মা সারদাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন গদাই ঠাকুর
সাল ১৮৭২। জ্যৈষ্ঠ মাস। ইংরাজীর ৫ই জুন।বাংলার বুকে সৃষ্টি হয় সকল প্রচলিত সম্পর্ক বহির্ভূত এক বিরল ঘটনা। ভক্তি ও তন্ত্র সাধনার জগৎ যার সাক্ষ্য আজও বহন করে চলেছে, নিস্তব্ধে! এই ভারতবর্ষের পুণ্যভূমির সকল মহাপুরুষেরা সেদিন আক্ষরিক অর্থেই এক বিস্ময় দর্শন করেছিলেন। স্বয়ং পরমহংসদেব এই বিশ্ববাসীকে বুঝিয়েছিলেন তাঁর এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়ার কারণটি কত মহৎ, কত পবিত্র! সঙ্গে তাঁর ভাজ্যা সারদামনি তাঁকে শিবপথে চলবার এক অনুপ্রেরণা প্রদান করেছেন প্রতিক্ষণে, প্রতিনিয়ত।
জ্যৈষ্ঠ মাসের সেই সন্ধ্যা আজও বুঝি স্মৃতির পাতায় উজ্জ্বল। ঠাকুর স্বয়ং শ্রীমাকে ফুল দিয়ে সাজালেন। চন্দনের ফোঁটা দিলেন। এবং আসনে বসবার জন্য অনুরোধ করলেন। সূচিত হয় এক পবিত্র অধ্যায়। ধূপধুনোর গন্ধে ম ম চারিদিক। প্রদীপের স্নিগ্ধ আলোয়ে এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এরই মাঝে শ্রীমাকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করলেন ঠাকুর। কথিত আছে পূজা চলা কালীন শ্রী মায়ের বাহ্যজ্ঞান লোপ পেয়েছিল। অন্যদিকে জগৎ জননী মা কালীর সন্ধ্যারতি চলেছে মন্দিরের গর্ভগৃহে। কোন এক স্থানে শ্রীমা ও ভবতারিনি এক এবং অভিন্ন হয়ে উঠেছিলেন সেই ক্ষণে।
এরপর কেটে গেছে বহুদিবস, বহুরজনী। কিন্তু সেই ঘটনা আজও অমলিন। পারস্পরিক সম্পর্কের বেড়াজাল ভেঙ্গে বেড়িয়ে গিয়েছিলেন সেদিন তিনি। এক বিপ্লব,নিছক অর্থেই! জীবের জ্ঞান সেই পরমব্রহ্ম জ্ঞানেরই যে অংশ, প্রমাণিত হয় সেদিন। বর্তমান যুগে এর বহু ব্যাখ্যা থাকতে পারে, থাকতে পারে সমালোচনাও। কিন্তু সীমিত জীবের, অসীম বা অনন্ত যার থেকে বহুদূরে।