ওটিটির উপর দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নজর ছিল। এর আগেও বারবার ওটিটিতে দেখানো কন্টেন্ট নিয়ে আপত্তি উঠেছে। ফলে আটকে রয়েছে ‘তান্ডব’-এর দ্বিতীয় সিজন সহ আরও কয়েকটি ওয়েব সিরিজের মুক্তি। সাধারণতঃ প্রেক্ষাগৃহ ও টেলিভিশনের তুলনায় ওটিটির সংজ্ঞা অনেকটাই আলাদা। ফলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে সাধারণতঃ আনসেন্সরড ভার্সন মুক্তি পায়। নগ্নতা, যৌন দৃশ্য, খারাপ ভাষার সতর্কীকরণ ওয়েব সিরিজগুলির প্রারম্ভেই জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার যথেষ্ট অপব্যবহার হচ্ছে। ফলে তা নিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক।
গত 20 শে জুন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক আয়োজিত একটি আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও, ডিজনি প্লাস হটস্টার, নেটফ্লিক্স, রিলায়েন্স ব্রডকাস্ট ইউনিট, ভায়াকম 18 ও অ্যাপল টিভির প্রতিনিধিরা। কিন্তু প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল সংবাদমাধ্যমের। সরকারী সূত্র প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী এদিন ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে বিশেষ নির্দেশিকা। এই নির্দেশিকায় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সংস্থার তরফে নিজস্ব কন্টেন্টগুলির রিভিউ করে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে। কিন্তু ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি এই নির্দেশিকা মানতে নারাজ।
View this post on Instagram
সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিতে যে ধরনের অশ্লীলতা, নগ্নতা ও হিংসা তুলে ধরা হচ্ছে তা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে। সংসদের সদস্যদের তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে। কেন্দ্রের তরফে তৈরি নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে কোনো ওটিটি কন্টেন্টের শুরুতে তামাক সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বার্তা থাকবে যাতে রাজি নয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির প্রতিনিধিরা। এর আগেও ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির কন্টেন্টের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে দুই বছর আগে সরকারের তরফে এক স্বশাসিত সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওটিটির কন্টেন্টের আপত্তিকর দিক খতিয়ে দেখার দায়িত্ব এই সংস্থাটিকে দেওয়ার পরেও তা পালিত হয়নি। ফলে বর্তমানে কেন্দ্র চাইছে স্ব-নিয়ন্ত্রণ।
View this post on Instagram
চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর (Anurag Thakur) জানিয়েছিলেন, ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ক্রমবর্ধমান আপত্তিকর ও অশালীন বিষয়বস্তুর ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট পরিমাণে অভিযোগ জমা পড়ছে। ওটিটি সৃজনশীলতাকে স্বাধীনতা দেয়, অশ্লীলতাকে নয়। কিন্তু সৃজনশীলতার নামে অশালীনতা মেনে নিতে নারাজ অনুরাগ। ফলে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
অপরদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির তরফে জানানো হয়েছে, অভিভাবকদের হাতে যাতে নিয়ন্ত্রণ থাকে, সেই বিষয়ে অ্যাপগুলি যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে চলেছে। আন্তর্জাতিক কন্টেন্টের ক্ষেত্রেও অবলম্বন করা হবে বিশেষ সতর্কতা। কিন্তু সরকারের নির্দেশিকার ফলে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করছে ওটিটিগুলি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, যদি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিজেদের কন্টেন্ট রিভিউ করার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তাহলে সত্যিই কি নিজেদের ব্যবসার খাতিরে তারা তা পালন করবে? উপরন্তু ওটিটির তরফে অভিভাবকদের সতর্কতার দিকে দৃষ্টি কি করে রাখা সম্ভব? কারণ রিমোট তো রোবোট নয় যে সরাসরি ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির প্রতিনিধিদের বলে দিতে পারবে, আঠারো বছরের নিচে কেউ ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলির কন্টেন্ট দেখছে! উপরন্তু সরকার আদৌ ওটিটির কন্টেন্টের বিষয়ে কতটা সচেতন হবে নাকি মিটিংটি লোকসভা নির্বাচনের আগে শুধুই আইওয়াশ ছিল? কারণ ওটিটির প্রতি অধিক কড়া হলে সরকারের রাজস্বের একটি বড় অংশের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
View this post on Instagram