Hoop PlusTollywood

Suchitra-Dibanath: বরাবরই স্বামী ছিলেন প্রচারের আড়ালে, কেমন ছিল দিবানাথের সঙ্গে সুচিত্রার সম্পর্ক!

বহু বছর কেটে গেছে। তবু আজও বেদান্ত অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে গেলে চোখ অজান্তেই চলে যায় বিশেষ একটি ফ্লোরের দিকে। মহানায়িকা সশরীরে না থাকুন, কিন্তু তবু তিনি আছেন। সুচিত্রা সেন (Suchitra Sen)। অন্তরালে চলে যাওয়ার এতগুলি বছর পরেও টলিউডে যাঁর সিংহাসন অম্লান। তিনিই না থেকেও এখনও অবধি মুকুটহীন রানী।

কিন্তু পাবনার কিশোরী রমা কি কখনও ভাবতে পেরেছিল, সে বায়োস্কোপের নায়িকা হবে? দেশভাগ নিয়ে উত্তাল বাংলার পরিস্থিতি রমা দাশগুপ্তকে এনে ফেলেছিল কলকাতায়। মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ের রূপের জোরে বিয়ে হয়েছিল শিল্পপতি আদিনাথ সেন (Adinath Sen)-এর পুত্র দিবানাথ সেন (Dibanath Sen)-এর সাথে। বিলেত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথকে পাত্র হিসাবে পেয়ে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন রমার পরিবার। কিন্তু রমা কি খুশি হয়েছিল? কেউ কোনোদিন জানতে চায়নি, নারী কি চায়! রমার ক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি। বাড়ির বৌ রমা চেয়েছিল সংসার করতে। বিয়ের এক বছর পরে জন্ম হল সন্তানের। কিন্তু বাঁচেনি সে। উচ্চবিত্ত পরিবার হলেও রমাকেই দুষল সবাই। অপরদিকে পরিবারে শো-অফ সচেতনতার নেপথ্যের রূপ অন্য। বেশ কয়েকটি জায়গায় দেনা। দিবানাথের মনে হল, ঘরে সুন্দরী বৌ আছে কি করতে! দিবানাথ রমাকে নিয়ে গেলেন স্টুডিওপাড়ায়।

কিন্তু বাড়ির বৌ রমা, তার মতামত জানার প্রয়োজন ছিল না দিবানাথের। জুনিয়র আর্টিস্টৈর চরিত্রে অভিনয় করে যা অর্থ পেত, সবকিছুই নিয়ে নিতেন দিবানাথ। তবু হাসিমুখে থাকা স্বামীর পাশে। কেউ বোঝে না রমার গুমরে গুমরে কান্না। শ্বশুরমশাই আদিনাথের আত্মীয়ের মাধ্যমে একটি ফিল্মে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করলেও মুক্তি পেল না সেই ফিল্ম। ইতিমধ্যেই জন্ম হয়েছে কন্যাসন্তানের। ফুটফুটে সেই মেয়ের নাম শ্রীমতি। ডাকনাম মুনমুন। সেও যে চাঁদের মতোই স্নিগ্ধ। অপরদিকে দিবানাথের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইদানিং পরিচালকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ নিয়ে ফেলছেন দিবানাথ। ফলে রমাকে সেই ফিল্মে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অভিনয় করতে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় (Nitish Ray)নাম দিলেন ‘সুচিত্রা’। নাম পরিবর্তনের সাথেই যেন নবজন্ম হল রমার। সেই রাতে ঘুম ঘুম চাঁদের দিকে অশ্রুপূর্ণ চোখে হয়তো চেয়েছিল রমা। মৃত্যু হয়েছিল বাড়ির বৌয়ের। জন্ম হল আলো ছড়ানো মহানায়িকা সুচিত্রা সেন-এর।

দিবানাথ হয়তো এতটাও আশা করেননি। ভেবেছিলেন, স্ত্রী হয়ে থাকবে হাতের পুতুল। তাই সুপারস্টার হওয়ার পরেও বহুদিন পর্যন্ত দিবানাথ সুচিত্রার পারিশ্রমিকের অধিকাংশ অর্থ নিয়ে নিতেন। সুচিত্রার ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছিল।

