৪৮০০ বছর ধরে মায়ের কঙ্কাল আগলে রেখেছে সন্তানকে, মাটি খুঁড়ে উদ্ধার হল মূল রহস্য
২০১৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তাইওয়ানের পশ্চিম দিকের একটি সমুদ্রতটে খনন করা হচ্ছিল। এইখানে খননকার্যের ফলে দুটি কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে
যুগ যুগ ধরে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মাটির নিচে থাকা অজানা ইতিহাসকে খনন করে চলেছেন। খুঁজে বের করে নিয়ে এসেছেন প্রাচীন সভ্যতার আদব-কায়দা, জীবনযাপন, মানব দেহের গঠন। তাদের উদ্ধার করা প্রত্নতত্ত্বের ওপরে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে সমাজ ও সভ্যতার ভিত। ২০১৪ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তাইওয়ানের পশ্চিম দিকের একটি সমুদ্রতটে খনন করা হচ্ছিল। এইখানে খননকার্যের ফলে দুটি কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে।
দুটি কঙ্কাল এর আগেও অনেক জায়গা থেকে পাওয়া গেছে অনেক কঙ্কালসার দেহ। কিন্তু এই দুটি কঙ্কাল একটি অদ্ভুত ধরনের। প্রায় ৪,৮০০ বছর পুরনো এই কঙ্কাল দুটির বিশেষত্ব হল, বড় কঙ্কালটি একজন মায়ের, ছোট কঙ্কালটি তারই কোলে রাখা একটি শিশুর। পরম স্নেহে বুকের কাছে আগলে রেখেছে মা। শিশুটির বয়স ছ’ মাস। কঙ্কালসার চেহারাটির মধ্যে দিয়েও মায়ের পরম স্নেহ প্রকাশ পাচ্ছে। মায়ের মুখটি শিশুটির দিকে করা। গবেষকরা বলছেন হয়তো এই মা এবং তার সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়া হয়েছিল। তবে নিশ্চিত করে এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না। এর জন্য বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন। এদের মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও, প্রস্তর যুগীয় সংস্কৃতিতে এটি যে একটি বিরল ঘটনা, তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।
তাইওয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ সাইন্স এর গবেষক চু-হেই-লি এই খননের কাজটি করেছিলেন। তাই যুগের একটি নিওলিথিক প্রত্নতাত্বিক স্থলে এই খননকার্যটি তিনি এবং তার গবেষকদল শুরু করেন। এই জায়গার নাম ছিল আন-হো। অতীতের আরো তথ্যাদি থেকে জানা যায়, এই অঞ্চল থেকে ২০০ টিরও বেশি সার্কের দাঁত, ছাইয়ের গাদা ইত্যাদি পাওয়া গেছে। এই সব প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান থেকে সেখানে বসবাসকারী মানুষের জীবন সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা করা যেতে পারে। এই আন-হো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থলে মানুষরা ছিলেন ডাবেনকেং সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
এই সংস্কৃতির মানুষরাই ছিল তাইওয়ানের প্রথম কৃষিজীবী মানুষ। যারা মূলত ৫,০০০ বছর আগে চিনের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে এখানে এসেছিলেন। এই সংস্কৃতিটি তাইওয়ানে খুঁজে পাওয়া সংস্কৃতির গুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো নিওলিথিক সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট একটি উদাহরণ। এই প্রজাতির মানুষ এখন তাইওয়ানে এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু দ্বীপে বসবাস করেন। এই কঙ্কালগুলি সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল এটা জানতে প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনেকটাই সহায়তা করেছে। এই দুটি কঙ্কাল ছাড়াও আরো ৪৮ টি কবর খুঁজে পাওয়া গেছে। যার মধ্যে পাঁচটি ছোট বাচ্চার। মৃতদেহের পাশাপাশি কবরস্থান থেকে উদ্ধার হয়েছে নানা প্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং মাটির পাত্র। তবে এই তাইওয়ানের সঙ্গে ডাবেনকেং সংস্কৃতির কি সম্পর্ক ছিল তা জানতে এখনও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন।