whatsapp channel

স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে নির্ভয়ে লড়াই করেছেন বাংলার অগ্নিকন্যারা

৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে যে মানুষগুলোর কথা না বললেই নয় তারা হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী আরো কত কি। এরা না থাকলে আমাদের দেশের স্বাধীনতার মুখ দেখা বোধহয় অসম্ভব…

Avatar

HoopHaap Digital Media

Advertisements
Advertisements

৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসে যে মানুষগুলোর কথা না বললেই নয় তারা হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী আরো কত কি। এরা না থাকলে আমাদের দেশের স্বাধীনতার মুখ দেখা বোধহয় অসম্ভব হয়ে পড়তো। তবে বারংবার ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছেন পুরুষ শক্তি, এক্ষেত্রেও কোনো অংশে কম যায়নি মহিলা শক্তিরা ঘরে ঘরে নারীরা স্বাধীনতার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। ছাপোষা বাঙালির ঘরের নারীদের মধ্যেও যে এমন আগুন থাকতে পারে তা সত্যিই ইতিহাসের পাতা থেকে জানতে পারা যায়। স্বাধীনতা দিবসের দিনে চলুন জেনে নি বাংলার নারী শক্তির কথা, যাদের জন্য ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিল অনেকখানি।

Advertisements

Advertisements

১) কনকলতা বড়ুয়া -»
বঙ্গপ্রদেশের এবং মহিলা শহীদদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কনকলতা বড়ুয়া। ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তিনি বেশকিছু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে একত্রে এই আন্দোলনে এগিয়ে এসেছিলেন। আর এই আন্দোলনের কাজে ব্রিটিশরা বাধা দিলে তিনি অকুতোভয় চিত্তে এগিয়ে গিয়েছিলেন সামনের দিকে কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়সেই পুলিশের গুলিতে তিনি প্রাণ ত্যাগ করেন। জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন দেশের সেবার কাজে।

Advertisements

Advertisements

২) অরুনা আশফ আলী-»
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি উল্লেখযোগ্য নাম হল অরুনা আসফ আলী। ভারতীয় কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্য হয়ে তিনি সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ভারতছাড়ো আন্দোলনের একজন সক্রিয় চরিত্রে পরিণত হয় এবং তার এই কাজ কর্মের জন্য পরবর্তীকালে তাকে তিহার জেলে পাঠানো হয়। অরাজনৈতিক কাজকর্মের জন্য অতি নিজ জেলাতেই অনশন শুরু করেছিলেন। আর এর জন্য পরবর্তীকালে তাকে নির্জন কারাবাসে আম্বালা এ পাঠানো হয়।

৩) সরোজিনী নাইডু -»
শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও পরবর্তীকালে যখন চোখের সামনে দেখেছেন বঙ্গভঙ্গের প্রচেষ্টা চলছে তখন আর তিনি নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি, তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেয় এজন্য তিনি ভারতীয় নারীদের সমিতি গঠন করেছিলেন। পরবর্তী কালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি এবং স্বাধীন আগ্রা ও অযোধ্যা যুক্ত প্রদেশের প্রথম রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হন সরোজিনী নাইডু।

৪) বীণা দাস -»
বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে আরেকটি নাম হল বীণা দাস। বাংলার ছাত্রী সংগঠনের এক অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন হলঘরে অসংখ্য মানুষের সামনে তিনি বাংলার তৎকালীন রাজ্যপাল এবং ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক স্ট্যানলি জ্যাকসন কে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করেন। পরপর পাঁচটি গুলি চালানোর পর তিনি ব্যর্থ হন তার পরে অবশ্য তাকে ন বছর কারাগারে নির্যাতিত হন।

৫) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার -»
মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্বাধীনতা সংগ্রামের কাজ করে গেছেন। অসাধারণ সাহস এবং দেশপ্রেম দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে তিনি ১৫ জন নিয়ে একটি দল তৈরি করেছিলেন। একটি ইউরোপিয়ান ক্লাব ছিল যার বাইরে লেখা ছিল ‘কুকুর এবং ভারতীয় প্রবেশ নিষেধ’ তারা এই ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তীকালে তাকে যখন বন্দি করে রাখা হয়। প্রীতিলতা আত্মসমর্পণ না করে সায়ানাইড খেয়ে প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন।

