whatsapp channel

দারিদ্রতায় থেমে যায়নি পড়াশোনা, ১০০ জন মহিলাকে স্বাবলম্বী করেছেন ফরেস্ট অফিসার মেধাবী

ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের বান্দাশারী গ্রামের নির্মলা দেবী, আরো ১০ জন মহিলাকে নিয়ে আটা, গম, ডাল, রডোডেনড্রন এর জুস ইত্যাদি বিক্রি করে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। যদি ভালো দিন থাকে, তাহলে এক দিনে…

Avatar

HoopHaap Digital Media

ভারতবর্ষের উত্তরাখণ্ডের বান্দাশারী গ্রামের নির্মলা দেবী, আরো ১০ জন মহিলাকে নিয়ে আটা, গম, ডাল, রডোডেনড্রন এর জুস ইত্যাদি বিক্রি করে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। যদি ভালো দিন থাকে, তাহলে এক দিনে তারা আড়াই হাজার টাকাও রোজগার করেছেন। সেই বনাঞ্চল থেকে সমস্ত উপাদান সংগ্রহ করে তারা খাবার উপযুক্ত তৈরি করে পর্যটকদের কাছে এগুলো বিক্রি করেন। নির্মলা দেবীর মত, ভাদ্রিগাদ এলাকার পাঁচটি গ্রামের প্রায় ১০০ জন মহিলা, যারা এই উত্তরাখণ্ডের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এর ভিতর থেকে এই কাজ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এই সমস্ত মহিলাদের উন্নতির পেছনে একজনেরই নাম আছে, যিনি হলেন ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার মেধাবী কির্তী। যিনি তৈরি করেছেন সকলের জন্য ‘ধাত্রী’ নামের একটি প্রকল্প।

তাদের এই জীবিকার অর্থ আরো বাড়ানো যায় তা চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। তবে হঠাৎ করেই গ্রামের মহিলাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য কেন এত চেষ্টা করছেন মেধাবী! এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি বলেন, একেবারে বাল্যকালেই তিনি তার বাবাকে হারান। মায়ের কাঁধের উপরে পড়ে সমস্ত পরিবারের দায়িত্ব। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কঠোর পরিশ্রম তিনি নিজের চোখে প্রতিদিন দেখতে থাকেন। কিভাবে দুবেলা-দুমুঠো খাওয়ানো এবং পড়াশোনার জন্য মা কষ্ট করেছেন তা দেখে বড় হওয়া মেধাবী পরবর্তীকালে যখন ফরেস্ট অফিসার হলেন তখন তিনি ভাবলেন তার মায়ের মত আর পাঁচটা মহিলা শুধু শুধু কেন কষ্ট করবেন, কষ্ট করার সাথে সাথে উপযুক্ত টাকা উপার্জনের ব্যবস্থাও করে দিতে হবে।

গ্রামের প্রতিটা মহিলার এমন কঠোর পরিশ্রম এবং ত্যাগ স্বীকার দেখে তিনি ভাবেন প্রত্যেকটা মহিলাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। চাকরিতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই তিনি এই বিষয়গুলি নিয়ে তার অন্যান্য অফিসারদের সঙ্গে আলোচনা করতে থাকেন। তারপরই যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুরুতে বড়গাঁও গ্রামের ২৫ জন মহিলাকে প্রথম ট্রেনিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। বনজ সম্পত্তি থেকে কিভাবে হলুদের সাবান, নানান ধরনের প্রাকৃতিক কসমেটিক্স, ধূপ, তেল, শ্যাম্পু, ঔষধ ইত্যাদি তৈরি করা হয় তার প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হলো। এইসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহিলাদের মধ্যে একজন হলেন শালীনি ভান্ডারী। তিনি জানান, তিনি ধূপকাঠি এবং নানান ধরনের মূর্তি বিক্রি করেন যেগুলো তিনি গোবর থেকে তৈরি করেন। প্রথমদিকে লাভের মুখ একটু কম দেখলেও কিছুদিন পর থেকেই তার মাসে রোজগার হত প্রায় আট হাজার টাকা। পরবর্তীকালে এই টাকার অংক গিয়ে দাঁড়ায় এক লক্ষ টাকায়।

আস্তে আস্তে এই পুরো ব্যবস্থাটি গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। মেধাবী মাঝে মধ্যেই অন্যান্য গ্রামের মহিলাদের ডাকেন এবং তাদেরকে এই পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জানাতেন। সমস্ত উৎপাদিত জিনিসপত্রই ধাত্রীর মাধ্যমে গোটা অঞ্চলে আস্তে আস্তে বিক্রি হতে শুরু করল। কিভাবে উৎপাদিত উপাদান কে আরো বেশি সুন্দর করা যায় তার প্রশিক্ষণও তাদেরকে দেওয়া হতো। তবে শুধু মহিলাই নয়, ধাত্রীর প্রতিটা কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন অনেক পুরুষ। বন জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের উপাদান নিয়ে আসতে সাহায্য করেন তারা। তবে শুধুমাত্র যে গ্রামের লোকরাই তাদের থেকে জিনিস কেনেন তাই নয়, দূরদূরান্ত থেকে যে সমস্ত পর্যটকরা তাদের গ্রামে বেড়াতে আসেন তারাও তাদের হাতের তৈরি জিনিস কিনে বাড়ি নিয়ে যান। বর্তমানে পরিবেশ দূষণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, গ্রামবাসী মহিলারা প্লাস্টিকের থালার পরিবর্তে বর্তমানে নানান রকম গাছের পাতা দিয়ে তৈরি করছেন খাবার থালা। থালার উপরে রং করার জন্য তারা ব্যবহার করছেন নানান ধরনের ফুলের পাপড়ি।

মেধাবীর এই অসাধারণ কাজ কর্মের জন্য তিনি গ্রামবাসীদের কাছে রেঞ্জার দিদি নামে পরিচিত। নিজে একসময় অভাবে বড় হয়ে পড়াশোনা করে মাকে অসম্ভব কষ্ট করতে দেখে মেধাবীর মনে পরিবর্তন আসে। তখন তিনি ভাবেন তার মায়ের মতো যেন আর পাঁচটা মহিলাকে এমন শুধু কষ্ট করে যেতে না হয়। উপার্জন করতে গেলে অবশ্যই কষ্ট করতে হবে কিন্তু কষ্টের সাথে সাথে যদি উপার্জিত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তাহলে কষ্ট করতে খুব একটা কষ্ট হয় না। আর এই মনের ইচ্ছাপূরণ করবেন বলে তিনি চাকরি পাওয়ার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নিতে শুরু করেন। অনেক মহিলাদের কাছে মেধাবী আদর্শ, কারণ চাকরি পাওয়ার পরেও তিনি শুধু নিজের কথা ভাবেননি, ভেবেছেন আরো অনেক মহিলাদের কথা।

whatsapp logo
Avatar
HoopHaap Digital Media