‘কে তুমি আমারে ডাকো, অলখে লুকায়ে থাকো,’ গানটির গায়িকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হলো সম্প্রতি। সত্যিই অলক্ষ্যে মিলিয়ে গেছেন সুরসাধিকা। এই ‘সাধিকা’ শব্দখানা কিন্তু তাঁর মতো গায়িকার জন্য খুবই পর্যাপ্ত। এত বড় গায়িকা হয়েও পাবলিসিটি একদম অপছন্দ ছিল তাঁর। সবার অলক্ষ্যে নিজেকে লুকিয়ে রেখে গীত সাধনা করেই কাটিয়ে ফেললেন বাকি জীবনটা। কোনো আড়ম্বর ছাড়াই খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন তিনি। এ কথা মাথায় রেখেই তাঁর পারলৌকিক ক্রিয়াও যেন সাদামাটা ভাবেই গানে গানে সম্পন্ন হলো ওই লেক গার্ডেন্সের বাড়িতেই। মেয়ে সৌমির ভাষায়, “সাধারণ শেষকৃত্যই মা নিজের জন্য চেয়েছিলেন।”
গত শুক্রবারই শ্রাদ্ধ সম্পন্ন হয়েছে সন্ধ্যা দেবীর।মায়ের শেষ কাজটি করেছেন মেয়ে সৌমি সেনগুপ্তই। তবে এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কিন্তু কোনো পুরুষ পুরোহিত করেননি। করেছেন চার মহিলা পুরোহিত। তবে সন্ধ্যা দেবীই এমনটা চেয়ে গিয়েছেন? সৌমি দেবী জানিয়ে দিয়েছেন, “মা অবশ্যই মহিলা পুরোহিত দিয়ে শ্রাদ্ধ করানোর বিষয়ে কিছুই নির্দেশ দিয়ে যান নি।” আসলে সন্ধ্যা দেবী এবং সংগীত একে অপরের সাথে মিলে মিশে একাকার। আর যেহেতু মহিলা পুরোহিতরা গানের মাধ্যমে বা পাঠের মাধ্যমে কাজ করেন। তাই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানটি ওনাদের হাত দিয়েই সুসম্পন্ন হলো। এমনটাই জানিয়েছেন সৌমি দেবী। আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় হলো, এদিন কিন্তু সন্ধ্যানুরাগীদের জন্য অবাধে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিলনা।
প্রসঙ্গত, দূর্গাপূজা হোক বা শুভ যেকোনো অনুষ্ঠান পৌরহিত্যে এখন নারীদের জুড়ি মেলা ভার।পুরুষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব ক্ষেত্রেই তাঁদের অবাধ বিচরণ। তাঁদের কিন্তু কাজ বেশ নিখুঁত। বেশ শান্তি পেয়েছেন সৌমি দেবী মহিলা পুরোহিতদের কাজে। তাঁর ভাষায়, “চার মহিলা পুরোহিত বেশ নিখুঁত ভাবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানটি করলেন। একেবারে অতুলনীয় বললেই চলে। ওঁদের হোম থেকে শুরু করে সংস্কৃত মন্ত্র পাঠ মন কেড়ে নিয়েছে একেবারে। সেগুলোর বাংলা অনুবাদও শুনিয়ে দিয়েছেন নন্দিনী দেবীরা।” নন্দিনী ভৌমিক, রুমা রায়,পৌলমী চক্রবর্তী, সেমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পন্ন করলেন ‘গীতশ্রী’র শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।
সন্ধ্যা দেবীর সাথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ছিল খুবই ভালো। অথচ ভোটের ব্যস্ততার কারণে এদিন তিনি হাজির থাকতে পারেননি। তবে শ্রদ্ধা জানাতে কিন্তু ভোলেননি। ফুলে খেরা একটি স্তবক পাঠিয়ে দিয়েছেন। এমনটাই জানালেন গীতশ্রীর মেয়ে। মুখ্যমন্ত্রী স্ময়ং আসতে পারেন নি। কিন্তু প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেন, মালা রায়দের মতো আরও অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে সাথে উপস্থিত ছিলেন সুচিত্রা কন্যা মুনমুন সেনও। সৈকত মিত্র, অরুন্ধতী হোমচৌধুরী, শিবাজী চট্টোপাধ্যায়রাও এদিন শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন।