মানবিকতার নজির, সুইচ বোর্ডে পাখির বাসা বাঁচাতে টানা ৩৫ দিন আলোই জ্বালালেন না গ্রামবাসীরা
তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলায় পোত্থাকুদু গ্রামে ঘটেছে এক অসাধারণ ঘটনা। এই গ্রামেরই কারুপ্পু রাজা নামের এক গ্রামবাসী কয়েকদিন ধরে লক্ষ্য করছিলেন সুইচ বোর্ড এর কাছাকাছি একটি ছোট্ট পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এই সুইচ বোর্ড রাস্তার ৩৫ টি আলোর সংযোগ করা আছে। এই ভদ্রলোক যিনি প্রতিদিন সন্ধে ছটায় লাইট জ্বালিয়ে আবার ভোর পাঁচটার সময় বন্ধ করেন। এটাই তার একেবারে ছোটবেলাকার নিয়ম। তিনি জানান, তিনি যখন রোজ দুপুর বেলা তার বাড়ি থেকে বের হন তখন তিনি লক্ষ্য করেন একটি ছোট নীল রঙের পাখি এই সুইচ বোর্ডের চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খানিকটা কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে, তার অনেকটা কাছাকাছি গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, ওই সুইচবোর্ডের কাছে ওই ছোট্ট পাখিটি কতগুলি খড় কুটো জড়ো করেছে। তিনি অবশ্য জানেন না পাখিটির কি নাম, তবে পাখিটি যে নতুন বাসা বানাতে চলেছে এই বিষয়টি তার কাছে একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং তারপর তার তিনদিন যতবারই সে এই রাস্তার আলো জ্বালাতে গেছেন, দেখেছেন পাখিটি খরকুটোকে ফেলে রেখে উড়ে গেছে নিজের বাঁচার তাগিদে।
কিন্তু চমৎকার ঘটলো চতুর্থ দিনে। তিনি গিয়ে দেখতে পান সব্জে নীল রংয়ের তিনটি ছোট ছোট ডিম পেড়েছে পাখিটি। কিন্তু এই পাখিটিকে বাঁচানোর জন্য স্ট্রীট লাইট গুলি বন্ধ করার ভীষণ প্রয়োজন ছিল। রাস্তার আলো বন্ধ করলে অন্ধকারের মধ্যে প্রায় একশটিরও বেশি বাড়ির মানুষের অসুবিধা হতে পারে। সবকিছু চিন্তা করেই তিনি এই পাখিটির বাসার সুন্দর ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে তিনি তার গ্রামবাসীদের কাছে পাঠান এবং তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, কিভাবে তাদের একটু প্রচেষ্টাতেই এই পাখিটি এবং তার ডিম ছানারা বেঁচে যেতে পারে। অনেকেই এই যুবকটি কথায় রাজি হল। কিন্তু অনেকেই আবার বিষয়টাকে একটু বাড়াবাড়ি হিসাবে মনে করে।
কিছুদিন পরে পঞ্চায়েতের মাথা আর্সুমান এবং কালেস্বারি তারাই জায়গাটি দেখে যান। তবে শেষ পর্যন্ত তারা রাজি হন। তারা ৪০ দিন অর্থাৎ যতদিন না ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে সেই বাচ্চা উড়ে যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তারা কেউ রাস্তার আলো জ্বালাননি। আশেপাশের গ্রামবাসীরা যখন শুনেছিলেন, যে শুধুমাত্র একটা ছোট্ট পাখির বাসার জন্য এই গ্রামের লোকেরা ৪০ দিন আলো জ্বালান নি, তারা প্রথমে একদমই বিশ্বাস করতে পারছিলেন। পরে অবশ্য এ বিষয়ে থেকে সবাই বাহবা জানিয়েছেন।