নব্বইয়ের দশকে প্রভাত রায় (Prabhat Roy)-এর মতো পরিচালকদের ‘নন্দন’ নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না। তাঁরা জোর দিতেন চিত্রনাট্যে। শুধুমাত্র নাগরিক সমাজ নয়, তাঁদের তৈরি বাংলা সিনেমা মাতিয়ে রেখেছিল গ্রামীণ মানুষদেরও। একের পর এক সুপারহিট ফিল্ম তৈরি করেছেন প্রভাতবাবু। নতুনদের সুযোগ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে তাঁর ফেসবুক পোস্ট জুড়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি ‘কেউ মনে রাখেনি’।
গত এপ্রিল মাসে প্রভাতবাবুর স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন। অর্ধাঙ্গিনীকে হারিয়ে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন প্রভাতবাবু। কিন্তু সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন যাতে তাঁর বক্তব্যে ধরা পড়েছে অভিমান। প্রভাতবাবু লিখেছেন, প্রায় পনের জন নতুন ছেলে-মেয়েকে ফিল্মে সুযোগ দিয়েছিলেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছেন রূপা গাঙ্গুলী (Rupa Ganguly), টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roychowdhury), ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta), শুভশ্রী গাঙ্গুলী (Subhashree Ganguly), সায়ন্তিকা (Sayantika)। কিন্তু ঋতুপর্ণা, টোটা ও সায়ন্তিকা ছাড়া বাকি সকলে অকৃতজ্ঞ।
এদিন প্রভাতবাবু জানান, তাঁর স্ত্রী সুস্থ থাকাকালীন সকলেই বৌদির কাছে আসতে পছন্দ করতেন। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর কেউ একটা খোঁজও নেননি। প্রসেনজিৎ (Prasenjit Chatterjee) আসবেন বলেও আসেননি। প্রভাতবাবু জিৎ (Jeet)-কে দুঃসংবাদটি জানিয়েছিলেন। তিনিও আসেননি। ঋতুপর্ণা ও টোটা বাড়ি এসে দেখা করে গিয়েছেন। সায়ন্তিকা বারবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। এমনকি প্রভাতবাবুর স্ত্রীর পারলৌকিক কাজেও কেউ একবারও এসে দাঁড়াননি। কিন্তু রঞ্জিত মল্লিক (Ranjit Mullick) এসেছিলেন বিনা আমন্ত্রণে। কিন্তু প্রভাতবাবুর স্ত্রী যাঁদের স্নেহ করতেন, তাঁরা কেউ একবারের জন্য তাঁর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি।
প্রভাতবাবুর পোস্টের কমেন্টে কবীর সুমন (Kabir Suman ) লিখেছেন, প্রভাতবাবু তাঁকে ‘সেদিন চৈত্রমাস’ ফিল্মে সঙ্গীত পরিচালনা করার, ফিল্মের গান লেখার ও সুর দেওয়ার সম্মান ও স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। কোনো কৈফিয়ৎ চাননি পরিচালক হিসাবে। কবীর সুমন আরও একবার একসাথে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রভাতবাবুকে। প্রভাতবাবু লিখেছেন, তাঁর মতো গুণী শিল্পীর সাথে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল পরিচালকের। কিন্তু তিনি যাঁদের কথা বলছেন, তাঁরা তো তখনও বাংলায় ‘অ আ ক খ’ বলতে শেখেননি। এমনকি তাঁর ফিল্মে অভিনয়ের পর ওই তারকারা ইংরাজি বলা শুরু করেছিলেন।
তবে কবীর সুমনের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রভাতবাবুও। কিন্তু তাঁর মতে, তাঁর ইচ্ছা থাকলেও আদৌ সময় ও সুযোগ কোনোটাই তাঁর পাশে দাঁড়াবে না। কবীর সুমনের মতে, জীবন সায়াহ্নে তিনি ও প্রভাতবাবু মিলে কাজ করলে আসবে অন্য মাত্রা। তাঁরা দুজনে হাত মেলালে প্রযোজকের টাকা উঠে আসবে। একটা সহজ, সুন্দর প্রেমের গল্প চান কবীর সুমন। প্রভাতবাবুর পোস্টে কমেন্ট করে অনীক দত্ত (Anik Dutta) লিখেছেন, যখন দরকার পড়বে তখন সকলেই প্রভাতবাবুর খোঁজ নেবে।
View this post on Instagram