যার নামে কাঁপতো গোটা মুম্বাই শহর, প্রকৃত জীবনে কে ছিলেন এই গাঙ্গুবাঈ!
কয়েকদিন আগেই ‘গাঙ্গুবাঈ কাথিওয়াড়ির’ প্রথম পোস্টার সকলের সামনে প্রকাশিত হয়েছে এবং গতকালই সিনেমার টিজার রিলিজ করে। গাঙ্গুবাঈ এর চরিত্রে সঞ্জয় লীলা বানসালি বেছে নিয়েছেন আলিয়া ভাটকে। ইতিমধ্যেই আলিয়ার সকলের মনের মধ্যে পৌঁছে গেছে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে পুরো একটি চলচ্চিত্রের গল্প রচনা হলো সে গাঙ্গুবাঈ আসলে কে? কেমন ছিল তার জীবন কাহিনী?
গাঙ্গুবাঈ বাস্তবে ছিলেন একজন ‘মাফিয়া কুইন অফ মুম্বাই’। তার আসল নাম গঙ্গা জীবন দাস কাথিয়াওয়াড়ি। মুম্বাইয়ের কামাথিপুরা যৌনপল্লীতে তিনি একজন পতিতা ছিলেন। তবে আর পাঁচটা পতিতার মতন তার জীবন ছিল না। তিনি একা মানুষ হয়েও দশভূজা হয়ে চালাতেন নানান রকম নিষিদ্ধ ব্যবসা। সর্বোপরি ভারতীয় ক্রিমিনাল এর তকমা দেওয়া হয়েছিল এই গাঙ্গুবাঈকে। তবে এমন নিষিদ্ধ কাজকর্ম যে তিনি নিজের সখের করেছেন এমনটা নয়। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে।
আর পাঁচটা মেয়ের মতোই ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। ১৯৩৯ সালে গুজরাটের কাথিয়াবাড় এর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে তার জন্ম হয়। একমাত্র মেয়ে ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক পাস করার পরেই পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল হিন্দি সিনেমার নায়িকা হওয়ার। আর সেই স্বপ্নকে এই বাস্তবায়িত করতে ছুটে গিয়েছিলেন মুম্বাইতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর নায়িকা হওয়া হলো না। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বাবার ফার্মে কর্মরত একাউন্টেন্ট কে ভালবেসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। শেষমেষ বিবাহের পরে মুম্বাইতে স্থায়ী ভাবে থাকা শুরু করেন। তবে কিছুদিন পর থেকেই বুঝতে পারেন যাকে ভরসা করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সেই মানুষটি ভালো নয়। তবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময় কামাথিপুরা এর একটি যৌনপল্লীতে তাকে বিক্রি করে দেন তার স্বামী।
যৌনপল্লীর জীবন তাকে বড্ড কষ্ট দেয় তাই বহুবার চেষ্টা করেছিলেন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু সাহসে কুলায় নি তাই এই পরিস্থিতিতে তিনি হাসিমুখে মেনে নেন। গঙ্গা হয়ে যায় গাঙ্গুবাঈ। তার দাপটের জন্য কিছুদিন পরেই তিনি কোঠার মালকিন হয়ে যান। পরবর্তীকালে তারে কোঠায় মাফিয়া করিম লালার আস্তানায় পরিণত হয়। তবে যে সমস্ত মেয়েরা এ কাজ করতে চাইতনা তাদেরকে তিনি জোর করতেন না। যৌনপল্লীর উন্নতির দিকে তিনি সারাক্ষণ নজর দিতে। এদের অধিকার রক্ষার জন্য তিনি আজীবন লড়াই করে গিয়েছিলেন এবং তিনি তার মনের জোরে তখনকার প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। একজন পতিতা হয়েও মানুষ তাকে আজও মনে রেখেছে। মুম্বাইয়ের কামাথিপুরা গাঙ্গুবাঈ এর স্ট্যাচু আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
এমন একটি অসাধারণ জীবন কাহিনীকেই সঞ্জয় লীলা বানসালি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপ দিতে চলেছেন। শোনা যাচ্ছে, এই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ছবিটি মুক্তি পাবে। তবে গাঙ্গুবাঈ এর চরিত্রে আলিয়া ভাট কতটা নিজের জায়গা তৈরি করতে পারলো তার উত্তর দেবে দর্শকরাই।