তেলেভাজা নিয়েও গর্বে বুক ফুলে ওঠে, আজও ঐতিহ্য বয়ে চলেছে পাঁশকুড়ার চপ
কলকাতা থেকে দিঘা বেড়াতে যাওয়ার পথে ট্রেনের মধ্যে চপ নিয়ে ওঠা মানুষদের থেকে চপ কিনে খায় না। এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার। শুধু তাই নয়, বাঙালি মানেই সন্ধ্যেবেলার জলখাবার এ মুড়ি, চানাচুর সঙ্গে আলুর চপ বেগুনি এবং নানা ধরনের চপ। জলখাবারের চাইনিজ খাবারের যতই আধিক্য থাকুক না কেন চপ শিল্প এখনো বেঁচে আছে। পাড়ার মোড়ের দোকানের ছোট্ট ঘরটায় বসে থাকা বুড়ো দাদুর হাতের চপ খেতে ছুটির দিনে তো লাইন লেগে যায়। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে এই সমস্ত চপ শেষ হয়ে যায়। এ তো গেল বাঙালির ঘরে ঘরে চপ প্রেমের কথা, আসুন জেনে নেওয়া যাক পাঁশকুড়ার ছোট্ট ইতিহাস।
পূর্ব মেদিনীপুরের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শহর হল পাঁশকুড়া। বর্তমানে পাঁশকুড়ার নামটি অনেক বেশি সকলের কাছে পরিচিত হয়েছে ক্ষীরাই এর দৌলতে। ফুলের বাগান দেখতে প্রতিবছর শীতকালে ঢল নামছে এই নতুন পর্যটন স্থলে। যদিও পর্যটনস্থল হিসাবে এই জায়গাটি একেবারেই নিজেকে তৈরী করে উঠতে পারেনি। তবে কাছাকাছি কোন খাবারের দোকান না থাকলেও এখানে গেলে পাঁশকুড়ার চপ খেতে কেউ ভোলেন না। খড়গপুর, হলদিয়া এবং দিঘা ট্রেন থেকে এই পাশ করে যাওয়া যায়। তাছাড়া রয়েছে NH6 রোড।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, এখানে নাকি নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পায়ের ধুলো পড়ে ছিল। কংসাবতী নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল কাশীজোড়া পরগনা। পরবর্তীকালে এই কাশীজোড়া পরগনায় পাঁশকুড়া নাম রূপে ধরা দেয়। ইতিহাস বলছে, পাঁশকুড়া এই শব্দটি এসেছে পশংগড়া থেকে। তবে শব্দের উৎপত্তি যেখান থেকেই হোক না কেন এখানে গেলে সব ক্ষেত্রে কেউ মিস করে না। ট্রেন থেকে নেমেই রেল স্টেশনের দু’ধারে দেখবেন চপের সারি দেওয়া দোকান। জলখাবারের মুড়ি, ঘুগনির সঙ্গে সব সময় পাওয়া যাচ্ছে নানান রকমের চপ।
এখানকার চপ শিল্পীরা শুধুমাত্র যেখানে দোকান সাজিয়ে বসে চপ তৈরি করেন তাই নয়, বিভিন্ন জায়গায় মেলায় মেলায় ঘুরে ট্রেনে হকারী করেও বিক্রি করেন। নিজের হাতের গুণে গোটা পশ্চিমবঙ্গের মন জয় করে নিয়েছেন এখানকার চপ বিক্রেতারা। আলুর চপ, বেগুনি অতি সাধারন ব্যাপার এছাড়াও মোচার চপ, ছোলার চপ, আমের চপ রয়েছে রকমারি রকমের চপ। তাই এখানে গেলে অবশ্যই চপের স্বাদ গ্রহণ করুন এবং বাড়ির জন্য নিয়ে আসুন। বিদেশি খাবারের মাঝে এখনো টিঁকে রয়েছে। আমাদের কর্তব্য এইসব মানুষের জীবন-জীবিকা কে বাঁচিয়ে রাখা। তাই বেড়াতে গেলে অবশ্যই এদের কাছ থেকে দু একটা অন্তত কিনে খান। তবে হলফ করে বলা যায় টাকার তুলনায় স্বাদ অনেক বেশি ভালো। এদের হাতের মধ্যেই ভালোবাসার স্পর্শ।