আশা ভোঁসলে (Asha Bhonsle) কিংবদন্তী গায়িকাদের মধ্যে অন্যতম যিনি লহমায় বদলে দিয়েছিলেন বলিউডের গায়কী। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ভরা বিতর্কে। লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar) তাঁর দিদি। দিদিকে একরকম ভুল বুঝেই আশা নিজের জীবন বিতর্কিত করে ফেলেছিলেন। পিতৃহারা হওয়ার পর লতা একরকম একা হাতেই সামলেছিলেন সংসারকে। পরিবারের অন্ন সংস্থানের জন্য প্রথমে অভিনয় ও পরে সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন লতা। কিন্তু সুরেলা ছিল আশার কন্ঠ। তবে লতার গায়কীতেই বুঁদ ছিল ইন্ডাস্ট্রি। ফলে আশা সুযোগ পাচ্ছিলেন না। অপরদিকে লতা কোনোদিনই সুপারিশের পক্ষপাতী ছিলেন না। তিনি কোনোদিন আশার জন্য কোনো সুরকারের কাছে যাননি। ফলে আশার অভিমান হয়েছিল লতার উপর।
View this post on Instagram
লতার সেক্রেটারি গণপত রাও ভোঁসলে (Ganpat Rao Bhonsle) তাঁর কাজ ও শোয়ের দিক দেখতেন। আশার ধারণা ছিল গণপত লতার জন্য কাজ যোগাড় করে আনতেন। ফলে আশা হয়ে উঠলেন বেপরোয়া। একত্রিশ বছরের বড় গণপতকে আচমকাই পালিয়ে বিয়ে করে নিলেন আশা। কিন্তু গণপত আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন। এমনকি তাঁর সন্তান ছিল। আশা কিন্তু সবকিছু জেনেশুনেই বিয়ে করেছিলেন শুধুমাত্র কাজের সুযোগ পেতে। লতা মেনে নিতে পারেননি এই ঘটনা। তিনি গণপতকে সেক্রেটারির পদ থেকে বরখাস্ত করেন। আশার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। অপরদিকে আশা গণপতকে বিয়ে করার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই তিন সন্তানের জন্ম দেন। দ্বিতীয় স্ত্রী আশাকে দিনের পর দিন শুধুমাত্র ব্যবহার করেছেন গণপত।
View this post on Instagram
অনেকেই মনে করেন, গণপতের কারণেই আশা গায়িকা হতে পেরেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে, বিয়ের প্রথম কয়েক বছর গণপত আশাকে বাড়ির বাইরে বেরোতে দিতেন না। অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিলেন তিনি। আশা শুধুমাত্র ঘরের কাজ করতেন। গানের রেওয়াজ ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু লতার সেক্রেটারির পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তাঁর সাথে আশার বিয়ের কাহিনী ছড়িয়ে পড়েছিল ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে। বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সমর্থন ছিল লতার দিকে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন গণপত। অবশেষে আশার দ্বারস্থ হন তিনি। সংসার চালানোর জন্য আশা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ খুঁজতে শুরু করেন। গণপত স্ত্রীর জন্য সুপারিশ করতে শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে কাজ পেতে শুরু করেন আশা। কখনও সখনও আশার মনে হত, সংসার টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কারণ কাজ থেকে অবসর পেতেন না তিনি। অথবা বলা ভালো, গণপত অবসর দিতেন না।
View this post on Instagram
স্ত্রী তাঁর কাছে অর্থ উপার্জনের মেশিন হয়ে উঠেছিলেন। কখনও সহ্য করতে না পেরে আশা ছেলেমেয়েদের নিয়ে চলে যেতেন মায়ের কাছে। কিন্তু সেখানে বেশি দিন থাকতে পারতেন না। কারণ এই ঘর তিনি নিজেই ছেড়ে এসেছিলেন এবং তাও পরিবারের অমতে। সাম্প্রতিক কালে আধ্যাত্মিক গুরু রবি শঙ্কর (Ravi Shankar)-এর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে আশা জানান, দাম্পত্যের হাজার সমস্যা সত্ত্বেও তিনি কোনোদিনই ডিভোর্স ফাইল করেননি। নব্বই বছর বয়সী গায়িকা ইদানিং বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়ার ফলে বিস্মিত। এই সাক্ষাৎকারটি যথেষ্ট বিতর্কিত। কারণ শুধুমাত্র বিবাহ বিচ্ছেদ নয়, আশা মনে করেন, ইদানিং মেয়েরা সন্তানের মা হতে চান না। তাঁরা সন্তানদের বোঝা মনে করেন। রবি শঙ্করের মতে, বর্তমান প্রজন্ম আকর্ষণকে ভালোবাসা বলে ভুল করে। সংবেদনশীল নয় তারা।
View this post on Instagram
তৃতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর আশা পাকাপাকি ভাবে গণপতকে ছেড়ে চলে এসেছিলেন। এই ঘটনার ছয় বছর পর প্রয়াত হন গণপত। প্রকৃতপক্ষে, আশা আইনত বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেননি। কারণ তাঁর সাথে গণপতের বিয়ে আইনত বৈধ ছিল না। কিন্তু রবি শঙ্করের সাথে আলাপচারিতায় আশা এই কথা জানাননি। তৃতীয় বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার কারণেই মূলতঃ গণপতকে ছেড়ে চলে এসেছিলেন আশা। কারণ গণপত সন্দেহ করেছিলেন আশার সতীত্ব ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে। কিন্তু আশার কাছে একসময় তাঁর সন্তানরাই বোঝা হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ একমাত্র কন্যা বর্ষা (Barsha Bhonsle)-র পাশে যদি আশা থাকতেন, তাঁর সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন, তাহলে হয়তো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতেন না আশা। আশার জন্মদিনের পার্টিতে তাঁর মেয়ে ব্রাত্য থাকতেন।
View this post on Instagram
1980 সালে সুরকার রাহুল দেব বর্মন (R.D. Barman)-কে বিয়ে করেছিলেন আশা। বর্মন পরিবারের অমতে হয়েছিল এই বিয়ে। কিন্তু একসময় আর.ডি. যখন আশার পরিবর্তে অন্য গায়িকাদের প্লে ব্যাকের সুযোগ দিতেন, আশা তাঁকে ছেড়ে চলে যান। এমনকি আর.ডি.-র প্রয়াণের পর তাঁর মা মীরা (Meera)-কে আশা রেখে এসেছিলেন বৃদ্ধাশ্রমে। কোনোদিনই খবর নিতেন না শাশুড়ির। কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন মীরা। সত্যিই কি আশা নিজে সংবেদনশীল ছিলেন? তিনি কি ব্যবহার করেননি আশপাশের সম্পর্কগুলিকে?
View this post on Instagram