Rita Koiral: বেঁচে থাকতে পাননি যোগ্য সম্মান, কেন অকালে চলে গেলেন রীতা কয়রাল?
বাংলা টেলিভিশনের গোড়ার দিকে জন্ম হয়েছিল একাধিক শিল্পীর। তাঁদের শিল্পসত্ত্বা সমৃদ্ধ করেছিল বাংলা দূরদর্শনের ধারাবাহিকগুলিকে। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রীতা কয়রাল (Rita Koiral)। কেরিয়ারের গোড়ার দিকে বাংলা দূরদর্শনের সংবাদপাঠিকা হিসাবে তাঁকে অনেকেই দেখেছেন। তবে তা ছিল স্বল্প দিনের জন্য। বাংলা ধারাবাহিকের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসাবে আত্মপ্রকাশ রীতার। একের পর এক ধারাবাহিকের পাশাপাশি বড় পর্দায় কাজ করতে শুরু করেন তিনি। ‘আত্মজা’ ছিল তাঁর ডেবিউ ফিল্ম। বড় পর্দায় বারবার অত্যাচারী বৌদির চরিত্রে নজর কেড়েছেন রীতা।
অনেকেই জানতেন না, তিনি ছিলেন একজন প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী। রীতার নিজস্ব ডান্স ট্রুপ ছিল। তবে একের পর এক আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন তিনি। একসময় অভিনেতা সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় (Soumitra Banerjee)-কে বিয়ে করেছিলেন রীতা। কিন্তু বিবাহিত জীবনে চরম অসুখী অভিনেত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituparno Ghosh) পরিচালিত ফিল্ম ‘বাড়িওয়ালি’ ফিল্মে কিরণ খের (Kiran Kher)-এর কন্ঠে বাংলা ডাব করেছিলেন রীতা। সেই খবর সামনে এলে অবলীলায় তা অস্বীকার করেছিলেন ঋতুপর্ণ। কিরণও দাবি করেছিলেন, তিনি বাংলা শিখেছেন এই ফিল্মে অভিনয়ের জন্য। ‘বাড়িওয়ালি’ মুক্তি পাওয়ার পর ফিল্মে কিরণের কন্ঠস্বর শুনে আপামর বাঙালির কাছে আর কিছুই লুকিয়ে থাকেনি।
View this post on Instagram
লিভারের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন রীতা। মাঝে মাঝেই তাঁর শরীর খারাপ হত। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির কাউকেই জানতে দেননি তিনি। এর মধ্যেই রীতার পুত্র অজানা কারণে আত্মহত্যা করেন। টালিগঞ্জ একটি স্টুডিওয় শুটিংয়ে ব্যস্ত রীতার কাছে ছেলের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছালে শুটিং বন্ধ করে বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে পুত্রশোক রীতাকে কাজ থেকে দূরে রাখতে পারেনি। আরও বেশি করে নিজেকে কাজে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। 2017 সালে রীতার শারীরিক পরিস্থিতির অত্যন্ত অবনতি ঘটে। ওই বছরের নভেম্বর মাসের প্রথমে টাটা মেডিক্যাল সেন্টার অ্যান্ড ক্যান্সার হাসপাতালে কেমোথেরাপি হয়েছিল রীতার।
কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। 17 ই নভেম্বর সকাল আটটা নাগাদ বাড়িতেই লিভার ফেটে মাত্র আটান্ন বছর বয়সে প্রয়াত হন রীতা। টাটা মেডিক্যাল সেন্টার অ্যান্ড ক্যান্সার হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। রীতার মেয়ে অমৃতা (Amrita) মায়ের প্রয়াণের দুঃসংবাদ ফোন করে আর্টিস্ট ফোরামে জানিয়েছিলেন। শোকপ্রকাশ করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শোকজ্ঞাপন করেছিলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee)-ও। এরপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে সময়। রীতার মেয়ে অমৃতা অভিনয় জগতের সাথে যুক্ত নন। তিনি স্পটলাইট থেকে দূরে। ইন্ডাস্ট্রির কাছে রয়ে গেছে রীতার বহু অপ্রাপ্তি। সত্যিই কি সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, চোখ ধাঁধানো শো-অফের মাঝে কেউ মনে রেখেছেন তাঁর মতো এক দক্ষ অভিনেত্রীকে?