অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Aniban Bhattacharya) কোনো স্টারকিড নন। তিনি যথেষ্ট লড়াই করে টলিউডে পায়ের তলার জমি শক্ত করেছেন। এমনকি পাড়ি জমিয়েছেন বলিউডেও। কিন্তু এবার অভিযোগ তীরে বিদ্ধ হলেন অনির্বাণ। ইদানিং তারকারা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেলেও তাঁরা নাকি এতটাই ব্যস্ত, নিজেরা নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করতে পারেন না। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার রাখতে হয় তাঁদের। টলিউড আবার আর এক ধাপ এগিয়ে। এখানে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য কাজ হোক না হোক, প্রেক্ষাগৃহ ভরুক না ভরুক, চাকচিক্যের অভাব নেই। টলিউডের প্রযোজনা সংস্থা এসভিএফ-এর তরফে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের মাধ্যমে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করা হয়। কিন্তু এবার অনির্বাণের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার শ্রেয়া মিত্র (Shreya Mitra), সাহানা রায়চৌধুরী (Sahana Roychowdhury), অবন্তী ভট্টাচার্য (Avanti Bhattacharya) করলেন অভিযোগ।
View this post on Instagram
তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে এতদিন কাজ করিয়ে নিয়েছেন অনির্বাণ। এমনকি তাঁদের দেওয়া হয়নি ন্যূনতম সম্মান। এমনকি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের হুমকি দিয়েছেন অনির্বাণের ম্যানেজার এণাক্ষী (Enakshi)। এর মধ্যেই হ্যাক করা হয়েছে অনির্বাণের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। শ্রেয়া জানিয়েছেন, তিনি অনির্বাণের ভক্ত। 2017 সালে পিএসএস-এ চাকরি করাকালীন প্রফেশনাল হিসাবে অনির্বাণের ফ্যানপেজের অ্যাডমিনকে জিজ্ঞাসা করেন, ফ্যানপেজের লেখাগুলি তাঁর কিনা! কিন্তু ওই ব্যক্তি জানান, এটি অনির্বাণের ফ্যানপেজ। তবে তা অনির্বাণের মতামত নিয়েই চলে। এরপর ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই অনির্বাণের সাথে যোগাযোগ হয় শ্রেয়ার। তিনি শ্রেয়াকে ওই পেজ চালানোর অনুমতি দেন।
View this post on Instagram
কিন্তু সেই সময় এসভিএফ-এর কোনো চিন্তা ছিল না অনির্বাণের ফ্যানপেজ নিয়ে। অনির্বাণের অনুরোধে শ্রেয়া পোস্ট করতেন। এমনকি অনির্বাণের সাথে তাঁর বন্ধুর মতো সম্পর্ক ছিল। তাঁর বাড়ি গিয়ে নৈশভোজও সেরেছেন শ্রেয়া। কিন্তু অনির্বাণ তাঁর কাজকে কোনোদিন কোথাও স্বীকৃতি দেননি। ফটোশুট, নাটকের প্রোমোশন, ভিডিও এডিটিং কোনো কিছুর জন্য কখনও অনির্বাণ এক পয়সাও পারিশ্রমিক দেননি শ্রেয়াকে। 2018 সাল থেকে পুজো উদ্বোধন ও অন্যান্য ইভেন্টের প্রোমোশন করলে শ্রেয়াকে অনির্বাণ বলতেন, তিনি আশি হাজার টাকার কাজ তুলে দিয়েছেন। ফলে দশ-পনের হাজার টাকা শ্রেয়া যেন নিজের জন্য রাখেন। কিন্তু কোনোদিন অনির্বাণ তাঁকে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসাবে কোনো মেল পাঠাতেন না।
এরপর এসভিএফ-এর তরফে শুরু হয় সমস্যা। তারা কোনোদিন অনির্বাণের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসাবে শ্রেয়াকে মিটিং-য়ে ডাকেনি, ফিল্মের প্রিমিয়ারেও ডাক পাননি তিনি। এমনকি অনির্বাণও কোনোদিন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসাবে শ্রেয়াকে স্বীকৃতি দেননি। 2020 সাল থেকে অনির্বাণের নতুন ট্যালেন্ট ম্যানেজার নিযুক্ত হয়। প্যান্ডেমিকের পর একটি কাজের সময় অনির্বাণ শ্রেয়ার প্রশংসা করে বলেছিলেন একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে। বর্তমানে ফেসবুকে তাঁর দশ লক্ষ ফলোয়ার। কিন্তু শ্রেয়ার সাথে কোনো চুক্তি ছিল না, ছিল না কোনো অ্যাডমিন রাইটস। অনির্বাণ শ্রেয়ার প্রশংসা করে বলতেন, তিনি পেজটি এত ভালো স্থানে নিয়ে গিয়েছেন, ইনভেস্টররাও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। ফলে শ্রেয়ার মিনিমাম প্রাপ্য থাকে।
