বলিউডে ব্যর্থ উত্তম কুমার! নেপোটিজমের কাঁটায় বিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলার মহানায়ক

বাংলা সিনেমা এক উজ্জ্বল নক্ষত্র উত্তম কুমার। উত্তম-কুমারের-সিনেমা যা আজও বাঙালির একটা নষ্টালজিয়ায় পরিচয় দেয়। তবে সকলের চোখের মনি উত্তম কুমার হতে কিন্তু অনেকটা পথ পেরোতে হয়েছে। এই সাফল্য খুব একটা সহজে আসেনি। প্রথম জীবনে একের পর এক ব্যর্থ সিনেমার পরে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমাটির মাধ্যমে তিনি একেবারে বাঙালির মনের মণিকোঠায় পৌঁছে যান। এরপরে চলতে থাকে একের পর এক হিট সিনেমা। এরপরে উত্তম কুমারের-সিনেমা মানেই যে জনপ্রিয়তা পাবেই একথা একেবারে নিশ্চিত। কিন্তু চূড়ান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলেন যখন ১৯৬৭ সালে, ‘ছোটি সি মুলাকাত’ সিনেমাটি করলেন। সিনেমাটিক কেন ব্যর্থ হলো এর পেছনে আসল কারণটি কি, এই নিয়ে কাটা ছেঁড়া করতে গিয়ে অনেকেই বললেন মূল কারণ ছিল উত্তম কুমারের হিন্দি উচ্চারণ। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল নানান রকম জটিল ধাঁধা। আশাপূর্ণা দেবীর কাহিনী নিয়ে অনেক আগেই মুক্তি পেয়েছে উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেনের অসাধারণ একটি অভিনীত সিনেমা ‘অগ্নিপরীক্ষা’। সেই একই কাহিনী কে কেন্দ্র করে তৈরি করেছিলেন ‘ছোটি সি মুলাকাত’। সিনেমাটির যথেষ্ট মন দিয়েই করার চেষ্টা করেছিলেন মহানায়ক। এই সিনেমাটি তৈরি করার পিছনে অনেক অর্থ ব্যয় করেন। আশা করেছিলেন একসময়ের সিনেমা সুপার ডুপার হিট হবে আর সেই টাকা দিয়েই সমস্ত ঋণ শোধ করে দেবেন।

সিনেমাটির শুরু থেকেই দ্বন্দ্ব বেঁধে ছিল। মতানৈক্য জটিলতা ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করে। সিনেমার কলাকুশলী নির্বাচন এবং গানের ক্ষেত্রেও মহানায়ক কোনো রকম কার্পণ্যতা করেননি। সংগীত পরিচালনা করেছিলেন জয়কিষণ, গান গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে, মহম্মদ রফি। অভিনেত্রীর জায়গা দিয়েছিলেন বৈজন্তীমালাকে। সব মিলিয়ে তিনি বোম্বেতে সামলাতে না পেরে তার ভাই তরুণ কুমার কে বোম্বে যেতে বলে। তরুণ কুমার বোম্বেতে গিয়ে দেখেন পুরো বিষয়টিতেই রয়েছে ষড়যন্ত্র। বৈজন্তী মালা মেকআপ করতে সময় লাগত পাক্কা দু’ঘণ্টা, যে কারণে সিনেমার কাজ এগোচ্ছিল বড্ড ধীরগতিতে আর টাকাও খরচ হচ্ছিল হু হু করে। এর প্রতিবাদ করেছিলেন তরুণ কুমার। তরুণ কুমারের উপস্থিতিতে এই অনিয়ম খানিকটা কমে ছিল। সবমিলিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ‘ছোটিসি মুলাকাত’।

মহানায়কের মাথার ওপরে তখন কয়েক লক্ষ টাকার দেনা। তবে একটা সুখের কথা হল বিদেশের মাটিতে একটু সাফল্যের মুখ দেখতে পেয়েছিল ‘ছোটিসি মুলাকাত’, সেখান থেকে খানিকটা দেনার টাকা জোগাড় হয়। তবে হিন্দি সিনেমাতে মহানায়ক ঠিক উপযুক্ত নয় বলে যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তারা বোধহয় সত্যি সত্যি শক্তি সামন্তের অমানুষ এবং আনন্দ আশ্রম হিন্দি ভাষায় দেখেননি। এই সিনেমা দুটি বাংলা, হিন্দী দুটি ভাষাতেই অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। মহানায়ক উত্তম কুমার বাঙালির মনের মণিকোঠায় চিরকাল থাকবে। হিন্দিতে তথাকথিত কূটকচালি পরিবেশ বা জটিলতার জন্য হয়তো সেই মুহূর্তে হিন্দিতে জায়গা করে উঠতে পারেননি মহানায়ক। কিন্তু তাতে কি, বাঙালিরা চিরকাল উত্তম কুমারের গুনমুগ্ধ দর্শক হয়েই থেকে যাবে।

Leave a Comment