সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়েছেন বাবা! সংসারের হাল ধরতে বাস চালাচ্ছেন মেয়ে
মহিলারা চাইলে অনেক কিছু করতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া গেল আরও একবার। বরানগরের মেয়ে কল্পনা মন্ডল আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন। তার স্বপ্ন ছিল অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করবে এবং চাকরি করবে। কিন্তু মাঝপথেই তার স্বপ্নকে ভেঙে দিতে হল বাধ্য হয়ে।
তার বাবা ছিল সংসারের একমাত্র রোজগেরে ব্যাক্তি। দু’বছর আগে তার বাবা এক দুর্ঘটনায় পায়ে বড়সড় আঘাত পান। এরপর সংসারের হাল ধরতে নেমে পড়েন তার মেয়ে কল্পনা মন্ডল। যে বয়সে অন্যান্য মেয়েরা সাজগোজ কিংবা পড়াশোনা করতে ব্যস্ত সেই সময়ে তাকে বাসের স্টিয়ারিং ধরতে হলো। তিনি বাস চালিয়ে সংসার চালান। কল্পনা মন্ডল এর পরিবারের সদস্য সংখ্যা কিন্তু কম নয় বাবা-মা ছাড়াও রয়েছে দুইজন দাদা ও দিদি এবং সে।
ভাই-বোনেদের মধ্যে সবথেকে ছোট তিনি। কিন্তু তার বাবার অসুস্থতায় সংসারের হাল ধরলেন তিনি। সকাল সাতটায় ঘুম ভাঙার পর তিনি তার মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করেন এবং তারপর বেরিয়ে পড়েন বাস নিয়ে। শুরুর দিকে অনেকেই মনে করেছিলেন তার দ্বারাই এ কাজ হবে না। কিন্তু কল্পনার পাশে ছিল তার পরিবার। বর্তমানে তিনি এখন প্রতিদিন এসপ্ল্যানেড-বরানগর রুটে বাস চালান।
প্রথমদিকে বাস মালিকেরা তাকে বাস দিতে চাইছিলেন না এবং খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অবশেষে অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাস পান তিনি। কল্পনার বাবা সুভাষ বাবু জানান, ছোট মেয়ে তার গর্ব। কিন্তু অনেক পেসার মধ্যেও হঠাৎ করে বাস চালানোর কথা তার মাথায় এলো কীভাবে? এর উত্তরে সুভাষ বাবু বলেন, তিনি কয়েক বছর আগে চকলেট কারখানায় কাজ করলেও আর্থিক অনটনের কারণে তার এক বন্ধুর সহযোগিতায় বাস চালাতেন তিনি। এবং সেই সময় তার মেয়ে কল্পনা পুরো বিষয়টি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। কিন্তু এটি যে একসময় কাজে লেগে যাবে তা তিনি বা তার পরিবার কেউ কোনোদিন ভাবতে পারেননি। কল্পনা মন্ডল সাহসী হয়ে প্রতিনিয়ত বাস চালিয়ে যাচ্ছেন দক্ষতার সঙ্গে। তাই এখন সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় কল্পনা বাস চালাচ্ছে সেই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। বহু মেয়েদের মনের মধ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এই কল্পনা।