তরুণ মজুমদারের মত কিংবদন্তি পরিচালকের হাত ধরে অভিনয়ের যাত্রা শুরু। পথভোলা সিনেমার মধ্যে দিয়ে টলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন অভিষেক চট্টোপাধ্যায়। তারপর কয়েক দশক ধরে তিনি চুটিয়ে বিভিন্ন সিনেমায় নায়ক-খলনায়কের মত দাপুটে চরিত্রে অভিনয় করেন। তার মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা টলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে। প্রতিভাবান এই অভিনেতার এত কম বয়সে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না সবাই। বন্ধুবান্ধব থেকে অনুরাগী সকলেই নিজেদের শোক জ্ঞাপন করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কখনো কাজ থামিয়ে রাখেননি তিনি। চার দশকের সুদীর্ঘ অভিনয় যাত্রার একদিনও তাঁকে অভিনয় থেকে দূরে যেতে দেখা যায়নি। সবসময় শুটিং ফ্লোরের মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকতেন। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় এর প্রোডাকশন হাউস ম্যাজিক মোমেন্টের প্রযোজনায় স্টার জলসা দুই জনপ্রিয় ধারাবাহিক খড়কুটো এবং মোহর-এ তিনি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছিলেন। মৃত্যুর আগের দিনও তিনি খড়কুটোর শুটিং ফ্লোরে উপস্থিত হন। শেষ দিন শুটিংয়ে তার কি কোন অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করা গিয়েছিল?
পর্দা গুনগুনের মা এবং ডঃ কৌশিকের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মালবিকা সেন। অভিনেত্রী মালবিকা সেন একটি সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় জানান যে একসময় তিনি বিখ্যাত পরিচালকদের প্রচুর সিনেমায় মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এক কথায় তিনি টলিউডের একজন সুপারস্টার বললেও ভুল বলা হবে না। কিন্তু অভিনেত্রী মালবিকা সেন এর মধ্যে খড়কুটোর সেটে এসে তিনি তার সমস্ত স্টারডম সরিয়ে রেখে মাটির মানুষ হয়ে উঠতেন। সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে যেতেন। বিন্দুমাত্র অহংকার ছিল না তার মধ্যে। অভিনেত্রী নিজে অন্তর্মুখী স্বভাবের মানুষ হলেও খুব সুন্দর বন্ধুত্ব তৈরি হয় অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে।
শুটিং ফ্লোরে সারাক্ষণ হৈ-হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতেন তিনি। খুব রসিক এবং উৎসব প্রেমী মানুষ ছিলেন তিনি। অভিনেত্রী মালবিকা সেন একবারও বুঝতে পারেননি যে তার মধ্যে এত বড় অসুস্থতা বাসা বেঁধে আছে। শুটিং ফ্লোরে সবাই বলতেন যে এবার একটু তার ব্রেক নেওয়া উচিত। কিন্তু অভিনয় এছাড়া তিনি আর কিছু ভাবতেই পারতেন না। সহকর্মী হিসেবে অভিষেক চট্টোপাধ্যায় দারুন একজন মানুষ ছিলেন বলে জানান মালবিকা সেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে তিনি যথেষ্ট ভেঙে পড়েছেন।
অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের পর্দার মেয়ে গুনগুন অর্থাৎ তৃণা সাহা। অনস্ক্রিন ড্যাডিকে হারিয়ে তৃণা পিতৃহারার মত অনুভূতি হচ্ছে। শোকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন গুনগুন। বহুদিনের একজন সিনিয়র আর্টিস্ট তথা সহকর্মীকে হারিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর ভাষা নেই তার। একসঙ্গে কাজ করতে করতে তারা সকলে একসঙ্গে একটি পরিবার হয়ে উঠেছিলেন। আজ সেই পরিবারের একজন মানুষের চলে যাওয়াতে শোকস্তব্ধ গোটা খড়কুটো ইউনিট।
তৃণা সাহা জানান যে বেশ কিছুদিন ধরেই পেটের জন্য নানা শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছিলেন তিনি। অসহ্য পেটে যন্ত্রণা নিয়েও শুটিংয়ে আসেন তিনি। পরশুদিন সেটে তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুটিং করতে গিয়ে দুলাল লাহিড়ীর গায়ে বমিও করে ফেলেন তিনি। তার পরেও উনি টানা শুটিং করে গেছিলেন। এতটাই ছিল তার কাজের প্রতি ডেডিকেশন।
এক সংবাদমাধ্যমকে তৃণা সাহা তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানান,‘‘পর্দায় অভিষেকদা যেমন আমার ড্যাডি ছিল, পর্দার বাইরেও ড্যাডির মতোই ছিল। পরশু দিনও শ্যুটে আমি খুব বকাবকি করেছি। শরীরের একদম যত্ন নিচ্ছিল না।’’