বাংলা চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনেত্রী হলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এখনও চুটিয়ে অভিনয় করছেন ছোট পর্দায়। বয়স ৮৫ ছুঁই ছুঁই। কিন্তু সবরকম অভিনয়ে তিনি সাবলীল। একটা সময় দারিদ্র্য তাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল এবার খেটে খেতে হবে। কেউ থেকেও নেই তোর। তখনই এই সাবু বিভিন্ন জায়গায় নাচের অনুষ্ঠান করত। নাচ করে যেই টাকা উপার্জন করতেন তার পাঠাতেন বাংলাদেশে বাবার কাছে।
হ্যাঁ, দেশভাগের পর পরই সাবিত্রী চলে এসেছিলেন কলকাতায়। তাঁর এক দিদির শ্বশুর বাড়ি ছিল কলকাতা। তাঁদের সঙ্গেই ছোট্ট সাবিত্রী থাকতেন। কুমিল্লার এই মেয়ের কাছে তখন কলকাতা মানেই অপার বিস্ময়। কলকাতাতে ছিল তাঁর মেজদির শ্বশুরবাড়ি। তাই এই তিলোত্তমা তে এসেই ঠাঁই হল সাবিত্রীর। শুরু হল নাচের শো। শুধু নাচ নয়, স্কুলেও ভর্তি হন তিনি। এরপরেই একদি তাঁর পরিচয় হয় অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেদিন সাবিত্রীর মুখে বাঙাল টানে কথা তাঁর নাকি বেশ ভাল লেগেছিল। যদিও সাবিত্রীর বাঙাল টানের কথার জন্য বহু পরিচালক তাকে প্রথমদিকে বাতিল করেছিলেন। কিন্তু ভানুর পছন্দ হয় সাবিত্রীকে। আসলে তিনিও তখন নতুন মুখ খুঁজছিলেন তার নতুন নাটক ‘ নতুন ইহুদী ‘ এর জন্য। ভানু সেসময় সরাসরি সাবিত্রীর বাবার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন।
এই নাটকের পরেই ১৯৫১ সালে প্রথম ছবিতে অভিনয় করেন সাবিত্রী। সেই ছবির নাম ছিল ‘সহযাত্রী’। জীবনের প্রথম নায়ক স্বয়ং উত্তম কুমার। অবশ্য এই ছবিতে পার্শ্বনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সাবিত্রী। অভিনয়ের আগেই অবশ্য দেখেছিলেন নায়ককে। তাঁকে প্রথম বার দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। আজও উত্তম স্মৃতি তার কাছে অমলিন।
সাবিত্রীকে প্রথম নায়িকার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল ১৯৫২ সালে, ‘পাশের বাড়ি’ ছবিতে। এর পর বহু ছবিতে তাকে দেখা যায়। সাবিত্রী অভিনীত ‘শুভদা’, ‘বসু পরিবার’, ‘অন্নপূর্ণার মন্দির’, ‘গোধূলি’, ‘রাত ভোর’, ‘পুনর্মিলন’ ছবিগুলো টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা মজবুত করে নিতে সাহায্য করে সাবিত্রীকে।
এছাড়াও জীবনের প্রথম প্রেম উত্তম কুমারের সঙ্গেও বহু সিনেমায় অভিনয় করেছেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। এই যেমন – ‘লাখ টাকা’, ‘কল্যাণী’, ‘অনুপমা’, ‘রাইকমল’, ‘নবজন্ম’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘রাজা সাজা’, ‘দুই ভাই’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘মোমের আলো’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘রাতভোর’, ‘উপহার’, ‘মৌচাক’ এবং ‘ধন্যি মেয়ে’-এর মতো বহু ছবি।
এখন সাবিত্রী দেবী ছোট পর্দার তুখোড় অভিনেত্রী। কখনো তিনি ‘সুবর্নলতা’ ধারাবাহিকের দজ্জাল শাশুড়ি আবার কখনো তিনি ‘জলনূপুর’-এর সোনা ঠাম্মা। বাংলা ধারাবাহিকে এখন তাঁর অবাধ বিচরণ। ‘ কুসুম দোলা’, ‘টাপুর টুপুর’, ‘চোখের তারা তুই’, ‘অন্দরমহল’-এর মতো ধারাবাহিকের সাফল্যের অন্যতম উপাদান তাঁর উপস্থিতি।