Bengali SerialHoop Plus

Priyanka-Susanta: অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কার অভিযোগের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন ‘ছদ্মবেশী’-র প্রযোজক সুশান্ত দাস

কিছুদিন আগেই এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক অভিযোগ তোলেন খড়কুটো ধারাবাহিকের চিনি অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কা মিত্র। প্রিয়াঙ্কার প্রথম কাজ নায়িকা হিসেবে ‘ছদ্মবেশী’ সিরিয়াল। তিনি অভিযোগ তোলেন যখন কাজ পুরোদমে চলছে তখন সেই ধারাবাহিকের পরিচালক এবং প্রযোজক মিলে তাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করত। তাকে নাকি ফোনে সবসময় খারাপ মেসেজ পাঠানো হতো এবং শুটিংয়ের সেটে কু-প্রস্তাব দেওয়া হতো। পরিচালক এবং প্রযোজকের সেই প্রস্তাবে রাজি না হলে ভয়ানক হেনস্থার শিকার হতে হতো প্রিয়াঙ্কাকে। শুটিং সেটে তিনি ভয়ে কুঁকড়ে থাকতেন। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে সিরিয়ালটি থেকে তিনি সরে আসেন। তিনি নাকি এই ভয় টানা দু’বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো কাজ করেননি। তিনি এও জানান পরবর্তীকালে সেই পরিচালক এবং প্রযোজক তার কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন।

জি বাংলায় ছদ্মবেশী সিরিয়ালটি সম্প্রচারিত হত। এই ধারাবাহিকের প্রযোজনা করতেন বাংলা সিরিয়ালের প্রথম সারির পরিচালক এবং প্রযোজক টেন্ট সিনেমার কর্ণধার সুশান্ত দাস। তিনি এবার এই প্রসঙ্গে নীরবতা ভাঙলেন। রবিবার পোস্ট করা লম্বা একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “ছদ্মবেশী ধারাবাহিকটির প্রযোজক আমি ছিলাম এবং পরিচালক ছিলেন পীযূষ ঘোষ।” এরপরই সরাসরি প্রিয়াঙ্কা মিত্রর প্রকাশ্যে ফেসবুকে লিখতে শুরু করেন তিনি।

অভিনেত্রীর সম্পর্কে তিনি লেখেন, “প্রিয়াঙ্কা মিত্র আপনি ভুল চাল দিয়ে ফেললেন। বিখ্যাত হওয়ার উপায় হিসেবে আপনি যে পন্থা বেছে নিলেন সেটাকে বোকামি বলে। কারণ এই ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রিতে সুশান্ত দাস এমন বড় কেউ নয় যে তার সঙ্গে নাম জড়ালে আপনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাবেন। তার থেকে আপনি যদি অভিনয়টা মন দিয়ে করতেন তাহলে ভাল হত।”

অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি এই বিস্ফোরক পোস্টে সংযোজন করেন, “ বিখ্যাত হওয়ার ইচ্ছে আমার কোনও কালেই ছিল না আজও নেই। ইন্ডাস্ট্রির এক কোণে বসে মন দিয়ে কাজ করে যাওয়াটাই আমার একমাত্র কর্তব্য।”

প্রিয়াঙ্কা মিত্র যে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন এ প্রসঙ্গে সুশান্ত দাস বলেন,“২০১৬ সালে ছদ্মবেশী সিরিয়াল থেকে আপনাকে বাদ দেওয়ার কারণ হচ্ছে আপনি ঠিক করে অভিনয়টা করতে পারছিলেন না। যদিও অভিনয়টা আপনি আজও ঠিক করে করতে পারেন না। আপনাকে নিয়ে আমাদের গোটা ইউনিট বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় ধারাবাহিকটির সঙ্গে যে সকল কলাকুশলী টেকনিশিয়ানরা জড়িত ছিল তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলতে পারবে ভালো করে।”

প্রিয়াঙ্কা মিত্রর বর্তমান সহ-অভিনেতা রাজা গোস্বামী নাকি অভিনেত্রীর থেকে অসহযোগিতা পেয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে শুটিং ফ্লোর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এমনটাই সেই ফেসবুক পোস্টে বলেন সুশান্ত দাস। তিনি সংযোজন করেন,“ আপনি সেটে ঠিক কী কী করতেন সেই বিষয়ে অন্য কেউ লিখবে। আপনাকে ধারাবাহিক থেকে বাদ দিয়ে আমরা অন্যায় কোনো কাজ করিনি। আমরা প্রযোজক দিনের শেষে কখনও আমাদেরও ভুল কাস্টিং হয়ে যায়।”

