Hoop Story

অসাধারণ জায়গা তবু নেই কারো বসবাস, ভুতুড়ে গ্রামে লুকিয়ে আছে অদ্ভুত সব রহস্য

পুরো গ্রামের দখল নিয়ে নিয়েছে প্রকৃতি, আদিবাসীরা নাম দিয়েছে 'ভূত গ্রাম'

এক সময়ে শহরটি পরিত্যক্ত ছিল। এখনো কান পাতলে শোনা যায়, পাতার সর সর আওয়াজ। শুধু পাতার আওয়াজ নাকি তাদেরও আওয়াজ তা অবশ্য জানা নেই। তবে গোটা জায়গাটাতে রয়েছে প্রচুর বাড়ি, বাড়ির মধ্যে একটি মানুষ নেই। বাড়ি গুলিকে খুব সুন্দর ভাবে ঢেকে রেখেছে প্রকৃতি। প্রতি বাড়িতে উঠে গেছি লতানো গাছ। কংক্রিটের ঘরবাড়ির ধূসর রং চাপা পড়ে গিয়ে শুধুই সবুজে সবুজ। আদিবাসীরা গ্রামটিকে ভুতুড়ে গ্রাম বলেই ডাকেন। কিন্তু এতগুলো বাড়ির মানুষজন কোথায় গেল! কেনই বা জায়গাটি পুরো জনমানবশূন্য হয়ে গেল? এর কারণ খুঁজতে গেলে জানতে হবে এই গ্রামের ইতিহাস।

চীনের শেংসান দ্বীপে অবস্থিত ভুতুড়ে গ্রাম। সাংহাই থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে। এই গ্রামটির নাম হাওটাওওয়ান। মাত্র পাঁচ ঘন্টা জলপথে ভ্রমণ করলে সাংহাই থেকে আপনি এই প্রত্যন্ত গ্রামে যেতে পারবেন। একটা সময় যখন মানুষ থাকতো, তখন তারা পাহাড়ের কোল কেটে গ্রামটা তৈরি করেছিলেন। তাদের বসবাসের চিহ্ন এখানে পরিষ্কার। যত্ন সহকারে পাহাড়ের ঢাল কেটে বাড়ি ঘর, রাস্তাঘাট বানানো হয়েছিল। এই গ্রামের অধিবাসীরা ছিলেন পেশায় জেলে। ৬০০ পরিবারের মধ্যে প্রায় তিন হাজার মানুষের বাস ছিল এক সময় এই গ্রামে। কিন্তু আজ সবই ইতিহাস। ৫০০ বর্গকিলোমিটার আয়তন জুড়ে গ্রামটিতে শুধুই এখন হাহাকার।

মূল শহর থেকে বেশ অনেকটা দূরে এখানে জীবনযাত্রা বেশ কঠিন, তাই বোধহয় এখানকার মানুষরা বেশি দিন এই শহরে টিকে থাকতে পারেননি। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা শহরটিকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন দূর-দূরান্তে। থেকে গেছে শুধুই ইট, কাঠের তৈরি এই শহরটি। মানুষজন এখানে থাকতে অস্বীকার করলেও প্রকৃতি কিন্তু এই শহরকে বঞ্চিত করেনি। গোটা বিশ্বে যখন গাছ কেটে ফেলে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হচ্ছে, তখন ঠিক বিপরীত ভাবেই কংক্রিটের জঙ্গলে গড়ে উঠছে এক টুকরো সবুজ ভূখণ্ড। ১৯৯০ সাল নাগাদ গোটা গ্রাম প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে।

এই গ্রামটিতে একটি মজার জিনিস হল, যে লতানে গাছ গুলি বাড়ির গা বেয়ে উঠেছে তার একটিও কিন্তু জংলি গাছ নয়, তার প্রত্যেকটি আঙুর গাছ। বাড়িগুলোর কোন অংশ বাদ দেয়নি আঙুর গাছ হতে। তবে বর্তমানে এই ভূত গ্রাম দেখার জন্য অনেকেই সেখানে যান। অনেকদিন পর্যন্ত এই গ্রামটি জনসমক্ষে আসেনি। ২০১৫ সালে এক ফটোগ্রাফার কুইং জিয়ান উদ্যোগে প্রথমেই গ্রামটির কথা গোটা বিশ্বের মানুষ জানতে পারেন। এখন গ্রামটিতে মাত্র ৫ জন লোক বাস করেন। পর্যটকরা গেলে তাদের আতিথেয়তার ব্যবস্থার দায়িত্ব পড়ে ওনাদেরই ওপরে।

Related Articles