View this post on Instagram
কিন্তু এরপর শ্রেয়ার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসভিএফ ও অনির্বাণের চাপের মুখে পড়ে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও পোস্ট করতে হচ্ছিল শ্রেয়াকে। 2020 সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি বুটিকের শুটের সময় থেকে শুরু হয় সমস্যার সূত্রপাত। এসভিএফ-এর তরফে ফোন আসে এই ধরনের পোস্ট করা যাবে না। কিন্তু শ্রেয়া বলেন, এটি ডিজিটাল ক্যাম্পেন। অনির্বাণকে ঘটনাটি জানালে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, তিনি কথা বলছেন। কারণ তিনি নাকি জানতেন না, তিনি এসভিএফ-এর সাথে কি চুক্তি সাইন করেছেন! শ্রেয়া তো বটেই, অন্য কেউই বিশ্বাস করতে পারবেন না অনির্বাণের এই কথা। কারণ অনির্বাণ নিরক্ষর নন। এরপর 2021 সালে অনির্বাণ শ্রেয়াকে বলেন, একসাথে মিলেমিশে কাজ করতে। কিন্তু তিনি নিজেই গত বছরের শেষে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
শ্রেয়া বাধ্য হয়ে বলেন, সম্মান না দিলেও অনির্বাণ যেন তাঁর প্রাপ্য টাকা দিয়ে দেন। কোনো কথা না বলে অনির্বাণ শ্রেয়াকে বেশ কিছু টাকা ট্রান্সফার করে দেন। কিন্তু শ্রেয়া বলেন, এইভাবে না দিয়ে সঠিক পদ্ধতির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে। এরপর অনির্বাণ শ্রেয়ার সাথে কথা বল্ বন্ধ করে দেন ও তাঁকে ব্লক করে দেন। পয়লা অগস্ট অনির্বাণের ট্যালেন্ট ম্যানেজার এণাক্ষী শ্রেয়া ও তাঁর সহকর্মী অবন্তী এবং সাহানাকে বলেন, অনির্বাণের পেজে পোস্ট না করলে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেবেন। এই কথা শুনে অত্যন্ত ভয় পেয়ে যান শ্রেয়ারা। এরপর অনির্বাণকে মেল করে অসম্মানিত হওয়ার কথা জানালেও তিনি কোনো রিপ্লাই দেননি। এর মধ্যেই দেখা যায় অনির্বাণের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গেছে এবং সেখানে এসভিএফ-এর তরফে নতুন ফিল্মের পোস্ট হচ্ছে। এরপর বারবার শ্রেয়া অনির্বাণের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও উত্তর আসেনি। উপরন্তু প্রাণসংশয়ের ভয় পাচ্ছেন শ্রেয়ারা।
অনির্বাণ যদি সত্যিই নির্দোষ হন তাহলে তিনি শ্রেয়ার অভিযোগের উত্তর দিলেন না কেন? কোনো চুক্তি না পড়ে সাইন করেন না অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ফলে অনির্বাণ চুক্তি সম্পর্কে জানতেন না, তা হতে পারে না। অনির্বাণের সাথে অথবা এসভিএফ-এর সাথে শ্রেয়ার যদি লিখিত চুক্তি না থেকে থাকে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন অনির্বাণের ট্যালেন্ট ম্যানেজার এণাক্ষী? যদি তিনি অযথা হুমকি দেন, তাহলে অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পরিশেষে, এতদিন ছিল পোস্টার ছেঁড়া, এবার হল ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট হ্যাক। এসভিএফ-এর মুকুটে তো একের পর এক ক্রাইমের পালক জুড়ছে। তাহলে আশা করাই যায়, খুব শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)-র মতো তাঁরাও জেলযাত্রা করবেন!
View this post on Instagram