মায়ের সাথে গ্রামে গ্রামে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করা ছেলেটি আজ IAS অফিসার

মনের জোর থাকলে সব কাজ করাই সম্ভব হয়। এটা প্রমাণিত হয়ে গেল একজন মা সে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে হাতের চুড়ি বিক্রি করেন। সেই মায়ের ছেলে আজ আই.এ.এস অফিসার। এই ঘটনাটি রমেশ গোলাপ নামে এক যুবকের কাহিনী। তিনি ‘রামু’ নামেই তাদের গ্রামে পরিচিত। মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলায় বরশি তালুকে মৌহাগাঁও গ্রামে তার জন্ম। তার বাবার একটি ছোট্ট সাইকেল সারানোর দোকান ছিল। তাদের ছোট সংসার চালানোর জন্য এই দোকানটি যথেষ্ট ছিল। কিন্তু নিয়মিত মদ্যপান করার জন্য তার বাবার শরীর ক্রমাগত ভাঙতে শুরু করে। তাই তার পক্ষেই দোকানটি চালানো কষ্টকর হয়ে ওঠে।

সংসারকে চালানোর জন্য রামুর মা চুড়ি বিক্রি করা শুরু করেন। রামুর বাঁ পা পোলিওতে আক্রান্ত। তার সত্বেও রামু এবং তার ছোট ভাই তার মায়ের এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়। দ্বাদশ শ্রেণীর কেমিস্ট্রি পরীক্ষায় ৪০ এর মধ্যে ৩৫ পান তিনি। পরীক্ষায় সাফল্য পাবার পরে সেই শিক্ষক তার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাকে আরো ভালো পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দেন যার ফলে ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি ৮৮.৫% নম্বর নিয়ে পাস করেন।

২০০৯ সালে তিনি একটি শিক্ষকতায় পেশায় আসে। এবং নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। সরকারি ইন্দিরা আবাস যোজনা – তে তারা একটি দু’টি ঘরের বাড়ি ও পান। সেই সময় তিনি তার মাকে দেখেছিলেন কিভাবে সরকারি অফিস গুলিতে ঘুরে ঘুরে এই বাড়ির জন্য প্রচেষ্টা করেছিলে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি তার স্বপ্ন পূরণের প্রথম পদক্ষেপ এগিয়ে ছিলেন। গ্রামের সেল্ফ হেল্প গ্রুপ থেকে লোন তুলে তিনি পুনেতে গিয়েছিলেন ইউপিএসসি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে। যার জন্য ছমাস তিনি তার চাকরি থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার সময় তিনি গ্রামবাসীদের সামনে কথা দিয়েছিলেন তিনি গ্রামের তবেই ফিরে আসবেন যেদিন তিনি গ্রামের একজন ভালো অফিসার হবেন। ২০১২ সালে আইএএস পরীক্ষা তে রামু নির্বাচিত হন। ১,৮০০ এর মধ্যে তিনি ১,২৪৪ স্কোর করেন।

ছেলেকে ঘিরে জনতার উচ্ছ্বাস

ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি প্রবল ইচ্ছা এবং টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে বড় হয়ে ওঠা রামু আজ বড় সরকারী অফিসার। অভাবের সংসারে আজ মায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে রামু। মায়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে সে। সে প্রমাণ করে দিয়েছে মনের জোর থাকলে কোন বাধা বিপত্তি তার ইচ্ছাকে আটকাতে পারে না। সে সবার আদর্শ হয়ে উঠতে পেরেছে।