বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর হাতে গোনা কয়েকটি মুভি আছে। যার মধ্যে ‘রাজমহল’ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। যারা হিন্দি সিনেমা ‘Bhool Bhulaiyaa’ দেখেছেন তাঁরা রাজমহল গল্পকে মেলাতে পারবেন। কারণ ১৯৯৩ সালের মালায়ালাম ফিল্ম ‘Manichitrathazhu’ থেকেই এই দুই গল্পের উৎপত্তি। বাংলার রাজমহলে দেখা গিয়েছিল অনু চৌধুরীকে যিনি বাংলা সিনেমা থেকে এখন শত ক্রোশ দুরেই রয়েছেন। চুটিয়ে অভিনয় করছেন ওড়িয়া ফিল্মে (Oriya film)।
যখন অনু খুব ছোট ছিলেন তখন শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন দুটি ওড়িয়া ফিল্মে। পরে, মুখ্য অভিনেত্রী হিসাবে তাঁর প্রথম ছবিটি ছিল মা গোজাবায়ানী (Maa Gojabayani) যা ১৯৯৮ সালে দারুণ হিট হয়েছিল। সেইসময় রচনা ব্যানার্জী বেশকিছু ওড়িশ্যা ছবিতে অভিনয় করেন সিদ্ধার্থ মহাপত্র-এর সঙ্গে। কিন্তু রচনা ফিরে আসেন বাংলাতে। বাংলা সিনেমা জগতেই তিনি তাঁর প্রতিভা দেখাতে পেরেছিলেন। কিন্তু অনু চৌধুরী একাই ওড়িয়া ফিল্মে আসর বসালেন। ১৯৯৯ এ নন্দিতা দাসের মতন দক্ষ অভিনেত্রীর সঙ্গে করলেন Biswaprakash (aka The Young Rebel)। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও এই মুভি দেখানো হয় এমনকি রাশিয়াতেও এই মুভি দেখানো হয়। এর থেকেও বড় ব্যপার হল এই মুভিটি আঞ্চলিক বিভাগের সেরা চলচ্চিত্র হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছে।
২০০৪ এ বাংলায় প্রবেশ অনু চৌধুরীর। হরনাথ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ও প্রসেনজিৎ এর বিপরীতে থেকে করলেন ‘সূর্য’ (Surya)। সেইসময় মুভিটি হিট হয়। সেই বছরেই করেন আরও একটি বাংলা বই ‘দাদার আদেশ’। এখনো এই দাদার আদেশ হিট মুভির তালিকায় রয়েছে। এই সিনেমাতেও প্রসেনজিৎ এর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করেছেন তিনি। এবার ২০০৫ এর পালা। এই বছরেও দুটি হিট মুভি করেন অনু। একটি ‘রাজমহল’ অপরটি ‘রাম লক্ষ্মণ’ (Ram Laxman)। এরপর ২০০৬ এ দুটি মুভি পরপর করেন অনু। এই দুটি মুভিতেই ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। ফিল্ম ‘অভিমন্যু’ (Abhimanyu) তে ছিলেন মিঠুন, দেবশ্রী, তাপস পাল। অন্যদিকে ফিল্ম ‘হাঙ্গামা’ (Hungama) তে ছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী সহ ঋতুপর্ণা, যীশু। আবারও ২০০৭ এ অনু অভিনয় করলেন ‘কালীশঙ্কর’ ও ‘মহাগুরু’ তে। দুটিই হিট। কিন্তু ২০১১ র পর তাঁকে আর কোন উল্লেখযোগ্য বাংলা মুভিতে দেখা যায়নি। হিন্দি, ওড়িয়া ফিল্ম ছাড়া বাংলা ইন্ডাস্ট্রির পথ যেন তাঁর কাছে অতীত। অনু যখনই মুভি করেছেন তখনই তাঁর বিপরীতে ছিলেন টলি পাড়ার তাবড় তাবড় অভিনেতারা, এরপরেও টলিউড থেকে কেন দূরে সরে গেলেন সেই কারণ অজানা।
‘আমি আছি সেই যে তোমার’ (Aami Aachi Sei Je Tomar) এর পর অনু চৌধুরী বাংলা থেকে গায়েব। অবশ্য তিনি যে শুধু সিনেমা জগতের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছেন তা নয়। অনু একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সামাজিক কর্মীও। বাচ্চাদের জন্য কাজ করেছেন এমনকি এইডস এর মতন মারণ রোগের লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। যেইসব বাচ্চারা এইডসের সঙ্গে লড়াই করছেন তাঁদের জন্য অনুও লড়ছেন। উল্লেখযোগ্য ব্যপার হল যে এই অভিনেত্রী অনু ইউনিসেফের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে কাজ করেছেন। সম্প্রতি, অনু চৌধুরীকে জনসচেতনতা প্রচারের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে, রাজ্যের সমস্ত বৈদ্যুতিক বিতরণ ইউটিলিটি, সিইএসইউ, নেসকো, ওয়েসকো এবং সাউথকো এবং সিইএসইউ অঞ্চলে কর্মরত সমস্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিদের পক্ষে “বিজুলি দিদি” ব্রান্ড। ওড়িশা বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের একটি অনুষ্ঠানে ‘বিজুলি দিদি’ ব্র্যান্ডটি উন্মোচন করা হয়েছিল। এখানে অনু সহজ তথ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন যা লোককে ইলেক্ট্রিসিটি সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও, ১ নভেম্বর ২০১৩-এ অনু চৌধুরীকে টিচএইডস (TeachAIDS)-এর অংশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়, এটি একটি এনজিও যা এইচআইভি প্রতিরোধ শিক্ষা প্রযুক্তি উপকরণ বিকাশ করে। নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছেন সামাজিক কল্যানের কথা মাথায় রেখে, তবে কি এইসবের জন্য অনুকে বাংলা সিনেমা জগতে আর দেখা যায় না? নাকি অন্য কোন অজানা কারণ আছে?
View this post on Instagram