Cartoon Network: একটা গোটা জেনারেশনের শৈশব নস্টালজিয়ায় ইতি! বন্ধ হচ্ছে কার্টুন নেটওয়ার্ক
সময়টা ছিল 1992 সাল। তখন ঘরে ঘরে ‘কেবল’ ছিল না। সাদা-কালোর টিভির প্রাচূর্যে কালার টিভি বিলাসিতা। বিকাল হলেই ছিল ফুটবল, ক্রিকেট, কবাডি, চোর-পুলিশ, চু-কিত কিত-এর পাশাপাশি হিন্দি দূরদর্শনের কিছু ‘টম অ্যান্ড জেরি’ সময়। সময়কাল হঠাৎই বেড়ে গেল। রমরমিয়ে বিনোদনের নতুন দিশা নিয়ে এল ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’ চ্যানেল। এমন একটি চ্যানেল যাতে শুধুই থাকবে ছোটদের কল্পনার আধিপত্য। বড়দের সাথে ভাগ করে নিতে হবে না সময়। শুধু দরকার ‘কেবল’। এমন একটিও পরিবার ছিল না যেখানে বাড়ির খুদে সদস্যরা হাতে-পায়ে ধরেনি ‘কেবল’ নেওয়ার জন্য। মা-বাবাদের শর্ত ছিল, রেজাল্ট ভালো হলে বাড়িতে আসবে ‘কেবল’। অর্থাৎ আসবে ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’। তবে বাড়িতে কেবল-এর মাধ্যমে কার্টুন নেটওয়ার্ক এলেও শুরু হয়ে গেল রিমোট দখলের লড়াই। ভাই-বোনদের হাতাহাতি তো নিত্য ঘটনা। তার সাথেই ‘কার্টুনের নেশা’-র মতো শব্দের উৎপত্তি ও মা-বাবাদের অবধারিত শাসন। সারাদিন স্কুলের ফাঁকে স্কুবি, ফ্লিন্টস্টোন, ডেক্সটার, পপেই-দের আনাগোনা মনে। বাড়ি ফিরেই স্কুল ব্যাগ ফেলে টিভির সামনে বসে দেখা পপেই-এর কান্ডকারখানা। এটা ছিল ফ্ল্যাশব্যাক।
View this post on Instagram
2022 সালে নেওয়া হয়ে গেল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। বহু স্মৃতি বুকে নিয়ে, নাইন্টিজ কিডজ-দের নস্টালজিয়ায় ভাসিয়ে বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে কার্টুন নেটওয়ার্ক। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সেই খবর। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অস্তিত্ব হারাতে চলেছে কার্টুন নেটওয়ার্ক। বহু আগেই ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’-এর নাম ছোট করে ‘সিএন’ করে দেওয়া হয়েছিল। এর আগেও বারবার ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর ঘোরাফেরা করেছে যা বিশ্ববাসীর কাছে ছিল অবিশ্বাস্য। কিন্তু এবার সত্যি হয়ে গেল সেই গুজব।
এইচআইটিসি জানাচ্ছে, ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর কার্টুন নেটওয়ার্কের ছাব্বিশ শতাংশ কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। দুটি সংস্থার চুক্তিবদ্ধ হওয়ার মূল শর্ত হল কার্টুন নেটওয়ার্কের অবলুপ্তি। হঠাৎই কেন এত বড় সিদ্ধান্ত নিল ওয়ার্নার ব্রাদার্স তা নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, মোবাইল গেম কমিয়ে দিয়েছে কার্টুনের জনপ্রিয়তা যা একেবারেই ভুল ধারণা। এখনও অবধি বহু মধ্যবয়সী মানুষ দিনের শেষে কার্টুন দেখতে পছন্দ করেন। ঘটনাটি অদ্ভুত নয়। কারণ প্রতিটি মানুষের ভিতরেই থাকে এক শৈশব যা কার্টুনের মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য উপভোগ করেন তাঁরা। এমনকি ইদানিং শিশুদের খাওয়ার সময় কার্টুন চালিয়ে দেওয়া হয় মোবাইলে। কার্টুন দেখার বাহানায় পুষ্টিকর খাবার কখন খুদের অজান্তেই গিয়ে পৌঁছে যায় তার শরীরে।
Thank you Cartoon Network for making childhood awesome.
1992-2022#CartoonNetwork pic.twitter.com/G5luwzvRrs— Manoj Chokhande (@ChokhandeManoj) October 14, 2022
এমনকি বিভিন্ন স্কুলও সময় বিশেষে আশ্রয় নিয়েছে কার্টুনের। করোনা অতিমারীর পর স্কুল খুললে সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় (Debabrata Mukherjee) ছোট্ট শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি হলঘরের দেওয়ালে স্ক্রিন লাগিয়ে প্রতিদিন আধ ঘনটা করে ফিল্ম দেখানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল বিভিন্ন শিক্ষামূলক কার্টুন, চার্লি চ্যাপলিন অভিনীত নির্বাক চলচ্চিত্র। এমনকি অ্যাকশন গানের সাথে এক্সারসাইজের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এর ফলে শিশুদের মন ও শরীর সুগঠিত হতে পারার সঠিক রাস্তা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেছিলেন দেবব্রতবাবু।
বিভিন্ন বিপণন সংস্থাতেও কার্টুনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ‘কিন্ডার জয়’-এর মতো প্রোডাক্টের সাথে কার্টুন চরিত্রমূলক খেলনা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ‘ম্যাকডোনাল্ডস’-এর শিশুদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি মিলেও থাকে কার্টুন চরিত্রের ভিত্তিতে তৈরি খেলনা। কার্টুনের ঝলমলানি অথচ মজাদার ভঙ্গিমা বাড়ায় যে কোন প্রোডাক্টের গ্রহণযোগ্যতা। তাহলে কার্টুনের এত চাহিদা সত্ত্বেও কি করে কার্টুন নেটওয়ার্কের মতো একটি চ্যানেলকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? সত্যিই কি এই সিদ্ধান্ত পেশাদার নাকি বিজনেস রাইভ্যালরি? বিশ্ব জুড়ে একাধিক কার্টুনপ্রেমীরা ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’-এর উদ্দেশ্যে লিখছেন ‘রেস্ট ইন পিস’। কিন্তু কার্টুন কি সত্যিই অন্তর্হিত করে দেওয়া যায় মানবসভ্যতা থেকে? কার্টুনপ্রেমীদের উচিত ‘কার্টুন নেটওয়ার্ক’-এর শেষকৃত্য না করে এটিকে চ্যানেলের পরিবর্তে একটি স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসাবে ফেরত নিয়ে আসার আবেদন করা। এর ফলে আগামী প্রজন্ম স্কুবি, ডেক্সটার, পপেই, ফ্লিন্টস্টোন-দের কান্ডকারখানা ও শিক্ষামূলক বার্তা থেকে বঞ্চিত হবে না।
View this post on Instagram