15 ই ফেব্রুয়ারি অস্তরাগে গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। নব্বই বছর বয়সে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে প্রয়াত হলেন সন্ধ্যা। হাসপাতালের রেকর্ডে নাম ছিল মিসেস সন্ধ্যা গুপ্ত। একসময়ের নামী সুরকার-গীতিকার শ্যামল গুপ্ত (Shyamal Gupta)-কে বিয়ে করেছিলেন সন্ধ্যা। সেই সূত্রে অফিশিয়ালি স্বামীর পদবী গ্রহণ করে সন্ধ্যা গুপ্ত হলেও সঙ্গীতজগতে তিনি ব্যবহার করতেন পিতৃদত্ত ‘মুখোপাধ্যায়’ পদবী।
View this post on Instagram
কিন্তু সত্যিই কি সুখী ছিলেন সন্ধ্যা? বিয়েটা ছিল অসবর্ণ। তৎকালীন যুগে বাঙালি ব্রাহ্মণ মুখোপাধ্যায় পরিবারের কন্যা সন্ধ্যা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন গুপ্ত পরিবারের ছেলে শ্যামল গুপ্তকে। বিয়ে হয়েছিল বহুদিন অপেক্ষার পর। সন্ধ্যার পরিবার প্রথমে এই বিয়েতে রাজি না থাকলেও পরবর্তীকালে সন্ধ্যার জেদের কাছে হার মেনেছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর যেন সন্ধ্যার পায়ে ছিল অদৃশ্য শিকল। শ্যামল গুপ্তর তুলনায় সন্ধ্যার স্টারডম ছিল বেশি। কিন্তু তৎকালীন যুগের ট্র্যাডিশন মেয়েদের আবদ্ধ করেছিল সুগৃহিণী, লক্ষ্মীমন্ত মেয়ের তকমায়। ফলে মেয়েরা কেরিয়ারের ক্ষেত্রে নামী হলেও তাঁরা অনুভব করতেন না। আর পাঁচজন মেয়ের মতোই বিয়ে, সংসার, সন্তান নিয়ে তাঁরাও ভাবতে শিখেছিলেন। সন্ধ্যাও ব্যতিক্রম ছিলেন না।
View this post on Instagram
বিয়ের আগে সঙ্গীত তারকা সন্ধ্যাকে তাঁর স্বামী শ্যামল বলেছিলেন, তিনি যত নামী তারকাই হোন, তাঁকে স্বামীর একতলা বাড়িতেই থাকতে হবে। মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন সন্ধ্যা। কোথাও কি বিয়ের আগে থেকেই শ্যামলের মধ্যে কাজ করেছিল নিরাপত্তার অভাব? কারণ সুরকার ও গীতিকারদের নাগালে পেতেন না সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিভিন্ন ফাংশনে দেখা যেত গায়ক-গায়িকা, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। সন্ধ্যার ফাংশন দেখতে উপচে পড়া ভিড় বোধ হয় শ্যামলের মধ্যে তৈরি করেছিল ‘মেল ইগো’। তাতে আরও ইন্ধন যুগিয়েছিল সন্ধ্যার প্রতিবাদহীনতা। নির্বিবাদী মানুষ ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা ছিলেন নার্ভাস। হয়তো ভেবেছিলেন, প্রতিবাদ করলে যদি হারিয়ে ফেলেন শ্যামলকে! হয়তো ভয় পেতেন বিবাহ বিচ্ছেদকে!
গায়ক সৈকত মিত্র (Saikat Mitra) তাঁর শৈশব থেকেই চেনেন সন্ধ্যাকে। বিখ্যাত গায়ক শ্যামল মিত্র (Shyamal Mitra)-কে সন্ধ্যা নিজের দাদার মতোই দেখতেন। সেই সূত্রেই ছিলেন সৈকতের সন্ধ্যাপিসি। বিভিন্ন সময় নানা দরকারে সৈকত যেতেন সন্ধ্যার বাড়ি। ঘন্টাখানেক ধরে তাঁর স্বামী শ্যামলের সাথে গল্প করতেন। সন্ধ্যা বাড়ির ভিতরে থাকতেন। কখনও খুব দরকার হলে শ্যামল ডেকে পাঠাতেন সন্ধ্যাকে। সেই সময় সন্ধ্যা এলেও কিছুক্ষণের জন্য কথা বলে চলে যেতেন। কিন্তু কখনও নিজের পারিবারিক জীবনের কথা তিনি প্রকাশ করেননি জনসমক্ষে। শ্যামলের জীবন সায়াহ্নে, তাঁর অসুস্থতার সময় পাশে থেকেছেন সন্ধ্যা। তাতে তাঁর কেরিয়ারের ক্ষতি হলেও কখনও মুখ ফুটে কিছু বলেননি। আসলে ধাত ছিল নমনীয়। তাই অভিযোগ করতেন না, মেনে নিতেন। বহু না বলা কথা হৃদয়ে নিয়ে গীতশ্রী পাড়ি দিয়েছেন সুরলোকে। আজ তিনি বন্ধনহীন, কেউ পারবে না তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে।
View this post on Instagram