Sandip Chowdhury: অঞ্জন চৌধুরীর পুত্র নন, ইন্ডাস্ট্রির ভদ্র মানুষ ‘বাবুদা’ ছিলেন সন্দীপ চৌধুরী
প্রায় হঠাৎই না ফেরার দেশে চলে গেলেন সন্দীপ চৌধুরী (Sandip Chowdhury)। ‘বাবুদা’ নামেই টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি সুপরিচিত। স্টারকিড হয়েও স্টারকিড ছিলেন না সন্দীপ। পিতা ছিলেন স্বনামধন্য প্রযোজক ও পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)। বাড়িতে তারকাদের আনাগোনা লেগে থাকতই। সন্দীপের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফিল্মি আবহে হলেও অঞ্জনবাবু পুত্রকে কোনোদিনই বুঝতে দেননি তিনি একজন সেলিব্রিটির ছেলে। অঞ্জন ও তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী চৌধুরী (Jayshree Chowdhury) মধ্যবিত্ত পারিবারিক কাঠামোয় বিশ্বাসী ছিলেন। মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) পরবর্তী যুগে ইন্ডাস্ট্রির রাশ হাতে নিয়েছিলেন অঞ্জনবাবু। তাঁর তৈরি ফিল্মগুলি ছিল ঘরোয়া। পরিবারের সাথে বসে দেখার মতো এই ফিল্ম শহরের পাশাপাশি হিট হত গ্রামীণ সমাজেও।
View this post on Instagram
সারা বাংলায় ব্লকবাস্টার হিট বাংলা ফিল্মের যুগকে ফিরিয়ে আনা অঞ্জনবাবুর পুত্র সন্দীপ বাবার মতোই প্রযোজক ও পরিচালক হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অঞ্জনবাবুর কড়া শাসন তাঁকে ঘিরে থাকত। ফলে বিবেকানন্দ কলেজ থেকে জুলজি অনার্স নিয়ে স্নাতক হওয়ার পর স্টুডিওর অন্দরে পা রাখার অনুমতি পেয়েছিলেন সন্দীপ। ততদিনে তাঁর দুই দিদি চুমকি (Chumki Chowdhury) ও রীনা (Reena Chowdhury) বাংলা ফিল্মের তারকা। পরিচালক হিসাবে ধীরে ধীরে বেশ কয়েকটি মেগা সিরিয়াল ও ফিল্ম তৈরি করেন তিনি। কিন্তু 2007 সালে অঞ্জনবাবুর মৃত্যুর পর প্রযোজনা সংস্থার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন সন্দীপ।
View this post on Instagram
জি বাংলার জন্য নির্মাণ করেন বাংলা ধারাবাহিক ‘এরাও শত্রু’। এই ধারাবাহিকটি সুপারহিট হয়। ‘এরাও শত্রু’-র মাধ্যমে অঞ্জন চৌধুরীর পুত্রের পরিচয়কে অতিক্রম করে নিজস্ব অস্তিত্ব তৈরি করে সন্দীপ হয়ে ওঠেন এক সফল প্রযোজক ও পরিচালক। এরপর থেকে লাগাতার কাজ করে গিয়েছেন সন্দীপ। করোনা অতিমারীর পর সকলে যখন বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ানোর আর্তি জানাচ্ছেন , সন্দীপ স্পটলাইট থেকে দূরে সেই সময় তৈরি করেছেন একের পর এক চিত্রনাট্য। ‘কন্যাদান’ ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি ‘উড়ন তুবড়ি’-র ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ছিলেন সন্দীপ। তাঁর তৈরি শেষ ফিল্ম ছিল ‘বিদ্রোহিনী’। এটি তৈরি হয়েছিল 2020 সালে। মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) ও জিতু কমল (Jitu Kamal)।
View this post on Instagram
একই সাথে পরিচালনা করছিলেন কালার্স বাংলার চ্যানেল টপার ধারাবাহিক ‘ফেরারি মন’। কিন্তু কিডনির সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন সন্দীপ। রক্তে বৃদ্ধি পেয়েছিল শর্করার মাত্রা। 17 ই ডিসেম্বর ‘ফেরারি মন’-এর সেটেই হঠাৎ অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন সন্দীপ। দ্রুত তাঁকে নিকটবর্তী ইকবালপুর নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। দেখা দিয়েছিল হার্টের সমস্যা। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানোর কথা থাকলেও শারীরিক প্যারামিটারের ওঠা-নামার কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। সন্দীপের শারীরিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে থাকে। 3 রা জানুয়ারি, মঙ্গলবার সকাল এগারোটায় মাত্র চুয়াল্লিশ বছর বয়সে নক্ষত্রলোকে পাড়ি দিলেন সন্দীপ।
View this post on Instagram
নিজেকে কখনও স্টারকিড ভাবেননি তিনি। ফলে ব্যক্তিগত জীবন থাকত স্পটলাইটের আড়ালে। সন্দীপের স্ত্রী বিদিশা (Bidisha)-ও ছিলেন একসময়ের সুপরিচিত অভিনেত্রী। তাঁদের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ‘বাবুদা’-র চলে যাওয়ার খবর কারও কাছে বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না। প্রায় সকলেই ভেবেছিলেন, এটি গুজব। কারণ শারীরিক অসুস্থতা সত্ত্বেও ফোনের মাধ্যমে কাজ সংক্রান্ত মেসেজ ও কথা বলতেন সন্দীপ। ফলে চালু ছিল ‘ফেরারি মন’-এর শুটিং। কিন্তু যবনিকা পতন হল এক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিভার। চলে গেলেন সন্দীপ। বর্ষীয়ান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আক্ষেপ, ইন্ডাস্ট্রিতে আরও একজন ভদ্র মানুষ কমে গেল। শূন্যস্থান তৈরি হল আবারও। সন্দীপের আকস্মিক প্রয়াণে শোকস্তব্ধ তাঁর পরিবার। ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর তরফে সন্দীপের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা এই প্রবল শোকের মুহূর্তে তিনিই যেন শক্তি দেন সন্দীপের পরিবারকে। আবারও নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
View this post on Instagram