Viral Nandini: রাণু মন্ডলের মতো অবস্থা হবে নাতো! কান্নায় ভেঙে পড়লেন নন্দিনী
কখনও কখনও খ্যাতি হয়ে ওঠে বিড়ম্বনা। বিশেষতঃ মহিলাদের ক্ষেত্রে। কোনো মহিলা যখন সমাজের কাছে নত হন, তখন তাঁকে সকলে সহানুভূতির চোখে দেখেন, বিভিন্ন উপদেশ দেন। কিন্তু যদি কোনো মহিলা একবিংশ শতকেও মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান, তখন সমাজবদ্ধ কিছু মানুষের চোখে তার তুলনায় বড় অপরাধ আর কিছুই হয় না। এমনটাই হয়েছে নন্দিনী গাঙ্গুলী (Nandini Ganguly)-র ক্ষেত্রে। প্রকৃত নাম মমতা হলেও বর্তমানে ডাকনাম নন্দিনী নামেই পরিচিত তিনি। ইতিমধ্যেই বহু মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ইউটিউবার ও ফুড ভ্লগারদের দৌলতে। প্রায়ই ইউটিউবে দেখা যায়, নন্দিনীদিদির হাতের রান্না পাত পেড়ে খাচ্ছেন তাঁরা এবং তাও তাঁর হোটেলে বসে।
ডালহৌসি অঞ্চলের তিন নম্বর কয়লাঘাট এলাকার ফুটপাতে রয়েছে নন্দিনীর ভাতের হোটেল। মাথার উপর ত্রিপল দিয়ে ঢাকা সেই হোটেল। সারিবদ্ধ চেয়ার-টেবিল পাতা। নন্দিনীর সাথে এই হোটেলে কাজ করেন তাঁর মা-বাবাও। জিনস-টপ পরা নন্দিনী নিজে হাতেই পরিবেশন করেন দৈনন্দিন খাবার। গুজরাটে একটি হোটেলের শেফ ছিলেন নন্দিনী। তবে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ে সেই হোটেলের শেফ হননি তিনি। কর্ম দক্ষতায় চাকরি যোগাড় করেছিলেন নন্দিনী। করোনা অতিমারীর সময় সেই চাকরির মাইনেতে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে কলকাতায় ফিরে আসেন নন্দিনী। সেই সময় বাড়ি ফিরে তিনি জানতে পারেন, তাঁর বাবার ব্যবসাও মার খেয়েছে। কোনও মতে কিছু পুঁজি সম্বল করে তিন নম্বর কয়লাঘাট এলাকায় এই ভাতের হোটেলটি খুলেছিলেন নন্দিনীর বাবা। তিনি জানালেন, এক-একদিন এমনও হয়েছে, বউনি হয়নি, খাবার ফেলে দিতে হয়েছে। কখনও নন্দিনীর পরামর্শে শিয়ালদহের আশেপাশের ভিক্ষাজীবিদের বিতরণ করা হয়েছে সেই খাবার।
ধীরে ধীরে হোটেলে বিক্রি শুরু হতে থাকে। বাড়তে থাকে খদ্দের। বাবার সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করেন নন্দিনী। সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তাঁর মাও। কিন্তু তখনও নন্দিনী জানতেন না, কখন তিনি ভাইরাল হয়ে গিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। চলতি বছরের 2 রা জানুয়ারি মা-বাবাকে নিয়ে গুজরাটে নতুন কাজের সন্ধানে চলে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। কাটা হয়ে গিয়েছিল ফ্লাইটের টিকিট। কিন্তু 23-24 ডিসেম্বর নাগাদ বদলে যায় ছবিটা। ভাইরাল হয়ে গিয়েছেন নন্দিনী। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই হোটেলকেই এগিয়ে নিয়ে যাবেন। তবে বিখ্যাত হয়ে উঠেও বর্তমানে দেখা দিয়েছে সমস্যা।
নন্দিনী জানালেন, তিনি আগের তুলনায় অনেক বেশি রোজগার করলেও বর্তমানে একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই দোকানটি তাঁর নিজের নয়। ভাড়ায় নেওয়া এই দোকানের পিছনে গত দুই বছর ধরে মানসিক ও শারীরিক শ্রম তো বটেই, নিজেদের প্রায় সমস্ত সেভিংস দিয়েছেন তাঁর পরিবার। অথচ এই মুহূর্তে তাঁদের বলা হচ্ছে, এই দোকানটি ছেড়ে দিতে। দোকান ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে কোথায় যাবেন? কি করবেন? তা ভেবে কেঁদে ফেলেছিলেন নন্দিনী। বাংলাদেশ থেকেও ইউটিউবার এসেছেন তাঁর দোকানে।
এর মধ্যেই ভাইরাল হয়েছে নন্দিনীর সাথে এক খদ্দেরের ঝগড়া। এর ফলে তাঁদের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কিছু ইউটিউবার এসে নন্দিনীকে জিজ্ঞাসা করেছেন, রাণু মন্ডল (Ranu Mondal)-এর মতো অবস্থা তাঁর হলে কি করবেন তিনি! বর্তমানে ওই ঝগড়ার ভিডিওর কারণে প্রতিনিয়ত ট্রোল হচ্ছেন তিনি। নন্দিনীকেই খারাপ ভাবে বহু খদ্দের এসে তাঁর সাথে বাজে আচরণ করেছেন, দু’কথা শুনিয়েও গিয়েছেন বলে জানালেন নন্দিনী। রাত দুটোর সময় অনেকে তাঁকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করছেন, ঝগড়াটা কি কারণে হয়েছিল! ফলে ভবিষ্যতের চিন্তা ভাবাচ্ছে নন্দিনীকে।
তিনি জানালেন, বর্তমান সময়ে তাঁকে এই দোকান ছেড়ে দিতে হলে নতুন কোনো স্থানে ব্যবসা শুরু করার সামান্যতম মূলধনটুকু নেই তাঁদের কাছে। আপাতত কোনো মিরাকলের আশায় রয়েছেন নন্দিনী যাতে তাঁর মাথার ছাদটুকু কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে।
View this post on Instagram