের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেই হয় না, কেউ যদি নতুন কোনো ফিল্ম তৈরির চেষ্টা করেন, উৎসাহ দিতেও জানতে হয়। হয়তো অনেকে কষ্ট পাচ্ছেন, তাঁরা পারলেন না, অথচ জিৎ বাংলায় বসে একটি প্যান ইন্ডিয়ান ফিল্ম তৈরি করে সর্বভারতীয় স্তরে তার মুক্তি ঘটালেন। নিঃসন্দেহে জিৎ একটি বিপ্লব ঘটিয়েছেন যা অনেকে চেষ্টাও করেননি।
View this post on Instagram