দেখতে না পেলেও ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ শোনেন বৃদ্ধা, দৃষ্টিহীন মায়ের ভালোবাসায় আপ্লুত বামা
সব্যসাচী চৌধুরী (sabyasachi chowdhury) এই মুহূর্তে অনস্ক্রিন ‘বামাক্ষ্যাপা’ নামেই অধিক পরিচিত। এর আগে সব্যসাচীকে করোনা আক্রান্তদের জন্য ত্রাণ ও খাবার নিয়ে পৌঁছাতে। এমনকি ‘ইয়াস’-এর পরেও তাঁকে দেখা গেছে ‘ইয়াস’ বিধ্বস্ত এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু 6 ই জুন একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে সব্যসাচীর।
নিজেই সেই অভিজ্ঞতা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন সব্যসাচী। 6 ই জুন, দক্ষিণ বারাসতের একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলেন সব্যসাচী ও তাঁর টিম। সেখানেই বয়সের ভারে নুব্জ এক বৃদ্ধার সঙ্গে আলাপ হয় সব্যসাচীর। সব্যসাচী লিখেছেন, বৃদ্ধার ছেলে কালীঘাট অঞ্চলে নিজের পরিবার নিয়ে থাকেন। বৃদ্ধা দৃষ্টিশক্তিহীন। দৃষ্টিশক্তিহীন মা-কে ছেলে বোঝা ভেবে পাঠিয়ে দিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের ঠিকানায়। এমনকি বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসায় অর্থ ব্যয় করতে চায়নি ছেলে।
দৃষ্টিশক্তিহীন ভদ্রমহিলা সব্যসাচীকে চোখে না দেখতে পেলেও প্রতিদিন আশ্রমের টিভিতে নিয়ম করে ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ শোনেন। সব্যসাচীর গলার স্বরে তাঁকে চিনতে পেরে ভদ্রমহিলা বলেছেন, সব্যসাচীর কন্ঠস্বর তাঁর বুকে রয়েছে। সব্যসাচী বারবার বাধা দেওয়া সত্ত্বেও ভদ্রমহিলা গড় হয়ে প্রণাম করেছেন সব্যসাচীকে। কিন্তু ভদ্রমহিলার একটি উক্তি অভিভূত করে দিয়েছে সব্যসাচীকে। যে ছেলে মা-কে দেখেন না, সেই ছেলের জন্য আশীর্বাদ চেয়েছেন বৃদ্ধা মা।
বৃদ্ধা বলেছেন, তাঁর ছেলে বড় চাকরি করেন। বৃদ্ধার যাতে কোনো কষ্ট না হয় তাই বৃদ্ধার ছেলে নিজের মা-কে বৃদ্ধাশ্রমে রেখেছেন। সেই ছেলের মঙ্গল কামনা করে আশীর্বাদ চাইলেন বৃদ্ধা মা। এই ঘটনায় ভেতরটা মুচড়ে উঠেছে সব্যসাচীর। তিনি লিখেছেন, মা এমন একটি মানুষ যাঁর উপর রাগ দেখানো যায়, অভিমান করা যায়, তাঁকে অনায়াসেই বলা যায়, “তুমি ওসব বুঝবে না”। মাতৃত্ব আসলে চটচটে, আঠালো এক বস্তু যাকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলেও সে ছেড়ে যায় না। পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলে উল্টে জিজ্ঞাসা করে, “বাবা, তোর লাগেনি তো!” তাই সব্যসাচী ঠিক করেছেন, বারবার সময় বার করে ছুটে যাবেন সেই বৃদ্ধাশ্রমে। একবারেই দেখে আসবেন তাঁর ‘অন্য মা’-কে।