মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar) নেই। চলে গিয়েছেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)-ও। শূন্য সিংহাসন পড়ে রয়েছে। রাজমুকুটের নেই উত্তরাধিকারী। কিন্তু তবু বাঙালির চেতনায় অমর হয়ে রয়েছে সেই সাদা-কালো দিনগুলি যা ছিল খুব বেশি করে রঙিন। উত্তম-সুচিত্রার রোম্যান্টিসিজমে ভাসছে বাংলা। প্রেমিক-প্রেমিকাদের আইকন তাঁদের ভালোবাসা, যদিও তা অনস্ক্রিন। এইরকম একটা সময় রিলিজ করেছিল ‘সপ্তপদী’। হিন্দু ব্রাহ্মণ সন্তান কৃষ্ণেন্দুর খ্রীষ্টান মেয়ে রীনা ব্রাউনকে ভালোবেসে ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনা কেড়ে নিয়েছিল বাঙালি দর্শকের মন। এই ফিল্ম প্রমাণ করেছিল মানবিকতা ও ভালোবাসার স্থান ধর্মের উপরে। কিন্তু ‘সপ্তপদী’ ফিল্মটির শুরু থেকেই হয়তো অনেকে আঁচ করেছিলেন এই ফিল্মের সাফল্য। ফলে ‘সপ্তপদী’ নির্মাণের সময় থেকেই এই ফিল্মটির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
‘সপ্তপদী’-র মূল নায়ক ছিল কাহিনী। এই ফিল্ম যেসময় নির্মাণ করা হয়েছিল, সেই সময় বাঙালি তথা ভারতীয় সমাজ ছিল রক্ষণশীল। ভালোবাসাকে ধর্মের উপরে রাখার কথা বাস্তবে ভাবা সম্ভব হলেও কার্যক্ষেত্রে রূপদান সবসময় সম্ভব ছিল না। টলিউডে সেই সময়ের দুই সুপারস্টার উত্তম ও সুচিত্রাকে নিয়ে ‘সপ্তপদী’-র মতো ফিল্ম নির্মাণের ফলে অনেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, যুগ বদলাতে চলেছে। তাঁদের জোলো কাহিনী দেখতে চাইবেন না বাঙালি দর্শক। ফলে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে ‘সপ্তপদী’-কে সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা চলতে থাকে।
View this post on Instagram
ইন্ডাস্ট্রির একাংশ সুচিত্রাকে বোঝাতে থাকেন এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করলে তাঁর ইমেজ নষ্ট হবে। এমনকি উত্তমের অভিনয়ের পাশে তাঁর অভিনয় ম্লান হয়ে যাবে। সুচিত্রাকে বোঝানো হয়, তাঁর চরিত্র গুরুত্বহীন। কিন্তু কেরিয়ারের শুরুতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে রমা থেকে নায়িকা হয়ে ওঠা সুচিত্রা ছিলেন দূরদর্শী ও বুদ্ধিমতী। তিনি স্তাবকদের পাত্তা দেননি। নিজের শর্তে চলা সুচিত্রা তাঁর মনকে উজাড় করে প্রাণদান করেছিলেন রীনা ব্রাউনের চরিত্রে।
‘সপ্তপদী’ তৈরি করে দেয় টলিউডের শেষ না হওয়া পথ। নতুন কাহিনী তৈরির উদ্যোগ সরিয়ে দেয় পুরানো কুসংস্কারকে। অমর হয়ে যায় কৃষ্ণেন্দু ও রীনার ভালোবাসা।
View this post on Instagram