অস্তরাগে চলে গিয়েছেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukherjee)। তাঁর বিস্তৃতি গন্ডী ছাড়িয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-র কথা সম্পূর্ণ সত্যি “একটা পদ্মশ্রী বা হতশ্রী-তে কিছু এসে যায় না”। কোনো পুরস্কার বা উপাধি সন্ধ্যার ব্যাপ্তির বর্ণনা করতে পারে না। কিন্তু হঠাৎই বম্বে থেকে কেন ফিরে এসেছিলেন সন্ধ্যা?
View this post on Instagram
উস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খান (Ustad Bade Golam Ali Khan)-এর একনিষ্ঠ ছাত্রী সন্ধ্যা 1950 সালে বম্বে পাড়ি দিয়েছিলেন। বম্বে তখনও বলিউড হয়ে ওঠেনি। শচীন দেববর্মণ (Sachin Dev Barman) সন্ধ্যাকে বম্বে নিয়ে গেলেও সুরকার অনিল বিশ্বাস (Anil Biswas)-এর নির্দেশনায় ‘তারানা’ ফিল্মে প্রথমবার হিন্দিতে প্লে-ব্যাক করেছিলেন সন্ধ্যা। এই ফিল্মে গান গাইতে গিয়েই লতা মঙ্গেশকর (Lata Mangeshkar)-এর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সন্ধ্যার। দুজনে মিলে গেয়েছিলেন ‘তু বোল পাপিহে বোল’। মোট সতেরটি হিন্দি ফিল্মে গান গেয়েছিলেন সন্ধ্যা। কিন্তু হঠাৎই তিনি বম্বে থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কখনও ফিরে আসার কারণ খোলসা করেননি নির্বিবাদী মানুষটি।
View this post on Instagram
অনেকের মতে, লতার সঙ্গে সন্ধ্যার রেষারেষি তৈরি হয়েছিল। ফলে সন্ধ্যাকে ছাড়তে হয়েছিল বম্বের মাটি। কিন্তু এই কথা সত্যি নয়। এই গুজবের জন্ম হয়েছিল তৎকালীন মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি ছবি থেকে। সেই ছবিতে লতার দিকে সন্ধ্যা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু লতা নিস্পৃহ। আসলে লতা নিস্পৃহ ছিলেন না। তিনি হাত বাড়ানোর আগেই তুলে নেওয়া হয়েছিল ছবিটি। ফলে প্রকাশিত হয়েছিল অর্ধসত্য। সেই সময়েও এই ধরনের সাংবাদিকতা প্রচলিত ছিল। ফলে অনুরাগীদের ধারণা হয়েছিল, লতা ও সন্ধ্যার মধ্যে রেষারেষি রয়েছে। কিন্তু কলকাতায় এসে সন্ধ্যার ঢাকুরিয়ার বাড়িতে তাঁর মায়ের হাতের রান্না খেতে আসতেন লতা। সন্ধ্যা বম্বে গেলে তাঁর হোটেলের ঘরে জমত দুই বান্ধবীর আড্ডা। লতা ও সন্ধ্যাও অবগত ছিলেন রেষারেষির গুজবের ব্যাপারে। তাঁরা এসবে কান দিতেন না। সন্ধ্যা একটি আংটি উপহার দিয়েছিলেন লতাকে।
View this post on Instagram
আসলে লতার কন্ঠের ধাঁচ ছিল মারাঠি। ফলে অনেক উচ্চস্বরে গাইতে পারতেন তিনি। অপরদিকে বঙ্গের পেলবতা ছিল সন্ধ্যার কন্ঠে। ফলে তাঁর কন্ঠ ছিল সফট অথচ সাবলীল। দুই জনের কন্ঠ দুই ধরনের হওয়ার কারণে তাঁদের গানের ধরন ছিল আলাদা। ফলে রেষারেষির প্রশ্ন ওঠে না।
বম্বেতে সুরকারদের কাছে লতা ও সন্ধ্যা দুজনের চাহিদাই ছিল তুঙ্গে। সন্ধ্যার বিশ্বাস ছিল, অত্যধিক গান গাইলেও গলা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এমনকি পরবর্তীকালে এই কারণেই তিনি মনোময় ভট্টাচার্য (Manomoy Bhattacharya)-কেও অতিরিক্ত গানের শো না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বম্বেতে থাকাকালীন তাঁর প্রচুর রেকর্ডিং থাকত। ফলে সন্ধ্যার গলায় চাপ পড়ার সম্ভাবনা ছিল। এছাড়াও বম্বের হিন্দিভাষী পরিবেশ ও অন্য ধরনের জলহাওয়া পছন্দ হয়নি বঙ্গকন্যা সন্ধ্যার। তাই শেষ অবধি তিনি বম্বে থেকে কলকাতার বুকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নিয়ে আর পাঁচটা মানুষের সঙ্গে আলোচনা করার ঘোর বিরোধী ছিলেন সন্ধ্যা। নিজের সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে জানতেন তিনি। ফলে কোনোদিন কাউকে বম্বে ছাড়ার কারণ জানানোর প্রয়োজন বোধ করেননি। কিন্তু শ্রোতারা বরাবর অতিরঞ্জিত করেছেন লতা ও সন্ধ্যার সম্পর্ককে। প্রকৃতপক্ষে, শিল্পী সন্ধ্যা নিজেই কলকাতার বুকে তাঁর ক্যানভাস তৈরি করে নিতে চেয়েছিলেন।
View this post on Instagram