৬) ঊষা মেহতা -»
ছাড়ো আন্দোলনে আর একজন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন ঊষা মেহতা। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় গোপন রেডিও ট্রান্সমিটার পরিচালনা করেছিলেন পরে অবশ্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলে থাকাকালীন তিনি পড়াশোনা করার জন্য বৃত্তি পেয়েছিলেন। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তাকে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে সম্মানিত করা হয়।

৭) মাতঙ্গিনী হাজরা -»
বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষের মহীয়সী নারী হিসাবে পরিচিত হলেন। মাতঙ্গিনী হাজরা কে ‘গান্ধী বুড়ি’ নামে অনেকে চিনে থাকেন। অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে ভারতছাড়ো আন্দোলন সমস্ত সহিংস আন্দোলনে তিনি সক্রিয়তার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গান্ধীজির পদ্ধতিতে তিনি খাদি সুতো বানান৷ তমলুক থানার সামনে পুলিশের গুলিতে তিনি শহিদ হন।

৮) ননীবালা দেবী -»
বাংলার বিপ্লবী নারীদের মধ্যে আরেকজন উল্লেখযোগ্য ছিলেন ননীবালা দেবী। মাত্র ১৬ বছর বয়সী বাল্যবিধবা হয়ে পিতৃগৃহে ফিরে এসে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পিতৃগৃহ ও সমাজ তাকে মেনে নিতে পারেননি। ঠাঁই হয় আড়িয়াদহ মিশনে। ননীবালা দেবীর ভাইপো বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর কাছে বিপ্লবী আন্দোলন ও যুগান্তর দলের কার্য সম্পর্কে তিনি প্রথম অবহিত হন। রাম চন্দ্র মজুমদার তিনি তখন আলিপুর জেলে বন্দি ছিলেন তার কাছে গোপন ভাবে তথ্য জানার জন্য তিনি বন্দীর স্ত্রী সেজে জান। এরপরই তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চন্দননগর শহরে গৃহকর্ত্রীর ছদ্মবেশে নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তাকে বেনারস জেলে পাঠানো হয়, সেখানে তার ওপর চলে অকথ্য অত্যাচার গোপন অঙ্গে পুরে দেওয়া হয় লঙ্কাগুঁড়ো। তা সত্বেও তার মুখ দিয়ে কোন রকম কথা বার করতে পারেনি ব্রিটিশ পুলিশ। দেশের জন্য এরা মন-প্রাণ সমস্ত কিছু বিলিয়ে দিয়েছিলেন।

৯) দুকড়িবালা দেবী-»
দুকড়িবালা ওর বন্ধুর নাম ছিল নিবারণ ঘটক যিনি ছিলেন একজন সশস্ত্র বিপ্লবী। মাসিমা দুকড়িবালা স্নেহের পাত্র ছিলেন নিবারণ বোনপো প্রায়ই তার বিপ্লবী বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আসতেন মাসিমার বাড়িতে। স্বদেশী বই, বেআইনি বই লুকিয়ে পড়ার একমাত্র জায়গা ছিল এই মাসির বাড়ি। এই সমস্ত বই শুধু নিবারণ পড়তেন তাই নয় দুকড়িবালাও লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তেন। কলকাতায় বিপ্লবী বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায় নেতৃত্বে কোম্পানির মাউজার পিস্তল ও তার কার্তুজের পঞ্চাশটি বাক্স যখন চুরি হয়, তখন তার কয়েকটা চলে আসে নিবারণের কাছে। আর তার দেওয়া সাতখানি মাউজার পিস্তল নিজের হেফাজতে লুকিয়ে রাখার জন্য পুলিশ যখন খবর পান তখন দুকড়িবালা দেবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে কোলের শিশুকে ছেড়ে যেতে হয়। তিনি ছিলেন অস্ত্র আইনে দণ্ডিত প্রথম নারী।

১০) বেলা বসু-»
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সেজদার কন্যা বেলা বসু, যার নামে বাংলায় একটি রেলস্টেশন রয়েছে রেলস্টেশনের নাম হল বেলানগর বেলা বসু নেতাজীকে মহানিষ্ক্রমণ এর সময় সাহায্য করেছিলেন। ব্রিটিশদের তাড়াতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীকালে আজাদ হিন্দ ফৌজের চিপ অফ ইন্টেলিজেন্স হরিদাস মিত্র সঙ্গে তার বিয়ে হয়। পরবর্তীকালে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সদস্যদের দেখাশোনার দায়িত্ব পড়েছিল বেলা বসুর ওপর।

whatsapp logo
Advertisements
Avatar