স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (swatilekha sengupta)-র অকালপ্রয়াণ যেন এখনও বিশ্বাস করতে চাইছেন না অনেকেই। টলিউড ও ‘নান্দীকার’ হারিয়েছে তার অভিভাবিকাকে। কিন্তু কেমন আছেন তাঁর ছায়া, তাঁর মেয়ে অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত (sohini sengupta)?
সোহিনীর গোটা ঘর জুড়ে মায়ের গন্ধ। মায়ের শাড়িতে তাঁর পরশ পাচ্ছেন সোহিনী। কাল স্বাতীলেখা চলে যাওয়ার পর সোহিনী মাকে দাহ করে, প্রিন্সেপ ঘাটে অস্থি বিসর্জন করে বাড়ি এসেছেন। শূন্যতার মাঝে সারারাত একা একা বসে বৃষ্টি দেখেছেন সোহিনী। স্বাতীলেখা বৃষ্টি ভালোবাসতেন। তাই তাঁর শেষকৃত্যে বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। সোহিনী জানেন, তাঁর চেহারায়, ব্যক্তিত্বে সর্বত্র রয়েছে তাঁর মা স্বাতীলেখার ছায়া। সোহিনীও মায়ের মতোই শক্তিশালী অভিনেত্রী। সোহিনী মায়ের মৃত্যুর পর কান্নার সময়টুকুও পাননি, শুধু বললেন, মা বড্ড কষ্ট পাচ্ছিলেন, সমস্ত যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
মঞ্চ দাপিয়ে অভিনয় করা ‘নান্দীকার’-এর জন্মদাত্রী স্বাতীলেখাকে চিনেছিলেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘ঘরে বাইরে’ স্বাতীলেখার জীবনে একটি মাইলস্টোন। ‘ঘরে বাইরে’-র দৌলতে স্বাতীলেখা আপামর বাঙালির কাছে পরিচিত ‘বিমলা’ নামে। অভিনয় অন্ত প্রাণ স্বাতীলেখা কোনো দিন জানতে দেননি নিজের অসুস্থতা। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন স্বাতীলেখা। মাঝে একবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সোহিনীকে বলেছিলেন, কেউ যাতে জানতে না পারে।
স্বাতীলেখা জীবনকে ইতিবাচক ভাবে দেখতে ভালোবাসতেন। তাই অসুস্থতা নিয়েও ফিরে এসেছিলেন শিবপ্রসাদ (shibaprasad)- নন্দিতা (Nandita) জুটি পরিচালিত ফিল্ম ‘বেলাশেষে’-র মাধ্যমে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (soumitra chatterjee) ও স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (swatilekha sengupta)-র অনস্ক্রিন রসায়ন ছাপিয়ে গিয়েছিল সবাইকে। ‘বেলাশেষে’-র মাধ্যমে স্বাতীলেখা তুলে ধরেছিলেন সংসারে নারীদের অপরিহার্যতার কথা।
মাতৃস্নেহ ছিল স্বাতীলেখার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কৌশিক সেন (koushik sen) যখন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তখন নিজে অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও স্বাতীলেখা নিয়মিত কৌশিক সেন ও তাঁর পরিবারের খোঁজ নিতেন। একজন সহকারী পরিচালক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছেন, নববর্ষ ও জন্মদিনে গ্রিটিংস কার্ড পেলে খুব খুশি হতেন স্বাতীলেখা। কিন্তু 16 ই জুন থেমে গেছে স্বাতীলেখার হৃদস্পন্দন। নশ্বর শরীর ভস্মীভূত হয়ে অস্থি ভেসে গেছে গঙ্গার স্রোতে। ‘বেলাশেষে’ চলে গেছেন স্বাতীলেখা। রেখে গেছেন একরাশ স্মৃতি, সেলুলয়েডে তাঁর আন্তরিক উপস্থিতি। প্রকৃতপক্ষে শিল্পীর মৃত্যু হয় না। তিনি বেঁচে থাকেন তাঁর শিল্পের মধ্য দিয়ে।