উত্তমকুমার (Uttam Kumar)-সুচিত্রা সেন তখন হিট জুটি। দিবানাথ ক্রমশ সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়লেন। পাল্লা দিয়ে বাড়ল মদ্যপান। এক সন্ধ্যায় সুচিত্রার বালিগঞ্জের বাড়িতে পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন উত্তম। ছিলেন দিবানাথও। অতিথিদের অনুরোধে উত্তম ও সুচিত্রা ডুয়েট নাচতে শুরু করেন। সহ্য করতে পারলেন না দিবানাথ। উত্তমকে তাড়া করলেন ছুরি নিয়ে। শেষ অবধি উত্তমকে রক্ষা করেছিলেন গৌরী দেবী (Gauri Debi)।

হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে গেছেন সুপারস্টার স্ত্রী সুচিত্রা। ক্রমশ হয়ে উঠেছেন স্টাইলিশ। স্মোক করা শুরু করেছেন। নিজের সবকিছুই নিজে বুঝে নিচ্ছেন। আগের তুলনায় সুচিত্রা যেন আরও বেশি রূপসী। দিবানাথ যেন তাঁর পাশে বুড়িয়ে যাচ্ছেন। অসহ্য হয়ে উঠছিল সব কিছু। দিবানাথ সহ্য করতে পারছিলেন না সুচিত্রার স্বাধীনচেতা মনোভাব। উপরন্তু তখন তাঁর একটাই পরিচয় ‘সুচিত্রা সেনের স্বামী’। দিবানাথের চালে ভুল হয়ে গেছে। ‘মেল ইগো’ আঘাত পেল। চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন দিবানাথ। অ্যাসিড ছুঁড়েছিলেন সুচিত্রার দিকে। একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন সুচিত্রা। কিন্তু মুখে অ্যাসিডের ছিটেফোঁটা এসে পড়ায় পরবর্তীকালে দেখা দিয়েছিল বিকৃতি।

সেদিন মুনমুনের হাত ধরে সংসার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সুচিত্রা। একাই থাকতে শুরু করেছিলেন একটি প্রাসাদোপম বাড়িতে যা পরে তিনি বিক্রি করে দেন। বাড়িটি ভেঙে তৈরি হয় বেদান্ত অ্যাপার্টমেন্ট। সুচিত্রার জীবনের সূর্যাস্ত সেখানেই কেটেছে। একই অ্যাপার্টমেন্টে সপরিবারে থাকতেন মুনমুন।

অল্প বয়সে প্রয়াত হয়েছিলেন দিবানাথ। শুটিংয়ের মাঝেই স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পান সুচিত্রা। একাই মুছে ফেলেছিলেন সধবার চিহ্ন। আসলে একটু শান্তি চেয়েছিলেন সুচিত্রা। ফিল্মে আসতে চাননি। কিন্তু অর্থাভাবে স্বামী জোর করে নিয়ে এসেছিলেন ফিল্মে। নায়িকা হয়ে যখন নিজে একটু ভালো থাকতে চেয়েছিলেন, তখন সন্দেহ ও অত্যাচার সুচিত্রার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে পছন্দ করতেন সুচিত্রা। কিন্তু দিবানাথের অত্যাচার তা জনসমক্ষে এনে দিয়েছিল। তাই শান্তি খুঁজেছিলেন তাঁর গুরু ভরত মহারাজের পাদপদ্মে। সুচিত্রা শিশুর মতো কেঁদেছিলেন ভরত মহারাজের পায়ে মাথা রেখে। মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও এক রাতে মন টেনেছিল। গিয়েছিলেন বেলুড় মঠ। কিন্তু রক্ষী চিনতে পারেননি সুচিত্রা সেনকে। তাই বেলুড় মঠের দরজা খোলেনি।

লেখাটি হয়তো অত্যন্ত বিতর্কিত লাগতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, একবিংশ শতকেও মহিলাদের ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স-এর ব্যাপারে মুখ খুলতে শেখানো হয় না। কেউ যদি মুখ খোলেন, তাহলে তাঁর বয়ান মিথ্যা প্রমাণিত করতে সমাজ উঠে-পড়ে লাগে। এই কারণেই সুচিত্রা মুখ খোলেননি। সমস্ত বিতর্ককে হৃদয়ে নিয়ে চলে গিয়েছেন চিরকালের মতো।

whatsapp logo