গল্প আজ শেষ থেকেই শুরু হোক। নভেম্বর মাসেই এক গল্পের শেষ হয়েছিল ২০১৭ সালে। তারিখটা অবশ্য ছিল ১৯। সেদিন এক খলনায়িকার জীবনের মেরু পরিবর্তন হয়। তাঁর বড় বড় চোখের চাউনি, ক্ষিপ্রতা, রাগ সব যেন পর্দাতেই সীমাবদ্ধ। স্বর্ণযুগের একাধিক ছবিতে তাঁর অভিনয়ের দাপট ছিল অব্যাহত। ‘বড় বউ’ হোক বা ‘পারমিতার একদিন’ বা ‘জীবন নিয়ে খেলা’ বা ‘অসুখ’, বা ‘ইতি মৃণালিনী’, ‘গুণ্ডা’ বা ‘চিরদিনি তুমি যে আমার’ সবেতেই তিনি ছিলেন এক বড়সড় ধামাকা। শুধু যে বড়পর্দা তা নয়, ছোট পর্দাতেও তিনি জমজমাট। একদিন হঠাৎ শুক্রবার লিভার ফেটে করুন মৃত্যুর মুখে ঢলে যান অভিনেত্রী রীতা কয়রাল। ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে খবর, বেশ কিছুদিন ধরেই লিভার ক্যানসারে ভুগছিলেন রীতা। তাঁর চিকিৎসাও চলছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
খল চরিত্র যে কিভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয় তাঁর জন্য রীতার অভিনয় দুর্দান্ত উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। আপনি যদি ‘রাখি-বন্ধন’ ধারাবাহিকের দর্শক হয়ে থাকেন তবে বুঝতে পারবেন একজন খল চরিত্র কতটা দক্ষ হলে তবেই না ভালো প্রতিষ্ঠিত হয়। খল চরিত্রটি রীতা কয়রাল এতটাই নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে দর্শকরাও রীতিমত খাপ্পা ছিল রীতার উপর।
শুধু যে অভিনয়ে দক্ষতা রেখেছিলেন তা নয়, ডাবিং এও তাঁর দক্ষতা অসম্ভব। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তো বলেই দিয়েছিলেন ‘রীতার মতো তাড়াতাড়ি সংলাপ মুখস্থ করতে পারে কম অভিনেতাই’। এই প্রসঙ্গে একটি গুঞ্জন রয়েছে, যদিও গুঞ্জন বললে ভুল হবে। একটা সময় বলিউডের অনুপম খের রীতা কয়রালকে ধমকি দিয়েছিলেন এবং টলিউডে কাজ করতে দেবেন না বলেও হুমকি দিয়েছিলেন।
আপনারা যারা ‘বাড়িওয়ালি’ ছবি দেখেছেন তাঁরা হয়তো অনেকেই জানেন যে এই চিত্রে অভিনয় করেছিলেন অনুপম খেরের পত্নী কিরণ খের। এই সিনেমাতে অভিনয় করেই তিনি জাতীয় পুরস্কার পর্যন্ত পেয়েছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত এই ছবিতে কিরণ খেরের চরিত্রের ডাবিংটি করেছিলেন সেইসময় রীতা কয়রাল।পরবর্তীকালে ছবিটি যখন জাতীয় পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হন তখন জ্যুরিতে থাকা গৌতম ঘোষ সহ অনেকেরই খটকা লাগে গলাটি কিরণ খেরের নয়। এদিকে প্রযোজক অনুপম খের রীতা কয়রালকে মোটা টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন যাতে তিনি মুখ না খোলেন। এদিকে রীতাকে জ্যুরি বোর্ডে থাকা সকলেই বলেছিলেন, বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে। অনুপম খেরের সঙ্গে রীতা কয়রালের বিবাদ যখন তুঙ্গে ঠিক তখনই অভিনেত্রী মোটা পারিশ্রমিক নিতে নাকোচ করেন, কোনোভাবেই প্রতিভাকে মোটা টাকার বিনিময়ে ঢেকে ফেলতে চাননি। কিন্তু সেদিনের অনুপম তাঁর কেরিয়ার শেষ করার হুমকি দেন। এই সব কিছু কিন্তু রীতার অভিনয় দক্ষতাকে আটকাতে পারেনি। সেই তখনকার ‘এখানে আকাশ নীল’ এর অভিনেত্রী ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায়। ডাবিং এর কৃতিত্ব না পেলেও পরবর্তীতে ঋতুপর্ণ ঘোষ বহু চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন ডাবিংটি রীতা কয়রাল করেছেন।
অভিনেত্রী রীতা কয়রালের জীবনে এমনই অনেক ঘটনা আছে যা সবটা হয়তো এক প্রতিবেদনে বলা সম্ভব নয়। আপনি যদি তাঁর অভিনীত সিনেমা বা ধারাবাহিক দেখে থাকেন তবে এটুকু বুঝতে পারবেন যে মেয়েরা শুধু নায়িকা হয় না ‘খল নায়িকা’ ও হয়ে উঠতে পারেন।