আজ থেকে শুরু হল পৃথিবীর ঋতু কাল, জেনে নিন কেন মানা হয় অম্বুবাচী তিথি!
অম্বুবাচী নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের শেষ নেই। অম্বুবাচীর বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম আছে। এটি অমাবতী নামেও পরিচিত। আমাদের হিন্দু শাস্ত্রে পৃথিবীতে মা হিসেবে ভাবা হয়ে থাকে। বেদে তেমনি বলা হয়েছে পৃথিবী হলো আমাদের মা পৌরাণিক যুগের পৃথিবীকে ধরিত্রী মা বলা হয়েছে। মহাজাগতিক ধারায় পৃথিবী যখন সূর্যের মিথুন রাশির আদ্রা নক্ষত্র অবস্থান করে সেদিন থেকে বর্ষাকাল শুরু হয়। অম্বুবাচী কথাটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ অম্ব এবং বাচি থেকে। অম্ব শব্দের অর্থ হলো জল এবং বাচি শব্দের অর্থ হলো বৃদ্ধি। গ্রীষ্মের দাবদাহে পর যখন বর্ষার আগমন হয় তখন পৃথিবীর সিক্ত হয়ে বীজ ধারণ করার উপযুক্ত হয়ে ওঠে তাই এই সময়কালকে বলা হয় অম্বুবাচী। এই দিনগুলোতে সাধারণত সমস্ত ঠাকুরের পুজোর বন্ধ থাকে তবে, নারায়ন কৃষ্ণ এবং শিব পুজো করা যায়।
একটি মেয়ে ঋতুকাল হওয়ার পরেই সে তার মাতৃত্বের স্বাদ পায়। এ ক্ষেত্রেও তাই পৃথিবীতে বর্ষাকাল আসার পরেই চারিদিকে নতুন শস্য জন্মলাভ করে। এই তিন দিনকে সেইজন্য পৃথিবীর ঋতু কাল হিসাবে ধরা হয়। এই তিন দিন কোনরকম চাষাবাদ করা হয়না। মাটিকে বর্ষার জলে পুষ্ট করে উর্বর করে তোলা হয়। আষাঢ় মাসে বর্ষার নতুন জল পেয়ে পৃথিবীর মাটি যখন জলে সিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাকে এক ঋতুমতী নারী হিসাবে গণ্য করা হয়। সেই দিন থেকেই শুরু হয় অম্বুবাচী।
সতীর দেহ নিয়ে শিব যখন তান্ডব চালাচ্ছিল তখন সতীর যৌনাঙ্গ পড়েছিল আসামের কামাখ্যায়। অম্বুবাচীর দিনে পুজো বন্ধ থাকে। চারদিন পরে মন্দিরের দরজা খোলা হয়, কামাখ্যা দেবীকে স্নান করানো হয় তারপর ভক্তরা মন্দিরের ভেতরে ঢোকার সুযোগ পান। কামাখ্যা মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে লাল রঙের তরল বেরিয়ে আসে। পান্ডারা ভক্তদের উদ্দেশ্যে এই লাল রঙের তরল ভেজানো কাপড়ের টুকরো দেন। পুরুষরা ডান হাতে বা গলায় মহিলারা বাঁ হাতে মাদুলি করে পড়তে পারেন। এতে সমস্ত দুঃখ দুর্দশা দূর হয়ে যায়।
অম্বুবাচীর হওয়ার পর থেকেই কৃষকরা চাষ করতে শুরু করে। অনেক জায়গায় একে রজতসব নামেও পালন করা হয়। ঋতুবতী মেয়েরা যেমন অশুচি থাকে ঠিক তেমন মনে করা হয়, এই সময় সমস্ত মাঙ্গলিক কর্ম থেকে বিরত রাখা হয়। সমস্ত মন্দির বন্ধ থাকে। গৃহে পূজা পাঠ সব বন্ধ হয়ে যায়। এইদিন বিধবারা সাধু-সন্তরা এবং যাদের উপনয়ন হয়েছে তারা কোন রকম রান্না করা গরম খাবার খেতে পারবেন না। দুধ, ফল ইত্যাদি খেয়েই থাকতে হবে। ২০২১ সালে অম্বুবাচী পড়ছে মঙ্গলবার অর্থাৎ ২২শে জুন সকালবেলা ২টো ৯ এ, অম্বুবাচী ছাড়ছে, ২৫ শে জুন ২টো ৩০ মিনিটে।