‘বাগদেবীর বরপুত্রী’ লতা মঙ্গেশকর মিলিয়ে গেছেন মহাশূন্যে। যিনি তাঁর কণ্ঠ দিয়ে সারা বিশ্বের মনে একেবারে গেঁথে নিয়েছিলেন নিজেকে। তাঁর মহাপ্রয়াণে শোকাকুল সারা দেশ। পিএম মোদি, অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, জাভেদ আখতার থেকে শুরু করে বিশিষ্ট মহলের প্রায় সব্বাই লতাজিকে স্মরণ করছেন। সাধারণ মানুষও তাঁর স্মৃতিচারণ করছেন অনবরত। ১৯৬০এর দশক থেকে একের পর এক সুপার হিট গান নিয়ে লতাজির সাফল্যের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করেন। শোনা যায়, এই বরপুত্রীর প্রতি হিংসাত্মক হয়ে ঘনিষ্ঠ কেউ তাঁকে বিষ খাইয়ে মারতে চেয়েছিল।
লতাজি এতটাই অসুস্থ হয়েছিলেন যে বাড়ি থেকেই এক্স-রে মেশিন কিনে এক্স-রে করতে হয়েছিল। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার জানিয়েছিলেন মঙ্গেশকরকে হত্যার জন্য স্লো পয়জেন দেওয়া হয়েছিল। যাতে ধীরে ধীরে একটু একটু করে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন তিনি আর কেউ জানতেও না পারে। ১৯৬৩ সালের জানুয়ারিতে,অমর গীত ‘ইয়ে মেরে ওয়াতান কে লোগো’ গাওয়ার ঠিক আগের বছর ১৯৬২ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ঘটনাটি ঘটেছিল। পেটে প্রচণ্ড ব্যথা সাথে বমিও হত। বিছানা ছেড়ে ওঠার ক্ষমতাটুকুও ছিল না। প্রায় ৩ মাস ধরে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে মেনেই নিয়েছিলেন তিনি আর কখনও চলচ্চিত্রের জন্য প্লেব্যাক গান করতে পারবেন না। একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন লতাজি।
কিংবদন্তি গায়িকাকে মারার এই ষড়যন্ত্রও ফাঁস হয়ে যায় কোনোভাবে। জানা গিয়েছিল, তাঁর বোন উষা যখন জানতে পারেন যে তাকে বিষ দেওয়া হচ্ছে, তখন তিনি সরাসরি তাঁর রান্নাঘরে গিয়ে বাবুর্চিকে বলেছিলেন যে ঊষা নিজেই তাঁর বোনের জন্য খাবার রান্না করবে। কারণ তিনি জানতে চান খাবারে পয়জেন কিভাবে আসছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই লতার বাড়িতে রান্না করা বাবুর্চি কাউকে কিছু না জানিয়েছেই পালিয়ে যায়। এমনকি সে তার কাজের জন্য বরাদ্দ পাওনা টুকুও নেয়নি। এমন সন্দেহজনক ঘটনায় লতাজি সহ সারা পরিবারই বুঝেছিলেন কেউ লতাজির বাড়িতে ওই বাবুর্চিকে শুধু বিষ দেওয়ার জন্যই রেখেছেন।
প্রশ্ন উঠেছিল ওই ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ কেন নেননি লতাজি। লতাজি বলেছিলেন “যে মঙ্গেশকর পরিবার এই বেদনাদায়ক বিষয়ে কথা বলতে চায় না।” লতাজি নিজে এও বলেছিলেন যে “আমরা তাঁর সম্পর্কে জানতে পেরেছি কিন্তু কোনও সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় তাঁকে শাস্তি দিতে পারিনি। তাই তাঁর নাম উল্লেখ অসম্ভব” ১৯৬২ সালের এত দুঃখের মাঝেও আবেগপ্রবণ হয়ে মহান কবি মাজরুহ সুলতানপুরীকে স্মরণ করে লতাজি জানিয়েছিলেন, মাজরুহ সুলতানপুরী সব জানতে পেরে নিয়মিত সন্ধ্যায় লতা মঙ্গেশকরের বাড়িতে এসে কবিতা ও গল্প শুনিয়ে তাঁর মনকে আনন্দ দিতেন। স্বীকার করেছিলেন যে মাজরুহের সান্নিধ্যে নিজের মধ্যে বিশ্বাস জেগে ওঠে তাঁর। এরপরই তিনি সুস্থ হয়ে উঠে গীতিকার হেমন্ত কুমারের সঙ্গে ‘কহিন দীপ জলে কহিন দিল’ সুপারহিট গানটি রেকর্ড করেছিলেন।