দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণী কালিবাড়ির অসীম গুণের মাহাত্ম্য, রইল অজানা ইতিহাস
কলকাতার অদূরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির, জেনে নিন এই মন্দিরের রহস্য
উত্তর কলকাতা সন্নিহিত উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কামারহাটি শহরে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মা এর বিখ্যাত কালীমন্দির অবস্থিত। রানী রাসমণি ১৮৫৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরের কালী ‘ভবতারিণী’ নামে পরিচিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট যোগী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এই মন্দিরে কালী সাধনা করতেন। রানী রাসমণি কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়েই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন, এমন কথিত রয়েছে। মন্দির প্রতিষ্ঠা কালীন রামকৃষ্ণ পরমহংসের দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায় রানীকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। রামকুমার চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এই দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির এর প্রথম প্রধান পুরোহিত।
তারপরে ১৮৫৭ – ১৮৫৮ সালে ছোটবেলায় রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরে পূজার ভার গ্রহণ করেন। মন্দিরের ২০ একর জমিটি জন হেস্টি নামে এক ইংরেজ এর কাছ থেকে কেনা হয়। জায়গাটি পরিচিত ছিল ‘সাহেবান বাগিচা’ নামে। এইখানকার একটি অংশ ছিল কচ্ছপ আকার মুসলমান গোরস্থান। স্থানটি সাধনার জন্য একেবারে উপযুক্ত। তারপরে ৮ বছরে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে মন্দিরটি তৈরি করা হয়। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নান যাত্রার দিন মহা সমারোহে মন্দিরের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই মন্দিরের মূর্তি ‘ভবতারিণী মূর্তি’ নামে পরিচিত। রামকুমার চট্টোপাধ্যায় দেহ ত্যাগ করলে, শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের পুরোহিতের জায়গা নেন। তার সহধর্মিনী সারদা দেবীর মন্দির চত্বরের বাইরে একটি নহবৎখানা তৈরি করেন। এই নহবৎখানা সারদা দেবীর মন্দির নামে পরিচিত। ১৮৮৬ সালে পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে অবস্থান করেন
মূল মন্দিরটি ছাড়াও মন্দির তৈরি চত্বরে রয়েছে ১২ টি শিব মন্দির। এই মন্দিরগুলির স্থাপত্যশৈলী আটচালা স্থাপত্যরীতির ন্যায় বানানো। মন্দির চত্বরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে রাধাকান্ত মন্দির। এই মন্দিরের উপর সিংহাসনে ২১ ইঞ্চির কৃষ্ণ, ১৬ ইঞ্চির রাধামূর্তি এবং রাসমণির গৃহদেবতা রঘুবীর প্রতিষ্ঠিত আছেন। মূল মন্দিরটি তিনতলা। উপরের দুই তলায় নটি মন্দির চূড়া। মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। দালানের উপর রয়েছে গর্ভগৃহ। গর্ভগৃহের মধ্যে রয়েছেন মা ভবতারিণী। শিব বক্ষের ওপরে মা দণ্ডায়মান। একটি রুপোর সহস্রদল পদ্মের উপর মূর্তিদ্বয় স্থাপিত। শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মানুষই নয় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের আগমন হয় এই দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দিরে।