অভিনেত্রী তোলা কাস্টিং কাউচ অভিযোগের প্রসঙ্গে প্রযোজক সুশান্ত দাস স্পষ্ট জানান,“ কেউ আপনাকে কোনদিনও কোনও কুপ্রস্তাব দেননি। সেটা আপনার একটা রেকর্ডিং শোনালেই বোঝা যাবে। আপনার আর আমার গতকালের কথাবার্তার রেকর্ডিং যখন প্রকাশ্যে আনবো তখনই সকলেই সত্যিটা বুঝে যাবেন। ধারাবাহিকের পরিচালক পীযূষ কে নিয়ে আপনি যা বলছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওকে আমি ১২ বছর ধরে চিনি।কাউকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার মত মানুষ নন তিনি। পীযূষ ঘোষ ফ্লোরে আপনাকে বকেছে আপনি মন দিয়ে অভিনয়টা করেননি বলে। নতুন যারা কাজে আসে তাদেরকে হাতে করে শিখিয়ে দি আমরা। তাদেরকে যেমন বকা দেওয়া হয় তেমনি ভালোবাসাও হয়। টেন্ট সিনেমার মধ্যে দিয়ে যতজন নবাগতা অভিনেত্রী এসেছেন তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসা করুন আমরা কিভাবে একজন শিল্পীর সঙ্গে ব্যবহার করি। একজন নবাগতাকে আমরা যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে কাজ শেখাই তা বোধহয় ইন্ডাস্ট্রিতে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমি এটা চ্যালেঞ্জ করতে পারি। জবা,শ্যামা বীণাপাণি,জয়ী, উমা, ফড়িং, অপু সুপারহিট এই নায়িকাদের আপনি জিজ্ঞাসা করলেই বুঝতে পারবেন আমরা কিভাবে তাদের কেরিয়ারকে একটি আকার দিয়েছি। সমাজে তাদের সম্মান বৃদ্ধিতে আমরা আরও সাহায্য করেছি।”

অভিনেত্রীর এই আচরণের জন্য সুশান্ত দাস মানহানির মামলার রজ্জু করবেন বলেও জানিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে সুশান্ত দাস লেখেন,“ আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ প্রিয়াঙ্কা মিত্র। দ্রুত আপনার চিকিৎসা হওয়া উচিত। আমরা আপনার বিরুদ্ধে যে মানহানির মামলা করতে চলেছি তাতে আপনার মানসিক সুস্থতার আবেদন রাখব আমরা।”

একইসঙ্গে আরও একটি গুরুতর অভিযোগ তোলেন তিনি। এ কাজ যে অভিনেত্রীর একার নয় তা তিনি ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,“আমার স্থির বিশ্বাস সুশান্ত দাস এবং টেন্ট সিনেমাতে বদনাম করার জন্য আপনাকে কেউ কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু এইসব করে কি লাভ হবে। আমাকে এভাবে দমিয়ে রাখা যায় না কারণ আমার মাথা অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করে না। আমি যতদিন বাঁচবো এই সব ষড়যন্ত্র থেকে ঠিক মাথা তুলে দাঁড়াব। আপনার জন্য আমার আজ চোখের জল পড়েছে, আমার এত বছরের তৈরি করা সুনামে দাগ এসেছে। আপনাকে এর জবাব দিতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে যে বন্ধুরা আপনাকে আমার বিরুদ্ধে উস্কে চেয়ে তাদেরকে জানাবেন যে আপনাকে তারা খুব ভুল চাল দিতে বলেছে।”

তার প্রযোজনা সংস্থার মধ্যে দিয়ে নতুন মুখ হয়ে উঠেছে বাংলার ঘরের মেয়ে। তিনি অভিনেত্রীকে প্রত্যেকটা মেয়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে বলেছেন যে তাকে তিনি খুব প্রস্তাব দিয়েছেন এত বছরের কেরিয়ারে। তিনি এও স্পষ্ট জানিয়ে দেন যদি অভিনেত্রী প্রমাণ করতে পারেন তিনি বা পীযূষ আপনাকে কোনভাবে হেনস্থা করেছে তাহলে তিনি ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে চলে যেতে প্রস্তুত।

তিনি যে গোটা বিষয়টাতে ক্ষুব্ধ তা তার ফেসবুক পোস্টে লেখনী দেখেই বোঝা যাচ্ছে। “ আপনি শুধু আমার কাছে লজ্জার ইন্ডাস্ট্রির সমস্ত নবাগতাদের কাছে লজ্জার, আপনি একটি জঘন্য, ঘৃণ্য মানুষ। আপনার মত মানুষ এই ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ক্ষতিকর।”

সুশান্ত দাস বলেন যে তার প্রযোজনা সংস্থার তরফ থেকে ৫০০ জনের বেশি লোকের পেট চলে। এইভাবে যে তার প্রযোজনা সংস্থা কে কালিমালিপ্ত করা যাবেনা একথাও তিনি স্পষ্ট জানিয়ে।

তার ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী এখন নাকি উল্টো সুরে গান গাইছেন প্রিয়াঙ্কা মিত্র। তিনি নাকি সুশান্ত দাসকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে বলেন সাংবাদিক তার বক্তব্যের বিকৃত ব্যাখ্যা করেছে। যদিও সুশান্ত দাস জানিয়ে দেয় যে এসবই মিথ্যে এবং এর পক্ষে তার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

তিনি এও জানিয়ে দেন যে অভিনেত্রীর সঙ্গে তার আদালতে হবে। এর পাশাপাশি তিনি খরকুটর পরিচালক স্নেহাশীষকেও সতর্ক থাকতে বলেছেন অভিনেত্রীর থেকে। তিনি এর পাশাপাশি সেই সাংবাদিককেও আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। বলা যেতে পারে এই সময় সুশান্ত দাস এর পাশে কার্যত গোটা ইন্ডাস্ট্রি এসে দাঁড়িয়েছে। তার সঙ্গে কাজ করা বিভিন্ন অভিনেতা-অভিনেত্রী ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সমর্থন জানাচ্ছেন প্রযোজককে।

 

 

Related Articles