মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় (Moushumi Chatterjee)-কে দেখে কখনও বোঝা যায়নি, তাঁর ভিতরে লুকিয়ে রয়েছে এত অভিমান। কিংবদন্তী গায়ক-সঙ্গীতকার ও প্রযোজক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় (Hemanta Mukherjee)-র পুত্রবধূ তৈরি করেছেন বিনোদন জগতে নিজের স্বতন্ত্র পরিচয়। কিন্তু কোনো বছর 26 শে এপ্রিল মৌসুমীর জন্মদিন নিয়ে ওঠে না আলোড়ন। অথচ তিনি সর্বকালের সেরা অভিনেত্রী। বহুদিন পর অপর্ণা সেন (Aparna Sen) নির্মিত ফিল্ম ‘গয়নার বাক্স’ সব স্পটলাইট শুষে নিয়েছিলেন একাই। ‘তবু’, এই ‘তবু’-টাই মৌসুমীর জীবনে বড্ড বেশি সত্য। বহু বছর ধরে নিজের ভিতরে লালন করেছেন অজস্র অভিমান। সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তাই বিস্ফোরক হয়ে উঠেছিলেন মৌসুমী।
View this post on Instagram
মহেশ ভাট (Mahesh Bhatt) তাঁকে একসময় বলেছিলেন, যখনই তাঁর কেরিয়ার ভালো গতিতে এগোয়, তখনই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন মৌসুমী। কিন্তু মৌসুমী মাতৃত্বকে মনে করেন জীবনের একটি সুন্দর রং যা তিনি মহেশকেও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কোনো নায়কের গুডবুকে না থাকা এক অভিনেত্রী মৌসুমী। তাঁর সমকালীন অভিনেত্রী জয়া বচ্চন (Jaya Bachchan)-এর বিরুদ্ধেও যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে মৌসুমীর। সূত্রপাত হয়েছিল ‘কোশিস’-এর সময়। গুলজার (Gulzar) নির্মিত এই ফিল্মে প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিল মৌসুমীর। শুরু হয়ে গিয়েছিল শুটিং-ও। কিন্তু মাত্র তিন দিন শুটিং করার পর বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ওই তিন দিন শুটিং-এর সময় মৌসুমী দেখেছিলেন, গুলজারের অফিসে বসে রয়েছেন জয়ার সেক্রেটারি। প্রায় সারাদিন ধরেই সেখানে বসে থাকতে দেখা যেত ওই ব্যক্তিকে।
View this post on Instagram
তিন দিনের দিন হঠাৎ গুলজার, মৌসুমীকে বলেন, আগামীকাল থেকে একটু বেশি রাত পর্যন্ত তাঁকে শুট করতে হবে। কিন্তু মৌসুমীর পক্ষে তা সম্ভব ছিল না। কারণ তাঁর সন্তান তখন ছোট। ফলে তিনি গুলজারকে বলেন, যে কোন একটি শিফটে কাজ করতে পারবেন তিনি। গুলজার রেগে গিয়ে বলেছিলেন, বহু নায়িকা এই চরিত্রের জন্য লাইন দিয়ে আছেন। প্রত্যুত্তরে মৌসুমী বলেন, তাঁকে বাদ দিয়ে ওই নায়িকাদের নিতে। এরপরেই মৌসুমীর পরিবর্তে ‘কোশিস’-এ নিয়ে আসা হয় জয়াকে। 1972 সালে মুক্তি পায় ‘কোশিস’। এই ফিল্মে অভিনয়ের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সঞ্জীব কুমার (Sanjib Kumar)। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার পেয়েছিলেন গুলজার।
View this post on Instagram
কিন্তু নেপথ্যের কাহিনী প্রকৃতপক্ষে কি তা বলতে পারবেন গুলজার নিজে। কারণ জয়ার সেক্রেটারিকে তিনি ডেকে পাঠিয়েছিলেন নাকি ওই ব্যক্তির মাধ্যমে জয়া অনুরোধ করেছিলেন চরিত্রটির জন্য? মৌসুমী ততটুকুই দেখেছেন বা শুনেছেন যা তাঁকে দেখানো হয়েছে বা বলা হয়েছে। কিন্তু আসল ঘটনাটি এখনও রয়ে গিয়েছে অন্তরালে। কারণ সেই সময় অধিকাংশ নায়িকাকে ক্রীড়নকের মতো ব্যবহার করতেন প্রযোজক-পরিচালকদের একাংশ। ছিল না সোশ্যাল মিডিয়া। মিডিয়ার রমরমাও ছিল না। ফলে প্রতিবাদ করতে পারতেন না নায়িকারা। কেউ ধীরে ধীরে বিনোদন জগৎ থেকে সরে যেতেন মৌসুমীর মতো। কেউ বা বিয়ের পর স্বামীর শর্ত মানতে গিয়ে কেরিয়ারে একরকম ইতি টেনে দিতেন জয়ার মতো। মৌসুমীর ভার্সন আপাতত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অপেক্ষা রইল গুলজার ও জয়ার ভার্সনের। আসলে কি ঘটেছিল ‘কোশিস’-এর নেপথ্যে?
View this post on Instagram