চিরকালীন রূপোলি পর্দা মানেই আলো কেড়ে নেন নায়ক-নায়িকারা। কিন্তু অন্তরালে থেকে যান নায়ক-নায়িকার চরিত্রগুলিকে নিজেদের সমর্থনের মাধ্যমে এগিয়ে দেওয়া ক্যারেক্টার আর্টিস্টরা। অথচ তাঁরা ছাড়া তৈরীই হত না কাহিনীর প্রেক্ষাপট। এমনই একজন অভিনেত্রীর নাম সোমা দে (soma dey) যিনি অপরিহার্য হয়ে রয়ে গেছেন অভিনয় জগতে।
সোমার ইচ্ছা ছিল গায়িকা হওয়ার। কিন্তু পরিচালক অর্চন চক্রবর্তী (Archan chakraborty) একটি স্টুডিওয় তাঁর ফটো দেখে সোমাকে তাঁর ফিল্মে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব দেন। 1972 সালে অর্চন চক্রবর্তী পরিচালিত ফিল্ম ‘জীবনের জটিলতা’-র মাধ্যমে টলিউডে অভিনয় শুরু করলেও সোমা অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ফিল্ম ছিল ‘হারায়ে খুঁজি’। ‘হারায়ে খুঁজি’ মুক্তি পেয়েছিল 1974 সালে। একই বছরে মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত আরেকটি ফিল্ম ‘জন্মভূমি’। সোমার অভিনয় পরিচালকদের কাছে আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। তাঁর ‘পাশের বাড়ির মেয়ে’-র ইমেজ জয় করে নিয়েছিল দর্শকদের মন। ফলে 1976 সালে সোমা অভিনীত চারটি ফিল্ম পরপর মুক্তি পেয়েছিল। যেগুলির নাম ‘বিল্বমঙ্গল’, ‘বন্দী বিধাতা’, ‘শঙ্খবিষ’, ‘সূদুর নীহারিকা’। চারটি ফিল্মই যথেষ্ট হিট হয়েছিল। নায়িকা হিসাবে এগুলি ছিল সোমার মাইলস্টোন। এরপর সোমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। 1974 সাল থেকে এখনও অবধি সোমা ষাটটির বেশি ফিল্ম ও তিরিশটির বেশি টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে তরুণ মজুমদার (Tarun Majumder) পরিচালিত ফিল্ম ‘শহর থেকে দূরে’-র জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন সোমা। মুহূর্তে সোমা অভিনয় করছেন ‘যমুনা ঢাকি’ সিরিয়ালে বিন্দুবাসিনী দেবীর চরিত্রে। ছোট পর্দায় সোমার আভিজাত্য সম্পন্ন অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে।
তবে সোমা দেখতে যতটা শান্ত, মনে মনে ঠিক ততটাই সাহসী। অনেকেই জানেন না, সোমার ফিল্মে অভিনয় করাতে তাঁর পরিবারের আপত্তি ছিল। কিন্তু সোমা তা মানতে চাননি। তিনি পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে ‘ওয়াইডব্লুসিএ’-এর বোর্ডিং-এ ততদিন অবধি ছিলেন যতদিন না তাঁর প্রথম সুপারহিট ফিল্ম মুক্তি পেয়েছিল। সোমা জানতেন, নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে গেলে আগে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। প্রথম ফিল্ম সুপারহিট হওয়ার পর সোমার পরিবার তাঁর অভিনয়ে আর আপত্তি করেননি। শিক্ষাক্ষেত্রেও কিন্তু পিছিয়ে থাকেননি সোমা। স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে স্নাতক সোমা সাহিত্য, অঙ্কন, রবীন্দ্রসঙ্গীতেও যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন। তাঁর এই প্রতিভা পরবর্তীকালে সঞ্চারিত হয়েছে তাঁর মেয়ে যাজ্ঞসেনী (jagyaseni)-র মধ্যে। যাজ্ঞসেনী একজন নামী নৃত্যশিল্পী। এছাড়াও সোমার ছেলে রয়েছে যাঁর নাম স্যমন্তক চ্যাটার্জি (syamantak chatterjee)।
এবার সোমা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটানো যাক। অনেকেই ভাবেন, সোমা অভিনেতা দীপঙ্কর দে (Dipankar Dey)-র প্রথমা স্ত্রী যেহেতু সোমাও ‘দে’ পদবীটি ব্যবহার করেন। প্রকৃতপক্ষে এই পদবীটি সোমার পৈতৃক পদবী। দীপঙ্কর শুধুমাত্র তাঁর সহকর্মী। কিন্তু এছাড়া দীপঙ্কর দে-র সাথে সোমা দে-র কোনো সম্পর্ক নেই। সোমার স্বামীর নাম বিবেক চ্যাটার্জি (vivek chatterjee)। সোমা তাঁর স্বামীর পদবী অনস্ক্রিন ব্যবহার করেন না। তাছাড়া সোমার মেয়ে যাজ্ঞসেনী ছাড়া সোমার পরিবারের অপর কোনো সদস্য মিডিয়ার সামনে হাইলাইট হতে রাজি হননি। ফলে সোমার স্বামী বিবেক ও পুত্র স্যমন্তক-এর কথা অনেকেরই অজানা।