যীশু সেনগুপ্ত (Jissu U Sengupta), নামটির সঙ্গে বর্তমানে জড়িয়ে আছে স্টারডম, ভাগ্যকে জয় করে নেওয়ার গৌরব। কিন্তু একসময় যীশুর চারিদিক এতটাও ঝলমলে ছিল না। শৈশবে ক্রিকেট শিখতে যেতে হত কিন্তু মনের মধ্যে বেড়ে উঠেছিল অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছা। বাবা উজ্জ্বল সেনগুপ্ত (Ujjwal Sengupta) অভিনেতা হলেও পাননি স্টারডম। বাংলা টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি তখন ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে। বাংলা দূরদর্শনে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন স্বাদের টেলিফিল্ম। বিপ্লব ঘটালো ‘জননী’। বাংলা দূরদর্শনের প্রথম মেগা সিরিয়াল যাতে অভিনয় করলেন সুপ্রিয়া দেবী (Supriya Devi)। এরপর থেকেই শুরু হল বাংলা সিরিয়ালের যুগ।
View this post on Instagram
প্রথমদিকে ঘরোয়া সিরিয়াল হত। তার সাথেই যুক্ত হল বিভিন্ন নামী লেখকদের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি সিরিয়াল। বাঙালি মনন অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল তাতেই। কিন্তু হঠাৎই দূরদর্শনে এল ধর্মীয় সিরিয়ালের প্রস্তাবনা। শ্রীচৈতন্য দেবের জীবনকাহিনী নিয়ে তৈরি হবে সিরিয়াল। নতুন মুখ চাই। যীশুর জীবনে তখন নেমে এসেছে দুঃসময়। পিতৃহারা হয়েছেন তিনি। প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটার যীশুর বিলাসিতার সময় নেই তখন। অভাবের সংসারে উপার্জনের রাস্তা খুঁজতে ব্যস্ত তিনি। এইসময় সিরিয়ালের অডিশনের কথা শুনে পা রাখলেন টালিগঞ্জের স্টুডিওয়। সিলেকশন হয়ে গেল মুখ্য চরিত্রে। ক্রিকেট কোচকে বললেন, আর মাঠে নামতে পারবেন না তিনি। কষ্ট পেয়েছিলেন সেই কোচ। কিন্তু পরিবারের মুখের দিকে চেয়ে আর পিছন ফিরে তাকাননি যীশু। আপামর বাঙালির কাছে তাঁর পরিচয় হল ‘মহাপ্রভু’ নামে। ঘরে ঘরে যীশু হয়ে উঠলেন পরিচিত। কিন্তু তাঁর জীবনের রাস্তাটি যে বড্ড পাথুরে।
View this post on Instagram
‘মহাপ্রভু’ শেষ হওয়ার বেশ কিছুদিন পর টলিউডে ‘প্রিয়জন’ নামে একটি ফিল্মের মাধ্যমে বড় পর্দায় ডেবিউ করেন যীশু। এরপর বেশ কয়েকটি বাংলা ফিল্মে অভিনয় করলেও ফ্লপ হয়েছিল সব কটি ফিল্ম। চিত্রনাট্যের দূর্বলতা কেউ দেখেননি। টলিউড যীশুকে দিল ‘অপয়া’ তকমা। তেলেগু ফিল্মেও কাজ করেছিলেন যীশু। সেখানেও সফলতা পাননি। কিন্তু কেউ তাঁকে ‘অপয়া’ বলেননি। অথচ ঘরের মাটিতে অসফলতার যন্ত্রণা কুরে কুরে খাচ্ছিল তাঁকে। হাতে ছিল না একটিও কাজ। তখন নীলাঞ্জনা (Nilanjana Sengupta)-র সঙ্গে সদ্য বিয়ে হয়েছে তাঁর। এত কষ্টেও নীলাঞ্জনা ছেড়ে যাননি যীশুকে। ছায়ার মতো পাশে থেকেছেন।
View this post on Instagram
কিন্তু এখনও যীশুর জীবনাঙ্কের অনেক কিছুই বাকি ছিল। ঋতুপর্ণ ঘোষ (Rituporno Ghosh) আবিষ্কার করলেন যীশুর প্রতিভাকে যা ‘অপয়া’ বলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল টলিউড। মানসিক হতাশার অন্ধকার থেকে ঋতুপর্ণ বার করে নিয়ে এলেন যীশুকে। কিন্তু টলিউডের কয়েকজন ছেড়ে কথা বলার পাত্র নয়। যীশুর সঙ্গে ঋতুপর্ণর সম্পর্ককে তাঁরা আখ্যায়িত করলেন ‘নোংরামি’ বলে। কিন্তু ঋতুপর্ণ কাউকে পাত্তা দিলেন না। যীশুকে নিয়ে তৈরি করলেন একের পর এক ফিল্ম। ছক ভাঙলেন ‘চিত্রাঙ্গদা’-য়। ইন্ডাস্ট্রি চিনল এক নতুন যীশুকে। অপরদিকে যীশু নিজের প্রোডাকশন হাউস তৈরি করলেন, ‘ব্লু ওয়াটার পিকচার্স’। স্টার জলসায় সম্প্রচারিত হতে শুরু করল যীশুর প্রযোজনায় একের পর এক সিরিয়াল। সেগুলিতে ছিল না দুটো বউ, তিনটে বর, কূটকাচালি। সিরিয়ালগুলি ছিল যথেষ্ট বার্তাবাহী। কিন্তু হঠাৎই একটা সকাল যীশুর কাছ থেকে কেড়ে নিল অনেক কিছু।
View this post on Instagram
‘তাসের দেশ’-এ পৌঁছে দেখলেন, শীতল ঘরে চিরঘুমে শায়িত তাঁর বন্ধু ও মেন্টর ঋতুপর্ণ। ঋতুপর্ণর শরীরে অগ্নিসংযোগ হতেই যীশুর মনে হয়েছিল, সব শেষ। আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরল। বাড়িতেই বসে রইলেন যীশু। কিন্তু তিনি জানতেন না, ঘুচে গেছে ‘অপয়া’ তকমা। বাঙালি দর্শকের একটাই প্রশ্ন, কোথায় গেলেন যীশু সেনগুপ্ত! ফোন এল অনুরাগ বসু (Anurag Basu)-র কাছ থেকে। বোধহয় প্রথমে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেননি যীশু। বলিউডের ফিল্মের অফার! ‘বরফি’ সত্যিই যীশুর জীবনে নিয়ে এসেছিল সাফল্যের মিষ্টতা। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি যীশুকে। টলিউড ও বলিউড জুড়ে একের পর এক মাইলস্টোন তৈরি করছেন তিনি। নিজের নামের সঙ্গে যুক্ত করেছেন পিতার নামের আদ্যক্ষর। বর্তমানে সম্পূর্ণ নাম যীশু.ইউ.সেনগুপ্ত।
View this post on Instagram
পঁয়তাল্লিশ বছরে পৌঁছেও তিনি এখনও মহিলাদের হার্টথ্রব, টলিউড ও বলিউডের সফল অভিনেতা। এই মুহূর্তে সবচেয়ে ‘পয়মন্ত’ তিনিই। হার না মানা, লড়াকু যীশুর জন্য ‘হুপহাপ’ (HOOPHAAP)-এর তরফ থেকে রইল একরাশ বাসন্তী শুভেচ্ছা।
View this post on Instagram