ঋত্বিকা সেন (Rittika Sen) শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। চোখের সামনেই পরিবর্তিত হতে দেখেছেন বাংলা ফিল্মের ঘরানাকে। একাধিক বাংলা ফিল্ম ও সিরিয়ালে শৈশবে অভিনয় করেছেন ঋত্বিকা। বড় হয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee), শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায় (Srabanti Chatterjee), কোয়েল মল্লিক (Koel Mallick)-দের ফিল্ম দেখে। তবে ঋত্বিকা মনে করেন, দশ বছর আগেও বাণিজ্যিক ফিল্ম নিয়ে এক ধরনের উন্মাদনা ছিল। কারণ সেই ধরনের চিত্রনাট্য অনুযায়ী ফিল্ম তৈরি হত। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। ঋত্বিকার মতে, তাঁর মতো মাত্র কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী রয়েছেন যাঁরা পরবর্তীকালে বাণিজ্যিক ফিল্মের ঘরানার শেষ প্রজন্ম বলে গণ্য হবেন। তবে তিনি গর্বিত ‘বরবাদ’-এর মতো ফিল্মে অভিনয় করতে পেরে। এখনও ঋত্বিকার অনুরাগীদের একাংশ এই ফিল্মের প্রশংসা করেন। অনেকেই বলেন, তাঁরা সাত-আট বার প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ‘বরবাদ’ দেখেছেন যা নিঃসন্দেহে অভিনেত্রী হিসাবে ঋত্বিকার সফলতা। নায়িকা হিসাবে ‘বরবাদ’ ছিল তাঁর ডেবিউ।
মাত্র পনের বছর বয়সে অপর্ণা সেন (Aparna Sen) নির্মিত ফিল্ম ‘আরশিনগর’-এ ঋত্বিকার দক্ষ অভিনয় দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন, কমার্শিয়াল ফিল্মের পরিবর্তে অন্য ঘরানার ফিল্মে নায়িকা হিসাবে দেখা যাবে ঋত্বিকাকে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এরপর তাঁর কাছে ভালো ফিল্মের প্রস্তাব আসেনি। উপরন্তু লকডাউনের পর বাংলা ফিল্মকে দর্শক কিভাবে গ্রহণ করবেন তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। ভালো প্রযোজনা সংস্থা ছাড়া কমেছে ছোট প্রযোজকদের উপর বিশ্বাসযোগ্যতা। ফলে ভালো বাংলা ফিল্মের জন্য অপেক্ষা করার পাশাপাশি ঋত্বিকা বেছে নিয়েছেন দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে। সেখানে তিনি ‘বেঙ্গলি গার্ল’ নামেই পরিচিত।
ঋত্বিকাও নিজেকে বাংলার প্রতিনিধি বলেই মনে করেন। বাংলার সাথে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির কাজের ধরনে মিল থাকলেও পেশাদারিত্বে রয়েছে অমিল। দক্ষিণী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি চূড়ান্ত পেশাদার বলে জানালেন ঋত্বিকা। সেখানে নতুন কিছু শেখার পাশাপাশি অনেক বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর আশা রয়েছে বলে মত প্রকাশ ঋত্বিকার। আগামী দিনে একটি বাংলা ফিল্মের পাশাপাশি দুটি দক্ষিণী ফিল্ম মুক্তি পাবে তাঁর। এর মধ্যে একটিতে মল্লিকা শেরাওয়াত (Mallika Sherawat)-এর সাথে কাজ করেছেন ঋত্বিকা। তবে বর্তমানে বাংলায় ফিল্মের তুলনায় ওয়েব সিরিজের দিকেই ঝুঁকছেন ঋত্বিকা। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, ঘনিষ্ঠ দৃশ্যের কারণে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে আপত্তি তাঁর। তবে অবশেষে ঋত্বিকার পছন্দ হয়েছে ‘অভিশপ্ত’-র চিত্রনাট্য। এটি একটি থ্রিলার। অভিমন্যু মুখোপাধ্যায় (Abhimanyu Mukherjee) পরিচালিত এই ওয়েব সিরিজে ঋত্বিকার বিপরীতে অভিনয় করছেন গৌরব চট্টোপাধ্যায় (Gaurav Chatterjee)। কিন্তু একসময় অভিনয়ের কারণেই রীতিমত মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন ঋত্বিকা।
শৈশব থেকেই তাঁর মা শিখিয়েছিলেন কেরিয়ার ও পড়াশোনাকে ব্যালান্স করে চলতে। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যথেষ্ট সাহায্য করতেন। কিন্তু তিনি অভিনেত্রী হওয়ার কারণে তাঁর বন্ধুর সংখ্যা কম ছিল বলে জানালেন ঋত্বিকা। স্কুলে সাধারণতঃ তাঁর সহপাঠীরা তাঁর সাথে কথা বলতে চাইত না। ফলে একসময় রীতিমত মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেছিলেন ঋত্বিকা। ক্লাস সেভেনের পর বদলেছিলেন স্কুল। সেই সময় ‘বৌ কথা কও’-তে অভিনয় করছেন তিনি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় ইন্টারনেটে কোনো ব্যক্তি ঋত্বিকার প্রকৃত বয়স পরিবর্তন করে বত্রিশ বছর লিখে দেওয়ার ফলে যথেষ্ট সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। কারণ অনেকেই ভাবতে শুরু করেছিলেন, ঋত্বিকা বয়স লুকাতে চাইছেন। অনেক কষ্টে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পেরেছিলেন ঋত্বিকা। বর্তমানে স্নাতক স্তরে বিবিএ পড়ছেন তিনি। ইচ্ছা রয়েছে স্নাতকোত্তর করার। তবে কলেজেও অনেকে ঋত্বিকার সাথে কথা বলতে চান না। কারণ তিনি অভিনেত্রী। কিন্তু সিনিয়রদের মধ্যে অনেকেই কলেজের প্রথম দিন ঋত্বিকার সাথে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর এসব নিয়ে বেশি ভাবেন না ঋত্বিকা। তিনি মনে করেন, মানসিক অবসাদ ও পরিস্থিতি তাঁকে পরিণত হতে সাহায্য করেছে।
View this post on Instagram