GossipHoop Plus

এমন একটি বাংলা সিনেমা আলোড়ন তুলেছিল গোটা বাংলাদেশে

2009 সালে বাংলাদেশে একটি ফিল্ম বিশেষ ভাবে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। ফিল্মটির নাম ‘মনপুরা’। বাংলাদেশের পাঠক-পাঠিকার দল হয়তো ‘মনপুরা’-র কথা শুনেই ডুবে যাবেন হরেক রকম স্মৃতিতে। লকডাউনের সময় হয়তো অনেকেই কিংবদন্তী পরিচালকদের ফিল্ম দেখার সময় ‘মনপুরা’-ও দেখেছেন।

বিখ্যাত পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম (giasuddin selim) পরিচালিত ‘মনপুরা’ ছিল পরিচালকের তৈরী প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ফিল্ম। গ্রামীণ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তৈরী ‘মনপুরা’ একটি রোম‍্যান্টিক ট্র‍্যাজেডি ফিল্ম। ‘মনপুরা’-র নায়ক সোনাই একটি ধনী পরিবারের ভৃত‍্য। সোনাইয়ের সাতকুলে কেউ নেই। পরিবারের কর্তা গাজীর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে হালিম বাড়ির এক পরিচারিকাকে খুন করে। গাজী সেই খুনের দায় সোনাইয়ের উপর চাপিয়ে তাকে জোর করে মনপুরা দ্বীপে ছেড়ে আসে। সেখানেই এক জেলের মেয়ে পরীর সাথে বন্ধুত্ব হয় সোনাইয়ের। এই বন্ধুত্ব একদিন সূত্রপাত ঘটায় প্রেমকাহিনীর। ইতিমধ্যে গাজী পরীর কথা জানতে পারে। সে সোনাইকে কথা দেয়, সোনাই ও পরীর বিয়ের ব্যাপারে সে পরীর বাবার সাথে কথা বলবে। গাজী পরীর বাবার সঙ্গে দেখা করে। কিন্তু পরীর বাবাকে সে বলে, সে পরীকে তার মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে হালিমের বৌ করে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চায়। প্রথমে পরীর বাবা এই বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গাজী কথা দেয়, সে তার সমস্ত সম্পত্তি পরীর নামে লিখে দেবে।

কিন্তু ঘটনাচক্রে সোনাই জানতে পারে, গাজীর ষড়যন্ত্রের কথা। সোনাই সমস্ত ঘটনার কথা পরীকে জানিয়ে সেই রাতেই পরীকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করে। কিন্তু পালানোর সময় সোনাইকে পুলিশ খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করে। অপরদিকে পরীর সঙ্গে হালিমের বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরেও পরীর মন থেকে সোনাই মুছে যায়নি। ফলে পরী সোনাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে। অপরদিকে জেলে বন্দি সোনাই বারবার দেখা করতে চায় পরীর সাথে। একসময় সোনাই নির্দোষ প্রমাণিত হয়। কিন্তু যেদিন তার জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার কথা, তার আগেই পরীর শাশুড়ি অর্থাৎ গাজীর স্ত্রী পরীকে বলে, সোনাইয়ের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। গাজীর স্ত্রী চায়নি পরী তার ছেলের বৌ হওয়ার পরেও অন্য পুরুষকে ভালোবাসুক। এই কারণে সে পরীকে বলে সোনাইকে ভুলে যেতে। কিন্তু এরপরের ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দেয় যখন দেখা যায় সোনাইয়ের ফাঁসির কথা শুনে পরী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সোনাই বাড়ি ফিরে এসে দেখে তার সামনে শায়িত রয়েছে তার প্রেমিকা পরীর নিষ্প্রাণ দেহ।

‘মনপুরা’ ফিল্মটি রিলিজ হওয়ার আগেই প্রচুর মিডিয়া হাইপ পেয়েছিল। এমনকি একসময় ‘মনপুরা’ লেখা বিভিন্ন মার্চেন্ডাইজ বিক্রি হতে থাকে বাংলাদেশে যেগুলির ক্রেতা ছিল টিনএজ-দের একটি বড় অংশ। সোনাইয়ের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী (chanchal chowdhury)-র অভিনয় রাতারাতি তাঁকে বিখ্যাত করে তোলে। পরীর চরিত্রে ফারহানা মিলি (Farhana mili)-এর অভিনয়ও প্রশংসিত হয়। তাঁর এটিই ছিল ডেবিউ ফিল্ম। ‘মনপুরা’-র শুটিং হয়েছিল বোগরা, কুষ্টিয়া ও ঢাকার কয়েকটি অঞ্চলে। ‘মনপুরা’-র মিউজিক ছিল কনটেম্পোরারি-ফোক মিউজিক যা দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছিল। ‘মনপুরা’ পাঁচটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল। ‘মনপুরা’ প্রকৃতপক্ষে তুলে এনেছিল বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষের আকাঙ্খা ও আশার কাহিনীকে।

Related Articles