“সারা জীবনের মতো একবারই এই মৃত্যুসাজ………
এতদিন প্রাণ ছিল। অমরত্ব শুরু হলো আজ।” কবি শ্রীজাত’র কলম ধরেই শুরু হোক এই লেখা। ২০২০ যে এমন দিন দেখাবে তা কেউই স্বপ্নে ভাবতে পারেনি। ২০১৯ এর বর্ষ শেষে সকলের মনে ছিল উদ্দীপনা, এক রাশ বেঁচে থাকার স্বপ্ন আর বাঁচিয়ে রাখার প্রেরণা। নামী-বেনামী বহু প্রাণ এই বছর হারিয়ে গেছে। হয়তো আমার পাশের বাড়ির কেউ চিরতরে হারিয়ে গেছে। কিন্তু, আজ আমরা কথা বলব সেই মানুষদের নিয়ে যারা শুধুমাত্র বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে থেকে কাজ করেছেন এবং এই বছর যারা অমরত্ব পেয়েছেন।
প্রতিভাবান অভিনেতা ইরফান খান ২০১৮ সাল থেকে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। শেষে পরাজিত হন ক্যান্সারের কাছে। তাঁর মস্তিষ্কে নিউরো-এন্ডোক্রাইন টিউমার হয়েছিল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৩। হ্যাঁ, বিষ বছরের বছরের ২৯ এপ্রিল তিনি মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানি হাসপাতালে মারা যান কোলন সংক্রমণের কারণ হেতু। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ ছবি ‘অ্যাংরেজি মিডিয়াম’ মুক্তি পায় ১৩ মার্চ।
যার ‘কর্জ‘ আজও ভোলার নয়, সেই কিংবদন্তী অভিনেতা ঋষি কাপুর প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৯ শে এপ্রিল ভর্তি হন হাসপাতালে। তাঁরও ক্যানসার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে চলে যান। এরপর ২০১৯ এ ফের মুম্বাই ফেরেন। কিন্তু ২০২০ তে তাঁর ‘নসিব’ তাঁকে সাথ দিল না। ইরফান খানের মৃত্যুতে যখন শোকে কাতর বলিউড ও তাঁর অনুরাগীরা, ঠিক তাঁর পরের দিনিই অর্থাৎ ৩০ তারিখ তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
এই বিষ বছরে অমরত্ব পান প্রাণবন্ত সাজিদ-ওয়াজিদ জুটির অন্যতম সঙ্গীত পরিচালক ওয়াজিদ খান। যার ‘হুড় হুড় দাবাং’ আজও বক্স অফিসে হিট। করোনার আগ্রাসনে জীবন হারান তিনি। মৃত্যুকালে বয়ল হয়েছিল মাত্র ৪২ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই ১ জুন মারা যান তিনি।
‘ধক ধক করনে লাগা’ হোক বা ‘চোলি কে পিছে ক্যায়া হ্যায়’ এই গানের ঠুমকা যিনি শিখিয়েছিলেন সেই কিংবদন্তী নৃত্যশিল্পী সরোজ খান মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ৩ জুলাই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই ৭১ বছর বয়সে অমরত্বের খোঁজ পান।
দেশবাসীকে চমকে দিয়ে এক লহমায় চলে গিয়েছিলেন যিনি সেই অভিনেতার কথা মুখে না আনলেও সকলেই বুঝতে পারছেন তিনি কে। যার মৃত্যুর সঠিক কারণ আজও অধরা। তবে আত্মহত্যা বলেই চালিয়ে দেওয়া সুশান্ত সিং রাজপুত আজও সকলের মনের চিলেকোঠায় প্রতিবাদের আগুন ধরিয়ে দেয়। তাঁর মৃত্যু কাণ্ডের তদন্তে নামে সিবিআই, জল গিয়ে দাঁড়ায় বলিউডের ড্রাগ স্ক্যান্ডালে। এখনও অধরা সুশান্ত। এখনও তাঁর মৃত্যু সকলকে অবাক করে দেয়। হ্যাঁ, বিষ বছরের ১৪ জুন বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় সুশান্ত সিং রাজপুতের দেহ। এরপরেই তাঁর শেষ ছবি দিল বেচারা মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে।
এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম যিনি সঙ্গীত জগতের সেরাদের তালিকায় আছেন সেই তিনি বিষ বছরে পরলোকগমন করেন ২৫ সেপ্টেম্বর। তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন মারা যাওয়ার আগে। ৯০ দশকের রোম্যান্টিক গানের যেই দুর্দান্ত সফর তিনি করিয়েছিলেন তা সারা জীবন দেশবাসীর হৃদয়ে জমে থাকবে। তিনি তাঁর ৫৫ বছরের সঙ্গীতের কেরিয়ারে প্রায় ৪০,০০০-এরও বেশি গান গেয়েছেন।
শেষ করবো ‘পাতাললোক’ অভিনেতা আসিফ বাসরার মৃত্যু নিয়ে। নাহ এই লিস্টে আরও অনেকে আছেন এই যেমন ‘মেহন্দি’ অভিনেতা ফরাজ খান, ‘হাসি তো ফাসি’ অভিনেতা সমীর শর্মা, বন্দিত কমেডিয়ান জগদীপ সহ ‘বাতোঁ বাতোঁ মে’ পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায়। ১২ নভেম্বর হিমাচল প্রদেশের ম্যাকলিয়ডগঞ্জের বাসভবন থেকে উদ্ধার হয় আসিফ বাসরার মৃত দেহ। মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা।