Aindrila Sharma: ঐন্দ্রিলার যাত্রাপথ শেষ নয়, এক নতুন অধ্যায়ের শুরু
বারবার লিখতে ইচ্ছা করছে না, “চলে গিয়েছেন ঐন্দ্রিলা”। অথচ তিনি তো শিল্পী ছিলেন। শিল্পের মধ্যেই শিল্পীর বসত। এখনই ‘জিয়ন কাঠি’ সার্চ করলেই ইউটিউবে ভেসে উঠবেন চলমান ঐন্দ্রিলা (Aindrila Sharma)। তারপরেও কি বিশ্বাস করতে হবে, ঐন্দ্রিলা নেই! মেয়েবেলা থেকেই শুরু হয়েছিল লড়াই। হঠাৎই একদিন ধরা পড়েছিল অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। ছোট্ট মেয়েটি কেমোথেরাপি, রেডিয়েশনের পথ পেরিয়ে ফিরে এসেছিল বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থের বাড়িতে। সেদিন থেকেই সে লড়াকু।
View this post on Instagram
আর পাঁচটা মেয়ের থেকে একটু আলাদাই ছিলেন ঐন্দ্রিলা। ক্যান্সার থেকে সুস্থ হয়ে উঠে পড়াশোনা করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন ছিল চোখে। ফলে শেষ অবধি ইঞ্জিনিয়ারের মোটা মাইনে নয়, অভিনয়ের জগতকে বেছে নিলেন ঐন্দ্রিলা। হয়তো এটাই ছিল কার্যকারণ। জীবনে আসবেন তাঁর সহযোদ্ধা, অর্জুনের প্রতিভূ এক পুরুষ। মহাদেবের মতো সহনশীল সেই পুরুষকে খুঁজে পেলেন ঐন্দ্রিলা, তাঁর প্রথম সিরিয়াল ‘ঝুমুর’-এর সেটে। পুরুষটির নাম সব্যসাচী (Sabyasachi Chowdhury)। তবে কোনোদিনই ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’-এ বিশ্বাসী ছিলেন না ঐন্দ্রিলা। একই বন্ধুদের গ্রুপে আড্ডা দিতেন তাঁরা। একসময় ফোন করতেন সব্যসাচী। নির্ভেজাল বন্ধুত্ব কখন পরিণত হল প্রেমে।
View this post on Instagram
‘জীবন জ্যোতি’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের সময় কেউ জানতেন না এই সম্পর্কের কথা। কিন্তু ‘জিয়ন কাঠি’-র সময় আবারও ঐন্দ্রিলার ফুসফুসে ধরা পড়ল টিউমার। পরীক্ষা করে জানা গেল ক্যান্সার দ্বিতীয়বার বাসা বাঁধছে শরীরে। কিছুক্ষণের জন্য কেঁদেছিলেন লড়াকু রাজকন্যা। কিন্তু হার মানা যে তাঁর ধাতে নেই। চিকিৎসার জন্য ঐন্দ্রিলাকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় মিরাকল সেদিন দেখেছিল পৃথিবী। স্টার জলসার হিট সিরিয়াল ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এর ‘বামদেব’ সব্যসাচী সব কিছু ছেড়ে ছুটে গেলেন দিল্লি। দাঁড়ালেন ঐন্দ্রিলার পাশে। শুরু হল ভালোবাসার পরীক্ষা। অস্ত্রোপচার হল। চলল কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন। ঐন্দ্রিলার পাশে প্রতিটি মুহূর্তে অতন্দ্র প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে সব্যসাচী। একদিকে সামলেছেন শুটিং, অপরদিকে ঐন্দ্রিলাকে। একবারের জন্য ভেঙে পড়তে দেননি।
View this post on Instagram
কেমোথেরাপির কারণে ঐন্দ্রিলার মাথায় অবশিষ্ট ছিল না চুল। পরোয়া করেননি সব্যসাচী। হাঁটার ক্ষমতা ছিল না ঐন্দ্রিলার। নিজে জড়িয়ে ধরে মিউজিক-এর সাথে নাচ করতে সাহায্য করেছিলেন সব্যসাচী। ভুলতে দেননি ঐন্দ্রিলাকে তাঁর অসাধারণ নৃত্যশৈলীর কথা। মজা করে ঐন্দ্রিলার নাম দিয়েছিলেন ‘বিগ বস’। এই রিয়েলিটি শো প্রিয় ছিল ঐন্দ্রিলার। একবার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে সব্যসাচী মজা করে লিখেছিলেন, বিগ বস শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই ঐন্দ্রিলার মন খারাপ। এই শোয়ের সম্প্রচারের সময় কথা বললেই রেগে যেতেন ঐন্দ্রিলা। ছায়াসঙ্গী সব্যসাচীর জন্য মোবাইল ফোনের কভার দরদাম করে আড়াইশো টাকা থেকে মাত্র পঁচাত্তর টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন ঐন্দ্রিলা। হতবাক সব্যসাচী। তাঁর তো হাত-পা পেটের ভিতর ঢুকে যাওয়ার যোগাড়। পরে মজা করে ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন তিনি। তাঁর অসাধারণ লেখনীর কদর করতেন ঐন্দ্রিলা। মূলতঃ তাঁর উৎসাহেই ‘ব্যাতাইপুকুরের বেত্তান্ত’ ও ‘দলছুটের কলম’ বই দুটির মাধ্যমে কলকাতা বইমেলায় লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন সব্যসাচী।
View this post on Instagram
গত ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয়বার ক্যান্সারমুক্ত হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। সব্যসাচী কিন্তু খুব ভয় পেতেন ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে। বারবার মনে হত, হারিয়ে ফেলবেন। 2021 সালে শ্রীভূমি স্পোর্টিং-এর বানানো ‘বুর্জ খলিফা’ দেখতে চেয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। সব্যসাচী প্রথমে রাজি হননি। পরে অবশ্য ভয়ে ভয়ে আগলেই নিয়ে গিয়েছিলেন ‘বিগ বস’-কে। কিন্তু ভিড় দেখে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন তাঁরা। পথে ডাকের সাজের মা দুর্গা দেখে খুশি হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। হ্যাঁ, খুব অল্পেই খুশি থাকতেন তিনি। কিন্তু 2 রা নভেম্বর সত্যি হয়ে গেল সব্যসাচীর ভয়টাই।
View this post on Instagram
প্রকৃতপক্ষে, অগোচরে শরীরেই রয়ে গিয়েছিল মারণরোগের বীজ। ইউয়িং সারকোমা-য় আক্রান্ত ছিলেন ঐন্দ্রিলা। এই কারণেই বারবার তাঁর শরীরে ক্যান্সার বাসা বাঁধত। 20 ডিসেম্বর ঐন্দ্রিলার প্রয়াণের পর বিশিষ্ট চিকিৎসক ডঃ অরিন্দম বিশ্বাস (Arindam Biswas) জানিয়েছেন, ইউয়িং সারকোমার কারণেই ঐন্দ্রিলার ডান হাতের উইং-এ রয়ে গিয়েছিল ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। 2 রা নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকের ফলে ঐন্দ্রিলার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। ডঃ নিলয় বিশ্বাস (Niloy Biswas)দ্রুত অপারেশন করে মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত বার করে দিলেও কোমায় চলে গিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা। এই সময় বায়োপসি করে জানা যায়, ইউয়িং সারকোমার কারণে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্রেন মেটাস্টিসিস। ডান হাতের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থেকে মস্তিষ্কের কোষেও হয়েছিল ক্যান্সারের কোষের সংক্রমণ। এর ফলেই হয় ব্রেন স্ট্রোক।
View this post on Instagram
সব্যসাচী শনিবার রাতেই পেয়েছিলেন সংকেত। ডিলিট করে দিয়েছিলেন গত কয়েকদিন ধরে ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে তাঁর সব পোস্ট। বর্তমানে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিয়েছেন তিনি। ঐন্দ্রিলা চলে গিয়েছেন তারার দেশে। সব্যসাচী নাকি সর্বহারা? এই কথা কে বলে? ভালোবাসা যে তাঁর হৃদয়ে। শোনা যাচ্ছে, ঐন্দ্রিলাকে নিয়ে আর কোনোদিন কিছু লিখবেন না তিনি।
View this post on Instagram
কিন্তু সব্যসাচী তো শুধু প্রেমিক নন। তিনি তো সেই আদিযোগী যাঁর জন্ম হয়েছিল ঐন্দ্রিলার ভালোবাসায়। একটু সময় চাই, ফিরবেন সব্যসাচী, লিখবেন আবারও। আগামীর দিকে এগিয়ে যাবেন সব্যসাচী। তাঁর মাধ্যমেই এগিয়ে যাবেন ঐন্দ্রিলা। ঐন্দ্রিলার জন্য কলম ধরতেই বারবার তাঁর কাহিনীতে মিশে যান সব্যসাচী। আসলে একে অপরের পরিপূরক যে। পারতে হবে সব্যসাচী। লিখতেই হবে ঐন্দ্রিলার কাহিনী, আপনার কাহিনী। ঐন্দ্রিলা আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তিনি যে বিশ্বাস করতেন,”কিছু ভালোবাসা এমনও হয়”। আপনার সৃষ্টির মধ্য দিয়েই জিতে যাবেন ঐন্দ্রিলা। ভালোবাসার এক নতুন পরিচয়, ঐন্দ্রিলা-সব্যসাচী। পাশে থাকব আমরা, কথা দিলাম।
View this post on Instagram