Hoop PlusTollywood

Kali Banerjee: অভিনয় করতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছিল কিংবদন্তী কালী বন্দ্যোপাধ্যায়ের!

বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেতা কালী বন্দ্যোপাধ্যায় (Kali Banerjee) নিজেই ইতিহাসের সোনার কালিতে লেখা পাতা। কালীবাবুর জন্ম কলকাতার কালীঘাটে, 1920 সালের 20 শে নভেম্বর। তাঁর যখন দশ বছর বয়স তখন তাঁর বাবা মণীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার লেক মার্কেট অঞ্চলে একটি বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। তিনি ছিলেন পেশায় আইনজীবি। কালীবাবুর ঠাকুর্দা ব্রিটিশ পুলিশের অধীনে চাকরি করতেন। ফলে বাড়িতে সবসময়ই বইত কঠোর নিয়মানুবর্তিতার হাওয়া। কালীবাবুর মা ভবানী দেবীও পছন্দ করতেন নিয়মানুবর্তিতা। কালীবাবুরা ছিলেন ছয় ভাই ও পাঁচ বোন। সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি বাবার তীক্ষ্ণ লক্ষ্য ছিল। লন্ডন মিশনারি থেকে প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনার পর সত্যভামা ইনস্টিটিউশন থেকে কালীবাবু ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।

শৈশব থেকেই খেলাধূলার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। বড় হয়ে খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখা কালীবাবু লুকিয়ে খেলতে গিয়ে প্রাইজ জিতে এসেও বাবার হাতে মার খেয়েছেন। 1939 সালে রিপন কলেজে ভর্তি হয়ে পাল্টে যায় তাঁর স্বপ্ন। কালীবাবু ঠিক করেন, পালি ভাষা শিখে গবেষণা করবেন। কিন্তু সব কিছু বদলে গেল মাসির বাড়ি বাগবাজার যাতায়াত করার ফলে। পুজোর সময় বাগবাজার, শোভাবাজার ও কুমোরটুলি অঞ্চলে যাত্রা হত। পরিবারের সাথে যাত্রা দেখতে গিয়ে কালীবাবুর মনে হত, অন্য কোনো জগতে এসে পড়েছেন। তাঁকে টানত মঞ্চ, ঝলমলে পোশাক, এক অন্য চরিত্র। স্কুলে পড়াশোনার সময় নাটক করেছিলেন। সেই সময় ‘কেদার রায়’ নাটকে কার্ভালোর চরিত্রে অভিনয় করে প্রথম রজনীতেই পুরস্কার পেয়েছিলেন কালীবাবু। যাত্রা তাঁকে নিজের ইচ্ছার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল।

1946 সালে দাঙ্গার আঁচ এসে পড়া কলকাতার বুকে কালীবাবুর কাছে এল ‘বার্মার পথে’-এ প্রস্তাব। তবে 1940 সালেই কিন্তু ‘তটিনীর বিচার’-এ অভিনয় করেছেন তিনি। কালীবাবু ছিলেন খামখেয়ালি। একরকম জেদের বশেই অভিনয় করতে শুরু করলেন। কিন্তু 1952 সাল থেকে অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বেছে নিলেন কালীবাবু। কারণ আর্থিক অনটন ও কন্যাসন্তান তাপসীর জন্ম। তার আগে কয়েক বছর তাঁর যা ইচ্ছা হয়েছে, সেই পথেই জীবনকে চালিত করেছেন। কখনও যোগ দিয়েছেন গণনাট্যের দলে, কখনও করেছেন থিয়েটারে অভিনয়। কখনও বা রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছেন। কিন্তু সেই কালীবাবুই অস্তিত্ব রক্ষা করতে বেছে নিলেন অভিনয়কে। একে, পর এক বাংলা ও হিন্দি ফিল্মে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। একই মানুষ ‘অযান্ত্রিক’-এর গাড়ির চালক, অপরদিকে ‘নীল আকাশের নিচে’-র চীনা ফেরিওয়ালা। জীবদ্দশায় দেড়শোটি সিনেমা ও একত্রিশটি নাটকে অভিনয় করেছেন কালীবাবু।

কিন্তু মহানায়ক উত্তম কুমার (Uttam Kumar)-এর মৃত্যুর পর ক্রমশ বদলাতে শুরু করেছিল বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কালীবাবুর হাতেও কাজ কমতে থাকল। উপরন্তু মারাত্মক জনপ্রিয়তার ফলে কালীবাবূ নিজেও তাঁর পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এক-একটি ছবি পিছু ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা পারিশ্রমিক চাইতে শুরু করেছিলেন তিনি। এই পারিশ্রমিকের অঙ্ক উত্তম কুমারের পারিশ্রমিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। ধীরে ধীরে প্রযোজকরা সরে যেতে শুরু করলেন কালীবাবুর পাশ থেকে। সেই সময় দর্শকদের চাহিদা বদলাচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিতে আসতে শুরু করেছে নতুন ধরনের চিত্রনাট্য, আসছেন নতুন অভিনেতারা। ফলে দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম শুরু হল কালীবাবুর।

তাঁর দুঃসময়ে পাশে এসে দাঁড়ালেন অঞ্জন চৌধুরী (Anjan Chowdhury)। অন্নসংস্থানের জন্য তাঁর পরিচালনায় ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘ছোট বৌ’-এর মতো বাণিজ্যিক ফিল্মে কাজ করতে শুরু করলেন কালীবাবু। তা ছাড়া তাঁর কাছে উপায় ছিল না। নিজে সারাজীবনে কত রোজগার করেছেন তা খেয়াল রাখেননি। সংসারেও বাড়ির ভাগ নিয়ে অশান্তি চলছিল। কিন্তু বাণিজ্যিক ফিল্মেও বাজিমাত করেছিলেন কালীবাবু। তবে বয়সের কারণে স্মৃতিভ্রংশ হত মাঝে মাঝে। ফলে ডায়লগ ভুলে যেতেন। থিয়েটারের মঞ্চে একবার এই ঘটনা ঘটায় ওই থিয়েটারের পরিচালক কালীবাবুর পকেটে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বলেছিলেন, পরের বার আসতে হলে যেন সংলাপ মুখস্থ করে আসেন তিনি। থিয়েটারের মঞ্চ সেদিন অপমান করেছিল বাংলার সর্বকালের সেরা অভিনেতাকে। অনেক না-পাওয়া নিয়ে চলে গেলেন কালীবাবু। কিন্তু সেই মর্মান্তিক মৃত্যুও ঘটেছিল অভিনয়ের টানেই। বাংলা ফিল্ম ‘তান্ত্রিক’-এ অভিনয়ের সময় রেইন মেশিনের বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ ভিজতে হয়েছিল তাঁকে। ফলে আক্রান্ত হয়েছিলেন ব্রঙ্কো-নিউমোনিয়ায়। হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। 1993 সালের 5 ই জুলাই নক্ষত্রপতন হল, চলে গেলেন কালীবাবু।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Priya (@bollywoodtriviapc)

whatsapp logo