মাঝরাতে শোনা যায় পায়ের আওয়াজ, অজানা রহস্য লুকিয়ে রয়েছে গা ছমছমে ভুতের কেল্লায়
রাজস্থানের আলবার জেলায় অবস্থিত ভানগড় এশিয়ার ভয়ঙ্কর জায়গা গুলির মধ্যে একটি
রাজস্থানের আলবার জেলায় অবস্থিত ভানগড় এশিয়ার ভয়ঙ্কর জায়গা গুলির মধ্যে একটি। পৃথিবীতে ভূত রয়েছে এমনটা হয়তো বিজ্ঞান বিশ্বাস করে না। হয়ত ভূত নেই কিন্তু এমন কিছু আছে যাকে সত্যিই অস্বীকার করা সব সময় সম্ভব হয়না। নাহলে সরকারি নির্দেশে এই দুর্গের মধ্যে ৬ টার পরে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ভূত বা কোন নেগেটিভ শক্তি যদি নাই থাকতো তাহলে কেন এমন নির্দেশ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আজ আমাদের গন্তব্য স্থল রাজস্থানের ভানগড় দুর্গ। গভীর রাতে এই কেল্লার ভিতরে নাকি নর্তকীদের প্রেতাত্মার নাচন কোদন শুরু হয়ে যায়। যা সাধারণ মানুষের গ্রহণ করা সত্যি বড্ড ভয়ানক। আমরা রাজস্থানে অনেকেই বেড়াতে গেছি। মরুভূমি আমাদেরকে বারবারই আকর্ষণ করেছে। কিন্তু এমন মরুশহর এর মধ্যেও যে এমন ভয়ঙ্কর একটা দুর্গ থাকতে পারে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে যারা রহস্য ভালোবাসেন, মনেপ্রাণে একটু সাহসীও আছেন তারা ঘুরে আসতে পারেন রাজস্থানের এই দুর্গে। প্রবেশ বারণ সত্বেও অনেকে দুর্গের পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরিণতি ভালো হয়নি। তারা কেউই বেঁচে ফিরে আসেননি। এখানে পর্যটকরা বেড়াতে গেলেও সূর্যাস্তের আগে ফিরে আসেন। একে ঘিরে রয়েছে নানা প্রচলিত ধারণা।
একসময় প্রসিদ্ধ নগরী ছিল ভানগড়। কিন্তু একজন অনাচারী, অসৎ, তান্ত্রিকের জন্য এই শহরটি একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়। ১৫৭৩ সালে রাজা ভগবন্ত দাস কনিষ্ঠপুত্র মাধ সিংহ এই নগর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখানকার রাজকুমারী রত্নাবলী ছিলেন অসম্ভব সুন্দরী। সিন্ধিয়া নামে এক তান্ত্রিক রাজকুমারী রূপে পাগল হয়ে যান। তারপরে কালা জাদুর বসে তিনি রত্নাবলীকে নিজের করে পেতে চান। কিন্তু অপরূপ সুন্দর রাজকুমারীকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, সেই জন্য তিনি ফন্দি বাঁধতে থাকেন। রাজকুমারীর এক দাসীকে সিন্ধিয়া মন্ত্র পড়া তেল দেন। এই তেলের জোরেই নাকি রাজকুমারী তার কাছে চলে যাবে। কিন্তু তেল নিয়ে আসার সময় সেই কাঁচের শিশি হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। আর সেই তেল গড়িয়ে চলে যায় তান্ত্রিকের দিকে। এই তেলের জন্যই নাকি তান্ত্রিকের মৃত্যু হয়। কথিত আছে, এই তান্ত্রিক এর জন্যই নাকি ভানগড় পুরো বিনাশ হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা তান্ত্রিক এর মৃত্যুর পরের দিনই রাজকুমারী রত্নাবলী শহরের সবাই মারা যান। কিন্তু কেন এমন ঘটনা হয়েছিল তা আজও কারো জানা নেই। অনেকেই বিশ্বাস করেন, রহস্যজনকভাবে এমন মৃত্যুর কারণে অতৃপ্ত আত্মারা রয়ে গেছে। ভানগড় কেল্লা দরজার উচ্চতা ৩০ ফুট। ঢোকার মুখে রয়েছে সুন্দর বাগান। এই বাগানে ফুলের সুবাস কখনো নষ্ট হয় না এমনকি প্রচন্ড খরায় যখন চারিদিকে শুকনো মাটি ফুটিফাটা তখনও এই ফুল একেবারে শুকিয়ে যায় না।
দুর্গের ঠিক বাইরে একটি সুন্দর কুয়ো রয়েছে। তবে কুয়োতে জল নেই তা বহুদিন আগেই শুকিয়ে একেবারে ফুটিফাটা। কুয়োর একটি গোলাকৃতি বিশাল ঘিরে রয়েছে পাথরের দেওয়াল। মাঝে রয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। কিন্তু অদ্ভুতভাবে সেই গাছের ছায়া কুয়োর ওপর পড়ে না। শোনা যায়, এই সময় প্রচুর লোক কুয়োতে মারা গিয়েছিল, তার জন্যই বোধহয় এমন ভয়ংকর ঘটনা। অনেকেই নাকি কুয়োর সামনে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে কি সেই ভয়ঙ্কর কুয়ো এখনো মানুষের রক্তের স্বাদ পেতে চায়? ভানগড়ে ভূত আছে কি নেই এ প্রশ্নের উত্তর বোধহয় কারোর কাছে নেই। কিন্তু এখনো সপ্তদশ শতাব্দী থেকে তৈরি হওয়া রাজস্থানের ভানগড় দুর্গ ভুতুড়ে স্থান গুলির মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে যারা ভুত বিশ্বাস করেন না, তারা এখানে একবার চাক্ষুষ দেখতে পারেন। বলা যায় না, এখান থেকে ঘুরে আসার পরে আপনার হয়তো সত্যি সত্যি ভূতের নাম একটু গা ছমছম করতে পারে। (এই প্রতিবেদনটি প্যারানরমাল অ্যাক্টিভিটিস্টদের সমীক্ষা অনুযায়ী বর্ণিত, কোনোরকম ভীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়।)